শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মুসলিম স্থাপত্যের প্রতীক ‘চিনি মসজিদ’

মুসলিম স্থাপত্যের প্রতীক ‘চিনি মসজিদ’

সংগৃহীত

নীলফামারীর সৈয়দপুর দেশের প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে একটি। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এই শহরটি অনেক আগে থেকে প্রসিদ্ধ হলেও অনেকের কাছে সৈয়দপুর ‘রেলের শহর’ বলে বেশি খ্যাত। এই শহরের প্রাচীন সৌন্দর্যের স্থাপত্য নিদর্শন হচ্ছে সৈয়দপুরের ‘চিনি মসজিদ’। 

তবে দর্শনার্থীরা মুগ্ধকর পরিবেশ ও অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে প্রাণ জুড়াতে ছুটে আসেন সৈয়দপুরের গোলারহাটে অবস্থিত এই চিনি মসজিদটি দেখতে।

চিনি মসজিদ। নাম শুনে মনে হতে পারে মসজিদটি চীনাদের তৈরি কিংবা এর নির্মাণের পেছনে চীনাদের কোনো অবদান আছে। আসলে বিষয়টি তেমন নয়। মূলত পুরো মসজিদে রঙিন উজ্জ্বল চীনা মাটির পাথরের টুকরো দ্বারা চিনির দানার মতো নিখুঁত কাজ করা হয়েছে। এ কারণে মুসলিম স্থাপত্যের এই মসজিদটি ‘চিনি মসজিদ’ নামে পরিচিত।

জানা গেছে, ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে যে কয়টি মসজিদ রয়েছে চিনি মসজিদ তার মধ্যে অন্যতম। শৈল্পিক কারুকাজ ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য হিসেবে চিনি মসজিদে রয়েছে বিশেষ খ্যাতি। নীলফামারী জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগে এটি অবস্থিত। প্রতি শুক্রবার দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জুমার নামাজ আদায় করতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদে আসেন।

ঐতিহাসিক এই মসজিদ নির্মাণের প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। ১৮৬৩ সালে হাজী বাকের আলী ও হাজী মুকু নামে দুই ব্যক্তি সৈয়দপুরের ইসলামবাগ এলাকায় ছন ও বাঁশ দিয়ে প্রথম এই মসজিদ নির্মাণ করেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় এটি টিনে রূপান্তরিত হয়। এরপর তারা একটি তহবিল গঠন করেন। এরপর শুরু হয় মসজিদের নির্মাণকাজ।

জনশ্রুতি রয়েছে, শঙ্কু নামে জনৈক হিন্দু মিস্ত্রি দৈনিক ১০ আনা মজুরিতে নির্মাণকাজ শুরু করেন। স্থানীয় এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করতে থাকেন। এতে ব্যয় হয় ৯ হাজার ৯৯৯ রুপি ১০ আনা। ঐতিহাসিক এই মসজিদের স্থপতি হিসেবে মো. মকতুল এবং নবী বক্স নামে দুইজনের নামও শোনা গেছে।

মসজিদের সৌন্দর্য বাড়াতে দেয়ালে চিনামাটির থালার ও কাঁচের ভগ্নাংশ বসানো হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘চিনি করা’ বা ‘চিনি দানার কাজ করা’। ধারণা করা হয়, এখান থেকেই এর নামকরণ হয় চিনি মসজিদ। আবার কেউ কেউ বলেন, পুরো মসজিদে চীনা মাটির কাজ বলে একে চীনা মসজিদও বলা হতো। কালক্রমে চীনা মসজিদ থেকে এর নাম চিনি মসজিদ হয়ে যায়।

ধীরে ধীরে মসজিদের পরিধি বাড়তে থাকে। ১৯২০ সালে হাজী হাফিজ আবদুল করিমের উদ্যোগে ৩৯ ফুট বাই ৪০ ফুট আয়তনবিশিষ্ট মসজিদটির প্রথম অংশ পাকা করা হয়। হাজী আবদুল করিম নিজেই মসজিদটির নকশা এঁকেছিলেন। পুনরায় ১৯৬৫ সালে মসজিদের দক্ষিণ দিকে ২৫ বাই ৪০ ফুট আয়তনবিশিষ্ট দ্বিতীয় অংশ পাকা করা হয়। সম্প্রতি এর আয়তন আরো বাড়ানো হয়েছে। 

১৯৬৫ সালে বগুড়ার একটি গ্লাস ফ্যাক্টরি চিনি মসজিদের জন্য প্রায় ২৫ টনের মতো চীনা মাটির পাথর দান করে। এগুলো দিয়ে মোড়ানো হয় মসজিদের মিনারসহ বড় তিনটি গম্বুজ। এর মূল অংশের বর্ণ অনেকটা লালচে হলেও একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়, পরবর্তী সময়ে তৈরি করা অংশ অনেকটা সাদা বর্ণের। এছাড়া সেই সময় কলকাতা থেকেও ২৪৩ খানা শংকর মর্মর পাথর এনে লাগানো হয় এই মসজিদে।

মসজিদের মুয়াজ্জিন আরিফ হোসেন বলেন, আমাদের ইসলামবাগ চিনি মসজিদের আনুমানিক বয়স হয়ে গেছে ১৬৩ বছর। আমাদের মসজিদের অনেক সংস্কার প্রয়োজন। চিনি মসজিদের যে ৪৮টি মিনার ও ৪টি গম্বুজ রয়েছে এগুলো অনেক বেশি পুরাতন হয়ে যাওয়ায় এখন ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে অনেক জায়গায়। এগুলো সংস্কারের জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন।  

দিনাজপুর  থেকে আসা শহিদুল  ইসলাম নামে এক দর্শনার্থী বলেন, আমি অনলাইনে এই মসজিদটির ভিডিও দেখেছি। এরপর মসজিদটি দেখার জন্য সিদ্ধান্ত নিই। আমি আমার এক বন্ধুসহ এখানে এসেছি। এসে দেখলাম অসাধারণ সব কারুকাজ। অনেক সুন্দর নকশাগুলো, সব মিলেই অসাধারণ। কিন্তু মসজিদের সামনে বা পেছনে কোনো জায়গা নেই। বেশি মুসল্লি হলে নাকি রাস্তায় নামাজ আদায় করতে হয়। এ বিষয়টি শুনে খুব খারাপ লাগলো।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, এই মসজিদটি তিন আমলে তৈরি করা হয়েছে। মাঝখানের অংশ যেটা এটা ব্রিটিশ আমলের। বামদিকের যে অংশটি রয়েছে সেটি পাকিস্থান আমলের। আর ডানদিকের অংশটি রয়েছে যা দেখলে একদম নতুন বুঝা যায় সেটি হচ্ছে আমাদের আমলের।  

মসজিদের দেয়ালে অঙ্কিত ফুলদানি, ফুলের ঝাড়, গোলাপ ফুল, একটি বৃত্তে একটি ফুল, চাঁদতারাসহ নানা চিত্র রয়েছে। এতে রয়েছে ২৭টি বড় মিনার, ৩২টি ছোট মিনার ও তিনটি বড় গম্বুজ। মসজিদে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ শতাধিক লোক নামাজ আদায় করতে পারেন। এই মসজিদে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণে দুটি ফটক। মসজিদের পুরো অবয়ব রঙিন চকচকে পাথরে মোড়ানো। আর বারান্দা বাঁধানো হয়েছে সাদা মোজাইকে। 

মসজিদের ইমাম সেলিম জানান, ৭ বছর ধরে এ মসজিদে নামাজ পড়াচ্ছি। এখানে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পড়তে পারেন। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটক আসেন। মসজিদের দোতলায় একটি ভবনসহ পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি কাজগুলো সংস্কার করলে মসজিদটি আরো দৃষ্টিনন্দন হবে।

জেলা প্রশাসক পঙ্কজ কুমার ঘোষ বলেন, সৈয়দপুরে ঐতিহাসিক নান্দনিক মসজিদটি আমাদের প্রাচীন নিদর্শন। যা আমাদের নজরে আছে। মসজিদটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দ আসলে তা দেওয়া হবে।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর