
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে এবারের মৌসুমেও। রসে ভরা টস-টসে আনারস দেখে কৃষকের মুখেও ফুটেছে হাসি। রসে ভরা এ আনারস ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজার দখল করেছে।
মধুপুরের রসে ভরা টস-টসে আনারসের মৌ-মৌ গন্ধ ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে দারুণভাবে। এবার মধুপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। তারা মন্ত্রমুগ্ধের মতো ঘুরছেন আনারস সহজলভ্যভাবে কেনার জন্য। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ক্রেতা অনেক বেশি। বিক্রিও হচ্ছে আগের বছরের তুলনায় বেশি দামে।
তারপরও কিছুটা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন কৃষকেরা। কেননা এবার ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় এই রসালো ফলটি বেশি দিন জমিতে রাখার জন্য চেষ্টা করছেন তারা। যাতে করে আরেকটু বেশি পয়সা পাওয়া যায় সে আশায়। সংরক্ষণের অভাবে যদি নষ্ট হয় এ কষ্টের ফসল - সেজন্য তাদের চোখে ঘুম নেই। তবে চাহিদা বেশি থাকায় দাম একটু বেশিই বলে মনে করছেন অনেক ক্রেতা।
মধুপুরের বিখ্যাত আনারসের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ১০০ আনারস আকার ভেদে ৬০০০ থেকে ৮০০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। জলছত্র পঁচিশমাইল বাজার, মোটের বাজার ও গারোবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি জোড়া আনারস ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, আবার প্রতি পিস আনারস আকার ভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত খুচরা দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
বিগত বছরগুলোতে এর চেয়ে বেশি দামে আনারস বিক্রির কথা জানাতে পারছেন না কৃষকেরা। কৃষকদের কেউ কেউ বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার আনারসের চাহিদা একটু বেশি, এজন্য দামও চড়া। পরিশ্রমের আনারস ফসল এমন চড়া দামে বিক্রি করতে পেরে দারুণ খুশি এ অঞ্চলের চাষিরা।
স্থানীয় মহিষমারা গ্রামের আনারস চাষি মো: সোহরাব হোসেন, তিনি দীর্ঘদিন যাবত আনারস চাষ করেন। এ বছরও চার একর জমিতে আনারস চাষ করেছেন। ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। প্রচণ্ড তাপদাহ ও গরমের কারণে এ বছর আনারসের চাহিদা ও দাম একটু বেশি। এতে তিনি লাভের মুখ দেখেছেন অন্যান্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।
শুধু সোহরাব হোসেন নয়, এবার আনারসের চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় তার মতো আরো ১০ হাজার আনারস চাষির মুখে হাসি ফুটেছে। ভালো দাম পেয়ে আনারস চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। এমন আগ্রহ থেকেই মধুপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতোমধ্যে রোপন করা হয়েছে ফিলিপাইন জাতের আনারসের চারা। কৃষি বিভাগ চাষিদেরকে এটি বিনামূল্যে সরবরাহ করায় আগ্রহও বেড়েছে তাদের মধ্যে। আনারস চাষ ও ব্যবসার সাথে জড়িতদের মুখে হাসি ফুটেছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা, চাষি এবং পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
অপরদিকে জলছত্রের আনারস চাষী সুমন মৃধা জানান, এবার আনারসের ফলন ভালো এবং চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও পাওয়া যাচ্ছে অনেকটাই বেশি। কিন্তু হতাশার কথা হলো, এ ফল পাকার পর দু’-একদিন রাখা যায়। আমাদের এখানে হিমাগার না থাকায় আমরা সংরক্ষণ করতে পারি না। এ কারণে অনেক ফল নষ্ট হয়ে কৃষক ক্ষতির মুখে পড়ে।
জলছত্র কাঁচামাল সংগ্রহ ও সংরক্ষণকারী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানান, চাষিরা ট্রাক মালিক সমন্বয়ক কমিটির কাছে জিম্মি। বাধ্যতামূলক তাদের কাছ থেকে গাড়ি নিতে হয়। এতে চাষিদের খরচ বেশি হয়। অন্যান্য গাড়িতে পরিবহন করতে পারলে কৃষক আরো দূরে আনারস নিতে পারত ও আরো বেশি লাভবান হতে পারত।
মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আল মামুন রাসেল জানান, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৫৪২ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে যা গত বছরের চেয়ে বেশি। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ৪০ টনের মত করে আনারস উৎপাদন হয়। মধুপুরের আবাদি জাতের আনারস অনেকটাই ভালো তাই উৎপাদনও বেশি হয়। কিন্তু সংরক্ষণের সমস্যার কারণে বিদেশে রফতানিতেও একটা বাধা আছে। কন্টেইনারে করে বিদেশে পাঠালেও তা সংশ্লিষ্ট দেশে পৌঁছার আগে রাস্তাতেই পচে যায়। আর এজন্য দেশীয় জাতের পাশা-পাশি বিদেশ রফতানিযোগ্য ফিলিপাইন জাত এমডি-২ এ দেশে ইতোমধ্যে আবাদ শুরু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির আনারসের পাশাপাশি কৃষি অফিসের পরামর্শে জৈবিক উপায়ে ব্যাপকভাবে সাথী ফসলের চাষ হচ্ছে। এতে কৃষক লাভবান হচ্ছে আর প্রধানমন্ত্রীর পুষ্টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কেমিক্যাল ছাড়া আনারস হয় না - আমাদের এ ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মধুপুরে এখন জৈবিক উপায়ে কেমিক্যালমুক্ত আনারস চাষ হচ্ছে। আর এতে চাষি ও ক্রেতারা লাভবান হচ্ছে।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ