মক্কার ঐতিহাসিক স্থানগুলোর একটি জাবালে নুর। মসজিদুল হারাম থেকে দুই মাইল উত্তর-পূর্ব দিকে যার অবস্থান। জাবালে নুরে অবস্থিত হেরা গুহায় নবুয়ত লাভের আগে নবীজি (সা.) ধ্যান করেছিলেন এবং এখানেই প্রথম কোরআন অবতীর্ণ হয়েছিল। জাবালে নুরের উচ্চতা ৬৪২ মিটার (প্রায় দুই হাজার ফিট)।
পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছতে অতিক্রম করতে হয় সিঁড়ির ১৭ শ ধাপ। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের তা অতিক্রম করতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়।
এই পাহাড়ের চূড়ায় ‘গারে হেরা’ বা হেরা গুহা অবস্থিত, যার দৈর্ঘ্য ৪ মিটার এবং প্রস্থ ১.৫ মিটার। যেখানে একসঙ্গে মাত্র পাঁচজন ব্যক্তি বসতে পারে। হজের সময় বিপুলসংখ্যক মুসল্লি গারে হেরা পরিদর্শনে যায়। তাদের সুবিধার্থে সৌদি সরকার পাহাড়ের প্রায় ২০০ ফুট উঁচুতে গাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে, পাহাড়ের পাথর কেটে সিঁড়ি তৈরি করেছে এবং পাঁচটি বিশ্রাম নেওয়ার স্থান তৈরি করেছে। এ ছাড়া কিছু বিপজ্জনক স্থানে রেলিং দেওয়া হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও প্রতিবছর রমজানে নির্জনে আল্লাহর ইবাদত করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বয়স ৪০ বছর পূর্ণ হওয়ার পরবর্তী রমজানে তিনি নবুয়তপ্রাপ্ত হন। (সিরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা ৫৩)
নবুয়তের আগে মহানবী (সা.)-এর মনে অস্থিরতা তৈরি হয়। ফলে তিনি একাকিত্ব বেছে নেন এবং এ সময় তিনি সত্য স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে সর্বপ্রথম যে ওহি আসে, তা ছিল নিদ্রাবস্থায় স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে প্রভাতের আলোর মতো প্রকাশিত হতো। অতঃপর তাঁর কাছে নির্জনতা পছন্দনীয় হয়ে দাঁড়ায় এবং তিনি ‘হেরা’র গুহায় নির্জনে অবস্থান করতেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে এসে কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার আগে—এভাবে সেখানে তিনি একনাগাড়ে বেশ কয়েক দিন ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। অতঃপর খাদিজা (রা.)-এর কাছে ফিরে এসে আবার একই সময়ের জন্য কিছু খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যেতেন। এভাবে ‘হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে তাঁর কাছে ওহি এলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) এক মাস পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতেন। খাদিজা (রা.)-ও কখনো কখনো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গী হতেন। তবে তিনি গুহায় অবস্থান না করে আশপাশে কোথাও অবস্থান করতেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য খাবার নিয়ে যেতেন। হেরা গুহায় অবস্থানের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি পথিকদের পানি পান করাতেন এবং খাবার খাওয়াতেন। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৮৩)
আলোকিত সিরাজগঞ্জ