নানা হিসাব-নিকাশের জেরে ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বিএনপিতে অনৈক্য বেড়েই চলেছে। এমনকি দিনের পর দিন ঐক্যফ্রন্ট প্রশ্নে বিএনপিতে মতবিরোধ চরম আকার ধারণ করছে।
জানা গেছে, মতবিরোধ যে মাত্রায় রূপ নিয়েছে তাতে বিএনপিতে এখন একটা ক্ষুদ্র অংশই ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য রাখার পক্ষে। অন্য দিকে একটি বৃহত্তর অংশ মনে করছে, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে এই ঐক্যে বিএনপির ক্ষতি হচ্ছে এবং এতে বিএনপির আদর্শ ও চিন্তা চেতনা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এমনকি এর প্রভাবে বিএনপি শুধু সাংগঠনিক ভাবে নয়, আদর্শিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সূত্র বলছে, যারা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জোট রাখার পক্ষে তারা মূলত ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যেই এমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন বলে দলের মধ্যে চাপা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। যারা এরই মধ্যে বিএনপিতে বিতর্কিত। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ খালেদাপন্থী নেতা ও সমর্থকরা।
জানা গেছে, বিএনপি গত ৩১ মার্চ যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠান পণ্ড করার জন্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নির্দেশেই ছাত্রদল এবং যুবদলের কর্মীদের খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বক্তব্য দিতে ড. কামালের উদ্দেশ্যে স্লোগান দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। পরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ নিয়ে রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে দুজনার মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় বলে জানা যায়। রিজভীর এমন আচরণ নিয়ে ড. কামালও যথেষ্ট ক্ষুব্ধ।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ঐক্যফ্রন্ট দিয়ে আর যাই হোক আন্দোলন হবে না। ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে লাভবান হয়েছেন দুই জন। তারা হলেন, সুলতান মনসুর এবং মোকাব্বির খান। যাদের ভোটে জামানত থাকতো না, তারা ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে এমপি হয়ে গেছেন। ঐক্যফ্রন্ট করার সিদ্ধান্ত ছিলো বিএনপির জন্য বড় ভুল। ঐক্যফ্রন্ট বহাল রাখলে এরকম আরও অনেক ভুলে পড়তে হবে বিএনপিকে। সুতরাং মহাসচিব যেভাবেই ভাবুক না কেন, দলের একটি বড় অংশ চায় ঐক্যফ্রন্টের এই জাল থেকে বিএনপি বেরিয়ে আসুক। এটা সর্বস্তরের চাওয়া।
গয়েশ্বর চন্দ্রের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিএনপির আরেক সিনিয়র নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে এই ঐক্য বিএনপির আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই ঐক্যে বিএনপির কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং এ পর্যন্ত বিএনপি জাতীয় ঐক্যের কারণে যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তা শুধরে ওঠার মতো নয়। ফলে আমি মনে করি না, ঐক্যফ্রন্ট বিএনপির জন্য কোন ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে ।
জানা গেছে, ঐক্যফ্রন্ট বিরোধী বিএনপির সিনিয়র নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে সভা বা সমাবেশ ডাকা হলে সেখানে বিএনপির কেউ যোগ দেবেন না। এই পরিস্থিতিতে ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ কী হবে তা সময়ই বলে দেবে।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ