শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কূটনৈতিক সম্পর্কের নবযাত্রা

কূটনৈতিক সম্পর্কের নবযাত্রা

সংগৃহীত

এই এপ্রিলকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের নবযাত্রার মাস বলা যায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চলতি এপ্রিল মাসেই বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্বারক ও চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। এর মধ্যে ব্রাজিল, কাতার, মরিশাস, থাইল্যান্ডসহ আরো কয়েকটি রাষ্ট্র রয়েছে। এসব দেশের সঙ্গে ১৬টির অধিক সমঝোতা স্বারক ও চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। অন্য দেশের সঙ্গেও নানা বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করা ও নতুন নতুন চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার ৮১টি দূতাবাসের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে।

ঢাকা-ব্রাজিল সামগ্রিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর:
চলতি মাসের ৭ এপ্রিল রোববার বিকেলে রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দু’দিনের বাংলাদেশ সফরে আসেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েইরা। ৮ এপ্রিল ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের সামগ্রিক সহযোগিতা বিষয়ে ‘টেকনিক্যাল কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট’ সাক্ষর করেন দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এই প্রথম ব্রাজিলের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন। আমাদের মধ্যে খুব সফল আলোচনা হয়েছে। ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত তুলা দিয়ে তৈরি পোশাক ব্রাজিলে রফতানির ক্ষেত্রে কর মওকুফ ও অন্য পোষাক রফতানিতে কর হ্রাসের অনুরোধ জানিয়েছি। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে বাংলাদেশে স্পেশাল ইকোনমিক জোনে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনসহ নানামুখী বিনিয়োগে এবং আইটি পার্কগুলোতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ব্রাজিলিয়ানদের বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বৈঠকে মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর এমনকি পশ্চিমা এইড-ওয়ার্কারদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর হামলা এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে ইসরাইলের তোয়াক্কা না করার সংকট নিয়েও কথা হয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে আগামী জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রাজিল সফরের সম্ভাবনা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একযোগে কাজ করা, এন্টার্কটিকা কাউন্সিলে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের কাজ ও গবেষণার সুযোগদান এবং ব্রিকসে অন্তর্ভুক্তির জন্য বাংলাদেশকে ব্রাজিলের সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। 

কাতারের সঙ্গে ৫ চুক্তি ও ৫ সমঝোতা স্মারক সই:
গত ২২ এপ্রিল তারিখে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসেন। এ সময় দুই দেশের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। চুক্তিগুলো হলো- বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহার এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ; বাংলাদেশ সরকার এবং কাতার রাষ্ট্রের মধ্যে আইনি ক্ষেত্রে সহযোগিতা; কাতার এবং বাংলাদেশের মধ্যে সমুদ্র পরিবহন; বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা; বাংলাদেশ-কাতার যৌথ ব্যবসায়িক পরিষদ প্রতিষ্ঠা।

পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) হলো- জনশক্তি কর্মসংস্থান (শ্রম); বন্দর (এমডাব্লিউএএনআই কাতার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ); বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা; যুব ও ক্রীড়াক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা।

থাইল্যান্ড-বাংলাদেশ পাঁচ চুক্তি সই:
গত ২৬ এপ্রিল গার্ড অব অনার প্রদানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিন। এরপর থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। তাদের উপস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে পাঁচটি নথি সই হয়। এর মধ্যে একটি হলো ২০২৪ সালের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) আলোচনা শুরুর জন্য ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ বা অভিপ্রায় পত্র।

এছাড়া সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি, জ্বালানি সহযোগিতা, শুল্ক বিষয়ে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তা এবং পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক রয়েছে এর মধ্যে। 

বাংলাদেশে গ্রিন এনার্জিতে বিনিয়োগ করতে চায় অস্ট্রিয়া:
বাংলাদেশে গ্রিন এনার্জি বিশেষ করে বায়ু এবং বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে দক্ষকর্মী নেয়া ও ঢাকায় একটি বাণিজ্য অফিস খোলার প্রস্তাব দিয়েছে অস্ট্রিয়া। স্থানীয় সময় সোমবার সকালে দেশটির রাজধানী ভিয়েনার হফবার্গ প্রাসাদে ‘হিউম্যানিটি এট দ্য ক্রসরোডস : অটোনোমাস উইপনস সিস্টেমস অ্যান্ড দ্য চ্যালেঞ্জ অব রেগুলেশন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে এ প্রস্তাব দেন। বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অস্ট্রিয়ার বিনিয়োগ বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে এক্ষেত্রে বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের যাতায়াত বৃদ্ধি এবং দ্বৈত কর এড়ানোর প্রস্তাবিত চুক্তি দ্রুত স্বাক্ষরের ওপর জোর দেন তারা।

এসব বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন সরকারের গুরুত্বের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হবে অর্থনৈতিক কূটনীতি এবং ঢাকা পূর্ব ও পশ্চিম উভয় গোলার্ধের দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাবে। অর্থনৈতিক কূটনীতির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশেষ করে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্প্রসারিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক অন্বেষণ করতে আগ্রহী। 

কূটনীতির এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে সামনে অনেক সুখবর পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা বিশিষ্টজনের।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

সর্বশেষ: