বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রান্স গ্র্যান্ড মসজিদ

ফ্রান্স গ্র্যান্ড মসজিদ

 

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদগুলোর মধ্যে ফ্রান্সের গ্র্যান্ড মসজিদ মুসলমানদের আত্মত্যাগের এক সাক্ষী হয়ে আছে। ফ্রান্স বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার বর্গ কি.মি. এর এই দেশের অবস্থান। পশ্চিম ইউরোপে ২০০৪ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ছয় কোটি চার লাখ ২৪ হাজার। 

দেশটিতে রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মের লোক বেশি। সেই দেশে প্রায় ৬০ লাখ মুসলমান বসবাস করে, যা মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ। প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান ও ইহুদিদের সংখ্যা মুসলমানদের চেয়ে অনেক কম।

এই মুসলমানরা বেশির ভাগই আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও মরক্কো থেকে এসে ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে বসতি স্থাপন করেছেন। সংখ্যায় মুসলমানরা কম হলেও র্জামানির আক্রমন থেকে ফ্রান্সের ভূখন্ড রক্ষায় প্রথম মহাযুদ্ধে প্রায় ৩৮ হাজার মুসলমান ফ্রান্সের জন্য জীবন দিয়েছে। এই যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জনকারী মুসলমানদের সম্মানে ফ্রান্সের সরকার ১৯২৬ সালে প্যারিসে গ্র্যান্ড মসজিদ স্থাপন করে। ধারণা করা হচ্ছে, অমুসলিম এই ফ্রান্সের এটিই প্রথম মসজিদ, যা এখনো মুসলমানদের আত্নত্যাগের সাক্ষী হিসেবে বিদ্যমান।

ফ্রান্স গ্র্যান্ড মসজিদ নির্মাণের ইতিবৃত্ত: ১৮৪২ সালের সূচনালগ্ন থেকেই ফ্রান্স সরকারের কাছে মুসলমানরা একটি মসজিদ নির্মাণের অনুমতি চেয়ে আবেদন পত্র জমা দিয়ে আসছিলেন। অবশ্য ১৮৫৬ সালে অটোম্যান (ওসমানি) দূতাবাসের প্রচেষ্টায় মুসলমান শহিদদের ‘পেরা লেচিস’ কবরস্থানে দাফনের জন্য পৃথক জায়গা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছিল। তারপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এতে এক লাখ মুসলমান সৈন্য ফ্রান্সের পক্ষে লড়াই করেন। হাজার হাজার মুসলমান নিজের প্যাণ বিসর্জন দেন। আর মুসলমানদের এই আত্নত্যাগ অবশেষে ফ্রান্স সরকারকে মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দিতে উদ্বুদ্ধ করে।

 

ফ্রান্স গ্র্যান্ড মসজিদ

 

১৯২০ সালের ১৯ আগষ্ট ফ্রান্স সরকার মসজিদ নির্মাণের জন্য সরকারি তহবিল থেকে পাঁচ লাখ ফ্রাংকের (দেশীয় মুদ্রা) বিল পাস করে। প্যারিস নগরীর পুরনো হাসপাতালের কাছে এক হাজার মানুষের নামাজ আদায়ের সুবিধা রেখে একটি মসজিদ, গ্রন্থাগার, মাদরাসা ও কনফারেন্সরুম নির্মিত হয়। 

১৯২২ সালের ১৯ অক্টোবর ঠিক দুপুর ২টায় ফ্রান্স সরকার ও মুসলিম বিশ্বের একাধিক রাষ্টীয় অতিথির উপস্থিতিতে আর্কিটেক্ট মাউরিস ট্রানচান্ট ডি লুনেলের নেতৃত্বে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। ১৯২৬ সালের ১৫ জুলাই শাইখ আহমাদ আল আলাওয়ি (১৮৬৯-১৯৩৪) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট গাস্টন ডোমারগোর উপস্থিতিতে সর্বপ্রথম নামাজের ইমামতি করে মসজিদটি উদ্বোধন করেন।

মসজিদটি নির্মাণের ক্ষেত্রে মরক্কোর নির্মাণশৈলী অনুসরণ করা হয়। ফিজে অবস্থিত মরক্কোর প্রাচীনতম ও অন্যতম বৃহৎ মসজিদ ‘আল কারাওয়িয়্যাহর’
আদলে মসজিদটি স্থাপিত হয় অন্যদিকে তিউনিসিয়ার জায়াতুন মসজিদের মিনারের অনুকরণে এখানকার মিনারটি নির্মিত হয়।

বিস্ময়ের কথা হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময় মসজিদটি উত্তর আফ্রিকান ও ইউরোপিয়ান ইহুদিদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে কাজে আসে। হিটলার বাহিনীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখানে এসে ইহুদিরা আত্নগোপন করে থাকত। এমনকি মসজিদ কমিটি তাদের জন্য ভুয়া মুসলিম জন্মনিবন্ধন কার্ডও তৈরি করে দিয়েছিল। আশ্রয় নেয়া ইহুদিদের নির্দিষ্ট সংখ্যার হিসাব পাওয়া না গেলেও আনুমানিক বলা যায়, তাদের সংখ্যা ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ পর্যন্ত পৌছেছিল; বরং এর চেয়ে বেশি। 

২০১১ সালের ৩ অক্টোবর ‘নিউ ইয়র্ক টাইমাস’পত্রিকায় প্যারিসের এই গ্র্যান্ড মসজিদসংক্রান্ত এলিয়েন সিওলিনো কর্তৃত একটি নাতিদীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘গত সপ্তাহে ফ্রান্সে হিটলারের নাসি বাহিনীর যুদ্ধবিষয়ক একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মিত ও প্রচারিত হয়েছে। ফিল্মটি দেখে তখনকার ফ্রান্সের অনেক দুর্লভ তথ্য ও চিত্র  সম্পর্কে নতুন করে জানা যায়। বিশেষত ওই মসয় মুসলমান সৈন্যদলের বীরত্বপূর্ণ অবদান ও প্যারিসের গ্র্যান্ড মসজিদের বিরল ইতিহাস ফুটে উটেছে ওই ফিল্মে। দেখা যায়, মুসলমানরা ওই মসজিদের মাধ্যমে হাজার হাজার ইহুদিকে নাৎসি বাহিনীর নির্যাতন থেকে রক্ষা করেছে। ফ্রান্সের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ বেঞ্জামিন স্টোরা মন্তব্য করেন, ‘ফিল্মটি মূলত একটি ইতিহাস। নাৎসিদের আক্রমণ থেকে ফ্রান্সকে রক্ষা করতে মুসলমানদের বীরত্বের কথা বলা হলেও ওই সংকটময় মুহূর্তে ইহুদিদের প্রাণ রক্ষায় তারা যে অবিশ্বাস্য কৃতিত্ব দেখিয়েছিল, তা অনেকেই জানে না। এই ফিল্ম সেই অজানা ইতিহাস দর্শকের স্মরণ করিয়ে দেবে।

প্যারিসের এই গ্র্যান্ড মসজিদ ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ হিসেবে বিবেচিত। মসজিদটি পুরো ফ্রান্সে ধর্মীয় ও সামাজিক অনেক অবদান রেখে চলছে। দেশটিতে বসবাসরত মুসলমানদের সংখ্যা ছয় মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেলেও মসজিদের সংখ্যা মাত্র ১২১টি। এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্যারিসের গ্র্যান্ড মসজিদ তার ঐতিহাসিক কৃতিত্ব, ঐতিহ্য ও গুরুত্বের বিবেচনায় ইউরোপীয় মুসলমানদের জন্য অনেক কিছু।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর