শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্থলভাগে গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম

কূপ খননে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে তিন বিদেশী

কূপ খননে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে তিন বিদেশী

সংগৃহীত

দেশে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্যাস উত্তোলনে নিয়োজিত রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন কোম্পানি। গ্যাসের উত্তোলন ও সরবরাহ বাড়াতে পেট্রোবাংলার অধীন কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে নতুন কূপ খনন এবং বিদ্যমান কূপের মেরামত ও সংস্কারের (ওয়ার্কওভার) উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে বিদেশী তিন কোম্পানি। এগুলো হলো রাশিয়ার গ্যাজপ্রম, চীনের সিনোপ্যাক ও ‍উজবেকিস্তানের এরিয়েল। স্থলভাগে ১৭টি কূপে কাজ করার বিষয়ে বিদেশী কোম্পানি তিনটির পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাব এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। 

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সাল নাগাদ ৪৬টি কূপ খনন ও ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এসব কূপ খননের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের দৈনিক সরবরাহ ৬১৫ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৭টি কূপে কার্যক্রম চালাতে যাচ্ছে বিদেশী তিন প্রতিষ্ঠান। জ্বালানি বিভাগ এখন কোম্পানিগুলোর এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবের আর্থিক বিষয়াদি খতিয়ে দেখছে। 

সার্বিক অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষে ভোলায় বাপেক্সের আওতাধীন পাঁচটি কূপে খনন কার্যক্রম চালাবে রুশ কোম্পানি গ্যাজপ্রম। আগেও সেখানে কোম্পানিটির মাধ্যমে কূপ খননের কাজ করিয়েছে বাপেক্স। চীনা কোম্পানি সিনোপ্যাক খনন করবে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (এসজিএফসিএল) আওতাধীন পাঁচটি কূপ। আর বিভিন্ন জেলায় বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) আওতাধীন সাতটি কূপে খনন চালাবে উজবেক কোম্পানি এরিয়েল। 

সরকার এসজিএফসিএলকে সিলেটের কূপ পাঁচটিতে খননের অনুমোদন দিয়েছে বিশেষ বিধানের আওতায়। এর মধ্যে চারটি অনুসন্ধান ও একটি উন্নয়ন কূপ। এজন্য এসজিএফসিএলের পক্ষ থেকে তিনটি ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরি করা হয়। এরপর কূপগুলোয় খনন কার্যক্রম চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করে সিনোপ্যাক। অনুসন্ধান কূপগুলো হলো রশীদপুর-১১ ও ১৩, কৈলাশটিলা-৯ এবং সিলেটের ডুপি টিলা-১ আর একমাত্র উন্নয়ন কূপ সিলেট-১১। এসব প্রকল্পে মোট ব্যয় হতে পারে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো।

এ বিষয়ে এসজিএফসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সিনোপ্যাকের পাঁচটি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কূপ খননে ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। চূড়ান্ত কোনো চুক্তি হয়নি। বিষয়টি এখন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কূপ খননসংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন ও এর পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পাদনের পরই কোম্পানিগুলো পর্যায়ক্রমে ১৭টি কূপে তাদের খনন ও সংস্কার কার্যক্রম চালানো শুরু করবে। এসব কাজ ২০২৫ সাল নাগাদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এতে দুই বছরেরও অধিক সময়ের প্রয়োজন।

ভোলায় আওতাধীন পাঁচটি কূপ খননে গ্যাজপ্রমের দেয়া প্রস্তাবের কারিগরি ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো মূল্যায়ন শেষে এরই মধ্যে জ্বালানি বিভাগে প্রতিবেদন দিয়েছে বাপেক্স। এ প্রস্তাব নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বৈঠকও হয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে জ্বালানি বিভাগের দরকষাকষি চলছে। বাপেক্স সূত্রে জানা গেছে, এ পাঁচ কূপের মধ্যে অনুসন্ধান কূপ একটি, বাকিগুলো উন্নয়ন কূপ। এগুলো খননের জন্য রুশ কোম্পানিটি ১২০ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বাপেক্সের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পাঁচটি কূপ খননে গ্যাজপ্রম কাজ পাচ্ছে এটি নিশ্চিত। এখন তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে দরকষাকষি চলছে। তারা পাঁচটি ‍কূপ খননে ১২০ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে। জ্বালানি বিভাগ থেকে তাদের প্রস্তাবিত মূল্য কমানোর কথা বলা হয়েছে। তবে প্রকল্পের খরচ আরো বাড়তে পারে।’

বিজিএফসিএলের আওতাধীন সাত কূপ খনন ও সংস্কারে উজবেক কোম্পানি এরিয়েলের প্রস্তাব মূল্যায়ন করছে জ্বালানি বিভাগ। রাষ্ট্রায়ত্ত উত্তোলন কোম্পানিটির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিজিএফসিএলের আওতাধীন গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে চারটিতে খনন ও তিনটিতে ওয়ার্কওভার করবে এরিয়েল। এজন্য উজবেক কোম্পানিটির পক্ষ থেকে ব্যয় প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ১৩১ মিলিয়ন ডলার। 

তবে প্রস্তাব খতিয়ে দেখার পর এ ব্যয় কিছুটা কমবে বলে জানিয়েছেন বিজিএফসিএলের শীর্ষ এক কর্মকর্তা। দরকষাকষিতে বড় ধরনের মতানৈক্য না ঘটলে এরিয়েলই কূপ সাতটি খননের কাজ পেতে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।  

দেশের স্থলভাগে বিদেশী কোম্পানিগুলোর কাজ করার বিষয়টিতে তেমন একটা দ্বিমত নেই জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের। তবে বিভিন্ন সময় নানা বিদেশী কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী যথাযথ কাজ না করা ও কূপ খননের জন্য অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন তারা। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো সরকার যদি বিদেশী কোম্পানিগুলোকে দিয়ে সাশ্রয়ীমূল্যে ও যথাযথভাবে কূপ খনন করাতে পারে তাহলে দেশে বিদ্যমান গ্যাস সংকটের কিছু মাত্রায় হলেও সমাধান পাওয়া যাবে। 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্থানীয় গ্যাসের সংকট মোকাবেলা এবং সরকারের কূপ খননের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাপেক্সের পাশাপাশি বিদেশী কোম্পানিরও প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এতগুলো কূপ খনন এখন বাপেক্সের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সেই পরিমাণ রিগ ও জনবল তাদের নেই। তবে এখানে দেখতে হবে বাপেক্সের সক্ষমতা বসিয়ে রেখে বিদেশী কোম্পানিকে কাজ দেয়া হচ্ছে কিনা এবং সেটি অনেক বেশি মূল্যে কাজ দেয়া হচ্ছে কিনা। যদি সেটি হয়ে থাকে তাহলে তা হবে দেশের জ্বালানি খাতের জন্য নেতিবাচক।’

খাতসংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, স্থলভাগে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাপেক্সের পাশাপাশি বিদেশী কোম্পানিগুলোকে আরো আগে থেকেই কাজ করানো দরকার ছিল। বিশেষ করে গ্যাসের নতুন মজুদ অনুসন্ধানে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে দিয়ে কাজ করালে সেটির সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা আরো বেশি থাকত। সেই সঙ্গে বাপেক্সকে দিয়ে কাজ করাতে হলে সংস্থাটির সীমাবদ্ধতা দূর করার পাশাপাশি এর কারিগরি দক্ষতা, সক্ষমতা ও জনবল তৈরিতে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। 

বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমদ ফারুক চিশতী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্থানীয় গ্যাসের উত্তোলন বৃদ্ধি ও নতুন মজুদ আবিষ্কারে বিদেশী কোম্পানির প্রয়োজন রয়েছে। তবে এরই মধ্যে স্থলভাগে যেসব এলাকা এখনো অনাবিষ্কৃত বা যেসব স্থানে অনুসন্ধান চালানোর মতো কারিগরি সক্ষমতা বাপেক্সের নেই, সেসব এলাকায় বিদেশী কোম্পানিগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

বিদেশী কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বিবিয়ানা, তিতাসের মতো বড় গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কার হয়েছে। এখন সেটা কেন করা যাচ্ছে না? বরং এখন বিদেশী কোম্পানিগুলো ঠিকাদারের মাধ্যমে কূপ খনন, সংস্কার ও ওয়ার্কওভারের কাজ করাচ্ছে। এর চেয়ে বরং স্থলভাগে পিএসসি চুক্তি করে বিদেশী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অনুসন্ধান-আবিষ্কারের জন্য বড় আকারে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।’ 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী কামরুজ্জামান খান বণিক বার্তাকে সম্প্রতি বলেন, ‘গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিদেশী কোম্পানির প্রয়োজন রয়েছে। এখন গ্যাসের চাহিদা আগের তুলনায় বহু গুণ বেড়েছে। ২০২৫ সালের আগে যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, সেটি পূরণ করতে হলে দ্রুততার ভিত্তিতে গ্যাস কূপ খনন প্রয়োজন। বাপেক্সের পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগানোর পাশাপাশি তারাও সহায়তা করছে।’

সূত্র: বণিক বার্তা

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর