সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বেড়েই চলেছে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন সংক্রান্ত মামলার জট। বর্তমানে ২০১৪ সালের ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি চলছে। সুপ্রিমকোর্টে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হওয়ায় কারাগারের কনডেমসেলে অপেক্ষা বাড়ছে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের।
কারা সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের কারাগার গুলোর কনডেম সেলে ছিল ১ হাজার ৬’শ ৮১ জন আসামি। বর্তমানে হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চকে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে একটি বেঞ্চে কেবল পুরো সপ্তাহ ধরে এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হচ্ছে। আর বাকী দুটো বেঞ্চে অন্যান্য মামলারও শুনানি হয়। যার কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে কিছুটা সময় লাগছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩১ ধারা অনুযায়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকরা যেকোনো প্রকার দণ্ড দিতে পারেন। তবে কেবল মৃত্যুদণ্ড দিলে সেটি হাইকোর্টে অনুমোদন করাতে হয়। আর সে অনুযায়ী মামলার নথিপত্র পাঠিয়ে দেয়া হয় উচ্চ আদালতে। এরপর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে চা ল্যকর হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার পেপারবুক তৈরি করে তা উপস্থাপন করা হয় শুনানির জন্য। এছাড়া অন্যান্য মামলা ক্রমান্বয়ে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।
হাইকোর্টে নিষ্পত্তির পর রায়ে সংক্ষুব্ধরা অনেকে আবেদন করেন আপিল বিভাগে। এর পর রিভিউ পর্যন্ত সুযোগ থাকে। আর রিভিউ খারিজ হলে এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা না চাইলে বা রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না করলে কার্যকর করা হয় মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার পর থেকেই ফাঁসির আসামিকে রাখা হয় কারাগারের কনডেম সেলে। সেখানে তাদের থাকতে হয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগ পর্যন্ত বা সাজা পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত।
হাইকোর্টে চলতি বছরের নিষ্পত্তি হয়েছে ৩০টি মামলা। আর গত বছর নিষ্পত্তি হয়েছিল ৮৩টি মামলা। একই সময়ে বিচারাধীন ছিল ৭১১টি মামলা। এর আগে ২০০৪ সালে নিষ্পত্তি হয় ১০১টি মামলা। সে সময় বিচারাধীন ছিল ৩৩৮ টি মামলা। ৫, ৬ ও ৭ সালে বিচারাধীন ছিল ৪৬৪, ৫১১ ও ৪৬৫ টি মামলা। ১৫ সালে বিচারাধীন ছিল ৪১৯টি মামলা। ১৬ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৫-এ। আর ১৭ সালে আরো বেড়ে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৪০-এ।
এদিকে সুপ্রিমকোর্টে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হওয়ায় কারাগারের কনডেমসেলে অপেক্ষা বাড়ছে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের।
কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশের কারাগার গুলোর কনডেম সেলে ছিল ১ হাজার ৬’শ ৮১ জন আসামি। অনেকে আছেন বছরের পর বছর ধরে। কনডেমসেলকে বলা হয় কারাগারের ভেতরে আরেক কারাগার। যেখানে সাধারণ বন্দিদের রাখা হয় না। কনডেমসেলের ছোট কক্ষে কেবল একজন আসামিকেই রাখা হয়। আর ওই কক্ষের ভেতরেই তার খাওয়া-দাওয়া, গোসলসহ যাবতীয় কাজ সারতে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্টের স্পেশাল অফিসার সাইফুর রহমান বলেন, আগে দুটো বেঞ্চে ডেথরেফারেন্স মামলার শুনানি হতো। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এখন তিনটি বেঞ্চকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, মামলা নিষ্পত্তিতে ধীরগতির বিষয়টি প্রয়োজনে আমি প্রধান বিচারপতিকে জানাবো। তখন হয়তো এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা আসতে পারে।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ