বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

সিরাজগঞ্জে আখের ভালো দামে লাভবান কৃষক

সিরাজগঞ্জে আখের ভালো দামে লাভবান কৃষক

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে আখ পরিচর্চা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কয়েক বছর ধরে ব্যাপকহারে আখ চাষ হলেও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছিলেন না কৃষকেরা। সঠিক মূল্য না পাওয়ায় হতাশায় উপজেলার প্রায় কৃষকই ছেড়ে দিয়েছিল আখ চাষ। বর্তমানে পাইকারি-খুচরা বাজারে আখের চাহিদা ও ভালো দাম পাওয়ায় নতুনভাবে আখ চাষ করতে শুরু করেছেন অনেকে।

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সিরাজগঞ্জে ৮৯০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ইশ্বরদী ১৬, ১৭, ২২, ২৩, ২৮, ৩৯, ৪০ জাত সহ বিভিন্ন জাতের আখ চাষ করা হয়েছে। এ বছর উপজেলার যে সব কৃষক আখ চাষ করেছেন ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে তাদের মুখে। চলতি বছরে রোগবালাই ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় আখের ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। বর্তমানে খুচরা বাজারে বড় সাইজের একটি চিবিয়ে খাওয়া আখ ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত এবং মাঝারি ও ছোট সাইজের আখ বাজারদর এলাকা ভেদে ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কামারখন্দ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ উপজেলায় এ বছর ১৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ৪৬.৬ টন। যার মধ্যে অধিকাংশ জমিতেই লক্ষ করা যাচ্ছে চিবিয়ে খাওয়া আখ বনপাড়া গেন্ডারী, তুরাগ গেন্ডারী, বিএসআআই-৪১ ও বিএসআআই আখ-৪২ জাতের আখ চাষ হয়েছে। এ জাতের আখের চারা রোপন থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত ৬-৮ মাস সময় লাগে।

কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ি চরের কৃষক ফটিক মন্ডল জানান, আখ চাষে আমরা যথেষ্ঠ লাভবান হচ্ছি। শুধু গুড় তৈরিতে না রস এবং মুখে খাওয়ার জন্যে আখ বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া যায়। একবার চাষ করলে ২-৩ বছর নতুন করে চাষ করতে হয় না। ওই আখের গোড়া থেকেই নতুন আখের জন্ম হয়। এতে বাড়তি কোনো খরচ হয় না।

উপজেলার মধ্যে ভদ্রঘাঁট ইউনিয়নের, কুটিরচর, নয়াপাড়া, কাচারিপাড়া ও চৈরগাঁতী ভদ্রঘাঁট, জামতৈল ইউনিয়নের পাইকোশা এলাকাতে উল্লেখযোগ্য হারে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলন পাওয়ার জন্য উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের বিএসআরআই আখ ৪১, বিএসআরআই আখ ৪২ আখের আধুনিক চাষাবাদ করা হয়েছে। এ জাতের আখ নরম ,লম্বা, মোটা আকারের এবং বেশ সুস্বাদু-রসালো হাওয়ায় এখান থেকে পাইকাররা নিয়ে যাচ্ছে ঢাকা- সহ বিভিন্ন জেলায়।

উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের আখ চাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, আমি বিএসআরআই এর সহযোগিতায় এ বছর ৩ বিঘা জমিতে পিচ-বাও বিক্রি করার জন্য (৪১ ও ৪২ জাত) এর আখ চাষ করেছি। গুড় উৎপাদনের জন্য ঈশ্বরদী-৩৩ জাতের মুড়ি আখ এক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে চারা কেনা, হাল চাষ, শ্রমিক খরচসহ সব মিলিয়ে ২৫ হাজার টাকা। আশা করছি আখ বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা পাব।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবুল বায়েস জানান, এবছর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। তবে যে সকল কৃষকেরা আখ চাষ করেছেন তারা লাভবান হচ্ছেন।

কামারখন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রাশিদ হাসান বলেন, এবার কামারখন্দের ভদ্রঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও জামতৈল ইউনিয়নের পাইকোশা এলাকায় ব্যাপক আখ চাষ হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শামীনূর ইসলাম বলেন, জেলায় এবছর ৮৯০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আখ চাষ করা হয়েছে। আখ দিয়ে এখন শুধু গুড়, চিনি তৈরি হয় না আখের রস এবং চিবিয়ে খাওয়া আখের চাহিদা বাড়ছে। এবং এর দামও বেশি এতে আখ চাষিরা লাভবান হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে আখ চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে আসছে।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ: