আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশের ন্যায় সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে একাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচন অনুষ্টিত হবে। অত্র আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে মাঠে নেমেছেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. এম এ আজিজ। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী অতিপরিচিত মুখ চার-চারবারের সাবেক সাংসদ আব্দুল মান্নান তালুকদার। এক্ষেত্রে ভোটের মাঠে সফল হওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে বিএনপির হেবিওয়েট প্রার্থী হওয়ায় কিছুটা নির্ভার রয়েছে বিএনপির দলীয় নেতাকর্মী। আওয়ামীলীগ প্রার্থী ডা. এম এ আজিজ চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়ালে ও রাজনীতির মাঠে তিনি একেবারেই নতুন মুখ ।
তবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের কাছে তিনি নতুন মুখ হিসেবে ভোটের মাঠে নেমেছেন। সাধারন ভোটাররা বলছে, যাকে কোনদিন রাজনীতির মাঠে দেখিনি, কোনোদিন নামও শুনিনি, বাড়ী কোথায়, তার আচরণ কেমন হবে তাও জানি না। তাই দেখি কি করা যায়। আর দলীয় নেতাকর্মীরা বলছে, নতুন মুখ হওয়ায় ভোটারদের কাছে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। নানা জনে নানা মন্তব্যও করছেন। এ কারণে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রায়গঞ্জ-তাড়াশ আসনটি ধরে রাখা নিয়ে কিছুটা শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এ দিকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ডা. এম এ আজিজের নির্বাচনী প্রচারণায় দলের ত্যাগী বা পুরাতন নেতা-কর্মীর সংখ্যাটা অনেকটাই কম হলেও নতুন মুখ নিয়েই তিনি নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাড়াশ উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাচ্চু জানান, ভোটের মাঠে অভিজ্ঞ ও পরিচিত মুখ নিয়ে যতটা শক্ত অবস্থান গড়া যায় তেমনি অপরিচিত মুখ নিয়ে ভোটের মাঠে লড়াই করে জেতা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে। আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. এম এ আজিজ সৎ ব্যক্তি হলেও রায়গঞ্জ-তাড়াশে তার পরিচিতি নেই। সাধারণ ভোটাররা তাকে চেনে না। অন্যদিকে, বিপরীত বিএনপি দলীয় প্রার্থী আব্দুল মান্নান তালুকদার পরিচিত মুখ ও একজন হেভিওয়েট প্রার্থী । এক্ষেত্রে ভোটের মাঠে সফল হওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। তারপরেও জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামীলীগের কর্মী হিসেবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে।
রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন না দিলেও তার কঠোর নির্দেশ নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। সে অনুযায়ী আমরা ডা. এম এ আজিজের পক্ষে মাঠে নেমেছি। ডা. এম এ আজিজ এলাকায় এসেছেন। বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় ও গণসংযোগ করে পরিচয় হচ্ছেন। আসনটিতে বিএনপি-আওয়ামীলীগের প্রায় সমান সমান ভোট রয়েছে। আর ১৫ থেকে ২০% ভাসমান ভোট রয়েছে। এই ২০% ভোট যে দল পাবে সেই দলের প্রার্থীই নির্বাচিত হবে। তারপরেও আমরা দলীয় প্রার্থীকে বিজয় করতে চেষ্টার কোনো ত্র“টি করব না।
এ বিষয়ে কথা হয় আওয়ামীলীগ প্রার্থী ডা. এম্ এ আজিজের সাথে তিনি বলেন, আমি এলাকায় না আসলেও বিভিন্ন সময়ে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর নিয়েছি। দলীয় কোন্দলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের ভেতর কোন্দল ছিল। আমি মনোনয়ন পাওয়ার পর কোন্দল ভুলে সবাই মিলে আমার সাথে কাজ করছে। আওয়ামীলীগ সরকার দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। সবদিক বিবেচনা করে সাধারণ ভোটাররা এবার নৌকায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে বলে তিনি আশাবাদী।
এদিকে বিএনপি প্রার্থী আব্দুল মান্নান তালুকদার বলেন, রায়গঞ্জ-তাড়াশ বিএনপির দুর্গ হিসাবে পরিচিত। এ আসন থেকে আমাকে বার বার নির্বাচিত করেছেন এই এলাকার জনগণ। আবারও তারা আমাকে চায়। বিপুল ভোটের ব্যবধানে এবারও আমাকে জয়যুক্ত করবেন বলে মনে করছি। প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত আমাকে বাধা দেয়া হচ্ছে। আমার গাড়ী ভাংচুর করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের মেরে আহত করা হচ্ছে। তারপরও সাধারণ ভোটররা আমাকে চায় ও আমার সাথে আছে। উল্লেখ্য সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ-সলঙ্গা) আসনটি ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিএনপির দখলে ছিল।
আসনটি থেকে প্রতিবারই বিএনপি প্রার্থী আব্দুল মান্নান তালুকদার বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগের আলহাজ্ব ইসহাক হোসেন তালুকদার জয়ী হন। ২০১৪ সালেও তিনি বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়ে ২০১৫ সালে তিনি মারা যাওয়ায় আসনটি থেকে আওয়ামলীগের গাজী ম.ম. আমজাদ হোসেন মিলন উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৩ জন।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ