সংগৃহীত
জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। বাংলার প্রকৃতি যেন প্রতিবারই নতুন করে সেজে ওঠে ঋতুর পালাবদলে। হেমন্তকে বিদায় জানিয়ে কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে প্রকৃতিতে আগমনী বার্তা জানান দিয়েছে রূপবৈচিত্র্যের ঋতু শীত। সিরাজগঞ্জের সর্বত্র হালকা কুয়াশা আর গ্রামাঞ্চলের ঘাসের ওপর ঝরেপড়া শিশির জানিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমন। ইতোমধ্যেই সকাল থেকেই দেখা মিলছে না সূর্যের। এতে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ পড়েছেন বিপাকে। ঘন কুয়াশার কারণে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে যমুনা বিধৌত কাজিপুরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কম্বল তৈরির কারিগররা। কম্বল পল্লী নামে খ্যাত উপজেলার মাইজবাড়ি গ্রাম শিমুলদাইড় বাজারসহ কাজিপুরের প্রায় ৩০-৩৫টি গ্রামের ২০-২৫ হাজার কারিগর ও তাদের পরিজন এর ওপর নির্ভরশীল। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো নিম্নআয়ের মানুুষ নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
বাড়তি আয়ের সুযোগে এ কম্বল তৈরি দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে জানান শিমুলদাইড় গ্রামের হাফিজুল ইসলাম। মাইজবাড়ি, কুনকুনিয়া, শ্যামপুর, শিমুলদাইড় বাজার, বড়শিভাঙ্গা, গাড়াবেড়, চালিতাডাঙ্গা, মেঘাই, নয়াপাড়া, গাঁন্ধাইল মিলে ৩০-৩৫টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার পরিবার গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় বা টুকরো কাপড় দিয়ে স্থানীয়ভাবে কম্বল তৈরি করছেন। কম্বল তৈরির শ্রমিক হেলেনা বেগম জানান, আমরা পা মেশিন দিয়ে প্রতিদিন ১ জন শ্রমিক ৩-৪টা কম্বল তৈরি করি। প্রতিটি কম্বলের মজুরি পাই ৪৫-৫০ টাকা।
কারিগর শাহিনুর বেগম জানান, ফ্লাডলক মেশিনে অধিক কম্বল তৈরি করে বাড়তি টাকা আয় করা হয়। কিন্তু মেয়েদের কম্বল তৈরির মজুরি কম হলেও পারিবারিক কাজের ফাঁকে শীত মৌসুমে আমাদের ছেলেমেয়েকে নিয়ে কম্বল সেলাই করে সংসারের অভাব কিছুটা দূর হয়। কারিগর মমিন শিমুলদাইড় বাজারে ফ্লাডলক মেশিনে কাজ করেন। তার প্রতিদিন ৯শ থেকে ১ হাজার টাকার মতো আয় হয়। আর এভাবেই সংসারের খরচ বাদে ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করাতে তাকে বেগ পেতে হয় না।
কুনকুনিয়া গ্রামে ১৫ হাজার পা মেশিন ও শিমুলদাইড় বাজারে প্রায় ৩শ যন্ত্রচালিত ফ্লাডলক পাওয়ার মেশিন রয়েছে। ফ্লাডলক পাওয়ার মেশিনে প্রতিদিন ৯শ থেকে হাজার পিস কম্বল তৈরি হয়। প্রতি কারিগর ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করে বলে শ্রমিক শফি জানান।
কম্বল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম সোহেল রানা বলেন, ১৯৯৪ সালে এ এলাকার সাইদুল নামে একজন প্রথমে গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় দিয়ে কম্বল তৈরি শুরু করেন। আজ এখানে কম্বলের পাশাপাশি ছোট ছেলেমেদের গরম কাপড়ের পোশাকও তৈরি হচ্ছে। আর উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলার মহাজনরা এসে ক্রয় করেন। এক সময় এ ব্যবসাটি স্থানীয় পর্যায়ে হলেও সময়ের ব্যবধানে এর পরিধি বেড়ে দেশব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে। যমুনার ভাঙনপ্রবণ এ এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকা রাখছে।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বকুল বলেন, যমুনার হিংস্র থাবায় প্রতি বছরই কাজিপুরের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে বহন করতে হয় বেকারত্বের অভিশাপ। কম্বল তৈরির কারখানায় কাজ করে এ এলাকার নারী-পুরুষ আজ আর্থিক দিক থেকে অনেকটাই সচ্ছল হয়েছেন।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কাজিপুরের তৈরি কম্বলের দেশব্যাপী চাহিদা রয়েছে। দেশের সর্বত্র প্রচার ও প্রসার ঘটানোর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়াও কম্বল তৈরির কারখানায় যাতায়াত অসুবিধা দূরীকরণে ইতোমধ্যেই পদক্ষেপও গ্রহণ করেছি। তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ীদের আর্থিক লেনদেনের সুবিধার্থে স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে সান্ধ্যকালীন সময় পর্যন্ত খোলা রাখার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
তাছাড়াও কম্বল তৈরির কারখানায় অনেক বেকারত্ব দূর হয়েছে বলে সচেতন মহল মনে করেন।














