সংগৃহীত
সাহারুল হক সাচ্চু: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে মাঠে মাঠে খামার বসেছে। আরো খামারি আসছেন। মৌ খামারিরা মধু সংগ্রহে খামারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রথম কাটায় ( মৌ বক্স চাক থেকে মধু সংগ্রহ ) বেশি পরিমাণ মধু মিলবে বলে খামারিরা আশা করছেন। দিন পাচ থেকে সাত দিন বাদেই প্রথম কাটা শুরু হবে। তারা ভাবছেন মধুর হাসিতে মধু সংগ্রহ করবেন।
উল্লাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা আবাদ করা মাঠে মৌ খামারিরা মৌ বক্স বসিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌ খামারিরা এসেছেন।এবারের মৌসুমে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৫ কেজি মধু উৎপাদন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উল্লাপাড়া উপজেলার কৃষকদের কাছে সরিষা ফসল বছরের দ্বিতীয় প্রধান আবাদ হয়েছে। উপজেলার প্রায় সব মাঠেই কম বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষা ফসলের আবাদ করা হয়। এর মধ্যে উধুনিয়া , বড় পাঙ্গাসী , মোহনপুর ইউনিয়ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষা ফসলের আবাদ হয়। এবারেও হয়েছে। বেশিরভাগ মাঠে আবাদ করা সরিষা ফসলে এখন ফুল এসেছে। দিন যেতেই মাঠের পর মাঠে সরিষা ফুলে হলুদের মেলা জমছে।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে এবারে সরিষা ফসল আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার ৫৭০ হেক্টর পরিমাণ জমিতে ধরা হয়েছে। মৌ চাষের আওতায় সরিষা ফসলের জমির পরিমাণ ১৫ হাজার ৯২৫ হেক্টর । মৌখামার সংখ্যা ১২৫ টি ও ১৫ হাজার ২০ টি মৌ বক্স বসেছে বলে জানা গেছে।
উপজেলার উধুনিয়া , বড় পাঙ্গাসী , মোহনপুর , কয়ড়া ইউনিয়ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে গোটা দশেক মধু খামার দেখা ও খামারিদের সাথে মধু সংগ্রহের বিষয়াদি নিয়ে কথা হয়েছে। উপজেলার বড় পাঙ্গাসী ইউনিয়নের সরিষা ফসল আবাদ করা খাদুলী মাঠে সপ্তাহ দুয়েক হলো রাকসান মৌখামার মালিক মো. রাকিব হোসেন মৌখামার বসিয়েছেন। বসেছে। তিনি বলেন এবারে মধু সংগ্রহে মোট ২শটি মৌ বক্স মাঠে বসিয়েছেন। প্রায় পাচ বছর ধরে তিনি এ পেশায় আছেন। এখনো মধু সংগ্রহ হয়নি। ফুলে নেক্টার আসেনি বলে মধু সংগ্রহ হয়নি। তিনি বলেন ফুলে নেক্টার এলেই কম সময়ের মধ্যে মধু সংগ্রহ শুরু হবে। আশা করছেন আর দিন সাতেক বাদেই খামারে প্রথম মধু সংগ্রহ করবেন। প্রথম বার মধু সংগ্রহের পর আবহাওয়া ভালো থাকলে পাচ থেকে সাতদিন পর পরই মধু সংগ্রহ করা যাবে। এবারের মৌসুমে তিনি নিজ খামারে উল্লাপাড়া এলাকায় সরিষা ফুল থেকে তিন হাজার কেজি মধু সংগ্রহের আশা করছেন। উধুনিয়া ইউনিয়নের উধুনিয়া মাঠে সাতক্ষীরার মো. পলাশ মৌখামার বসিয়েছেন। এবারে উধুনিয়া সরিষা মাঠে ১৩০ টি মৌ বক্স বসিয়েছেন। তিনি বছর চারেক হলো মধু সংগ্রহে উল্লাপাড়ায় আসেন এবং খামার বসান। বাগমারা সড়কের কাছাকাছি সরিষা ফসলের মাঠে মো. আমিরুল ইসলাম ২২০ টি মৌ বক্স নিয়ে খামার বসিয়েছেন। এবারের মৌসুমে তিন টন মধু সংগ্রহের আশা করছেন। সরেজমিনে ঘুরে আরো
দেখা গেছে উপজেলার গয়হাট্টা , হাওড়া , বড় পাঙ্গাসী , সৈয়দপুর পাঙ্গাসী , বাংলাপাড়া , সুজা , কালিয়াকৈর ও আরো কয়েক এলাকায় মাঠে মৌখামার বসেছে। এখন অবধি এসব খামারে প্রথমবার মধু সংগ্রহ হয়নি। আর পাচ থেকে সাতদিন পর থেকেই মধু সংগ্রহ করা শুরু হবে বলে জানানো হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সূবর্ণা ইয়াসমিন সুমী জানান বিভিন্ন এলাকার মৌখামারিরা সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে এসেছেন। আরো খামারি আসার সম্ভাবনা আছে। সরিষা ফুল থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মধু উল্লাপাড়া উপজেলা এলাকা থেকে সংগ্রহ হয়। আবহাওয়া ভালো ( অনুকূলে ) থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ মধু উৎপাদন সংগ্রহ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে মৌখামারিরা আর্থিকভাবে আরো বেশি লাভবান হবেন। তিনি আরো বলেন এবারের মৌসুমে ১৫ হাজার ৯২৫ হেক্টর পরিমাণ জমি মৌ চাষের আওতায় আনা হয়েছে। সরিষা ফুলে মৌমাছি বসলে সহজে ভালো পলিনেশান বা পরাগায়ন হয়। এতে সরিষার মান ও ফলন বাড়ে। সরিষা আবাদকারি কৃষকেরা ও মৌখামারিরা সবদিক থেকেই লাভবান হন।












