শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সজিনা চাষে ভাগ্য খুললো কৃষকদের

সজিনা চাষে ভাগ্য খুললো কৃষকদের

জয়পুরহাটের কালাইয়ে পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণে ভরপুর সজিনা বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে। সজিনার গাছগুলোতে এখন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে আবার কোনো গাছে সজিনা ঝুলছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অনাবাদি ও পতিত জমিতে পুষ্ঠিগুণে ভরপুর ও আশঁজাতীয় সবজি সজিনার ফুলের মৌ মৌ গন্ধে ভরে গেছে।

এর মধ্যে কোন কোন সজিনার গাছে গাছে ছোট ছোট সজিনা বের হচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের বাড়ির পাশের অনাবাদি ও পতিত জমিতে সজিনা চাষ করে পুষ্টির পাশাপাশি আর্থিক ভাবেও লাভবান হচ্ছেন উপজেলার কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবার সজিনার বাম্পার ফলন হবে বলে আশ করছেন এলাকার কৃষকেরা ও কৃষি বিভাগ। চিকিৎসকদের মতে, সজিনা বহুবিধ রোগের প্রতিশেধক হিসেবে কাজ করে থাকে। খাদ্যমান ছাড়াও সজিনার ঔষধি গুণ অনেক।

সরেজমিনে ও উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর ও আহম্মেদাবাদ ওই ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ২২ হেক্টর অকৃষি বা পতিত জমিতে বারোমাসি, সিজনাল বা দেশী জাতের সজিনার চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে বারোমাসি সজিনার চাষ হচ্ছে ৬ হেক্টর এবং সিজনাল বা দেশী জাতের সজিনার চাষ হচ্ছে ১৬ হেক্টর জমিতে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে, বাসাবাড়ির আশে পাশে, পুকুর পাড়ে, ছাদে, স্কুল-কলেজ মাঠে এবং রাস্তার দু’পাশে অকৃষি বা পতিত জমিতে পুষ্ঠিগুণে ভরপুর ও আশঁজাতীয় সবজি সজিনার সারি সারি গাছগুলোতে এখন ফুলের শোভা পাচ্ছে। আর ওই সব ফুলের মৌ মৌ গন্ধে এলাকায় ভরে গেছে। উপজেলাতে প্রতিবছরে সজিনা চাষ বেড়েই চলেছে। এখানকার সজিনা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। তাছাড়া সজিনা বিক্রি করে অনেকেই অর্থিক ভাবে সচ্ছল হয়েছেন। সজিনা চাষ ইতোমধ্যেই অর্থকরি ফসল হিসেবে সকলের কাছে বিবেচিত হয়েছে। তবে, প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে এবার সজিনা বাম্পার ফলন হবে বলে আশ করছেন এলাকার সজিনা চাষিরা।

উপজেলার মাত্রাই ইউনয়নে বিয়ালা গ্রামের সজিনা চাষি হেলাল উদ্দিন বলেন, বাড়ীর সমনে রাস্তার ধারে প্রায় ১২টি সজিনার গাছ আছে। গতবছরে ওইসব সজিনার গাছ থেকে প্রায় ১৩ মণ সজিনা পেয়েছি। আশা করছি, এবারও সজিনার বাম্পার ফলন পাব।

একই ইউনিয়রে বলিগ্রামের সুভাষ দত্ত বলেন, আমার ৮ শতক পতিত জমি আছে সেখানে তেমন কোন ফসল ফলেনা। সেখানে আমি বাণিজ্যিক ভাবে বারোমাসি ও সিজনাল বা দেশী জাতের সজিনা চাষ করেছি। গত বছর ঐসব সজিনাগাছ থেকে অনেক টাকার সজিনা বিক্রি করেছি। বর্তমান বাজারে সজিনার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পাইকারীরা আমাদের কাছ থেকে প্রতি কেজি সজিনা কিনছেন ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আর তার বাজারে প্রতি কেজি সজিনা বিক্রি করছেন ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। সজিনা বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছি।

কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো: ফয়সল নাহিদ পবিত্র বলেন, সজিনা পুষ্ঠিগুণে ভরপুর একটি সবজি। এটি শরীরের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পুষ্টিবর্ধক হিসেবে সজিনা অত্যন্ত উপযোগী একটি খাবার। এটি শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের মত কঠিন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। সজিনার পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। এটি শাক হিসেবে ব্যবহৃত পাতা ভিটামিন এ-এর এক বিশাল উৎস।

কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, সজিনা একটি পরিবেশবান্ধব সবজি। এটি অনাবাদি ও পতিত জমিতে চাষ করা যায়। সজিনা চাষে পানির খরচ কম লাগে। এটি রোগ-বালাই নেই বললেই চলে এবং অন্যান্য খরচও তেমন নেই। সজিনায় সব ধরনের খনিজ পদার্থ রয়েছে। সজিনার পাতা, ফুল, ফল, বাকল ও শিকড় সবকিছুই ব্যবহার করা যায়। তবে, একটু পরিচর্যা করলেই অনেক ভালো ফলন পাওয়া যাবে। এবার কালাই উপজেলার পতিত ২২ হেক্টর জমিতে সজিনার চাষ হচ্ছে।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ: