শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

জেনে নিন খাবার স্যালাইনের সঠিক ব্যবহার

জেনে নিন খাবার স্যালাইনের সঠিক ব্যবহার

সংগৃহীত

ডায়রিয়া, কলেরা, বমি, আমাশয়, পাতলা পায়খানা, অতিরিক্ত ঘাম বা অন্য যে কোনো কারণঘটিত পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে খাবার স্যালাইন বা ওরাল স্যালাইন একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। খাবার স্যালাইন হলো শরীরের পানিস্বল্পতা ও লবণের ঘাটতি পূরণ করার জন্য পানির সাথে বিভিন্ন লবণ ও গ্লুকোজের মুখে গ্রহণযোগ্য দ্রবণ। বাজারে মুখে খাবার এই স্যালাইন ওরস্যালাইন-এন, ওআরএস, ওআরএস-এ, নিওস্যালাইন, স্যালাইন-আর, ওরালাইট ইত্যাদি বিভিন্ন নামে প্রচলিত।

মুখে খাবার স্যালাইনের আবিষ্কারক ডা. রফিকুল ইসলাম। তিনি আইসিডিডিআর,বিতে চাকরিকালীন খাবার স্যালাইনের মতো বেশকিছু ওষুধ আবিষ্কার করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয়গ্রহণকারী প্রচুর বাংলাদেশি শরণার্থী কলেরা ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হন। সে সময়ে আক্রান্ত রোগীদের বাঁচাতে খাবার স্যালাইনের প্রয়োগ করেন ডা. রফিকুল ইসলাম। এতে যথেষ্ট ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ সরকার তাঁর খাবার স্যালাইনের এই আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দেয়। এরপর ১৯৮০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার খাবার স্যালাইনকে জীবনরক্ষাকারী হিসেবে অনুমোদন একে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি প্রদান করে। খাবার স্যালাইনের আবিষ্কারকে ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার’ বলে উল্লেখ করেছিল ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যান্সেট’। পরে ব্র্যাক এই মুখে খাবার স্যালাইনকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

বিজ্ঞাপন

বাজারে প্রচলিত খাবার স্যালাইনের প্যাকেটে বা স্যাশেতে স্যালাইন বানানোর জন্য ১০.২৫ গ্রাম প্রয়োজনীয় পাউডার বা গুঁড়া থাকে। এর উপাদান হিসেবে থাকে ১.৩০ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাবার লবণ, ০.৭৫ গ্রাম পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ১.৪৫ গ্রাম ট্রাই-সোডিয়াম সাইট্রেট ডাইহাইড্রেট এবং ৬.৭৫ গ্রাম এনহাইড্রাস গ্লুকোজ। খাবার স্যালাইনের এই স্যাশে আলো ও আর্দ্রতা থেকে দূরে ৩০° সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে সংরক্ষণ করতে হয়। তবে জরুরি অবস্থায় বাজারে প্রচলিত প্যাকেটজাত খাবার স্যালাইন হাতের কাছে না পেলে সে ক্ষেত্রে বাসা-বাড়িতে ঘরোয়া পদ্ধতিতেও খাবার স্যালাইন তৈরি করা যায়।

খাবার স্যালাইনের দ্রবণ বানানোর শুরুতে অবশ্যই দুই হাত, স্যালাইন বানানোর পাত্র এবং চামচ ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। প্রথমে স্যালাইন বানানোর পাত্রে ২ পোয়া বা আধা লিটার বিশুদ্ধ ফোটানো পানি নিতে হবে। এই পানিতে স্যালাইনের প্যাকেটের পুরো পাউডারটিই ঢেলে দিতে হবে। পরিষ্কার চামচের সাহায্যে পাউডার ও পানি ভালোভাবে মিশিয়ে নিলে তৈরি হয়ে যাবে ব্যবহার উপযোগী খাবার স্যালাইন। প্যাকেটজাত খাবার স্যালাইনের পাউডার দিয়ে তৈরি এই ওরাল স্যালাইন একবার পানিতে মেশানোর পর ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে। যদি ১২ ঘণ্টা পর স্যালাইন পানি অবশিষ্ট থাকে তবে তা ফেলে দিয়ে পুনরায় নতুন করে তৈরি করতে হবে। কারণ ১২ ঘণ্টা পর সেখানে জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। এই স্যালাইন পান করলে শরীরে জীবাণুর আক্রমণ হতে পারে। তৈরির পর কোনো অবস্থাতেই স্যালাইন পানি গরমও করা যাবে না। কারণ এতে স্যালাইনের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়।

সূত্র: jagonews24

সর্বশেষ: