
সংগৃহীত
দেশের বাজারে প্লাস্টিক, মেলামাইন ও স্টিলের তৈরি পণ্যের দাপটে সিরাজগঞ্জে মুখ থুবড়ে পড়েছে বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী। এছাড়াও এসব পেশার সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোকে আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে দিনাতিপাত করছে।
এ জেলার কামারখন্দ, বেলকুচি, রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া উপজেলায় প্রায় সহস্রাধিক মানুষ ছিল বাঁশ-বেত শিল্পের কারিগর। তাদের নিজ পেশায় হোচট খেয়ে এখন ভিন্ন পেশার দিকে ঝুঁকছেন। পুঁজি স্বল্পতা, আর্থিক অসচ্ছলতা, বাঁশ ও বেতের উৎপাদন হ্রাস সহ উপকরণের অভাবেই এখন বিলুপ্তির পথে ঐহিত্যবাহী বাঁশ বেত শিল্প।
একসময় সিরাজগঞ্জে ব্যাপক প্রচলন ছিল বাঁশের তৈরি কুলা, পলো, ঝুড়ি, টুপরি, টোনা, টোপা, মইলা (চাটাই), হাঁস মুরগির খাঁচা, বেতের চেয়ার, ঢাকি, খাদি, খালই, ডোল, হাতপাখা এমনকি নিজেদের থাকার ঘরেও খুটি, ধর্না, বেড়া তৈরীতে ব্যবহার করত বাঁশ। কিন্তু আধুনিকতার ছোয়ায় প্লাস্টিক, মেলামাইন ও স্টিলের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিষগুলো বিলুপ্তির পথে।
কিছু হাতে গোনা বাঁশ শিল্প কারিগররা অভাব অনটনের মাঝে আজও বাপ দাদার পেশা ধরে রেখেছে। পুরুষদের পাশাপাশি সংসারের কাজ শেষে নারী কারিগররাও জীবিকা নির্বাহের জন্য ছেলে মেয়েদের নিয়ে অতি কষ্টে কাজ করছে ।
কামারখন্দের ঠাকুরজিপাড়া, জামতৈল গ্রামের গনেশ চন্দ্র ও স্বপন চন্দ্র হাওলাদার জানায়, একসময় আমাদের সাথে ১০ থেকে ১৫ জন কারিগর কাজ করত। তখন তাদের জন প্রতি বেতন ছিল প্রতিদিন ২৫০/৩০০ টাকা। অথচ এখন সে কারিগরদের বেতন দিতে হয় ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। বাঁশের দাম যে পরিমানে বেড়েছে সেই পরিমান বাড়েনি বাঁশ ও বেতের ঝাড়।
কামারখন্দের কর্ণসুতী গ্রামের বাঁশ শিল্প কারিগর আজিজ, উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চক্রোশি গ্রামের দেবেন জানায়, বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারায় আমাদের বাপ দাদার পেশা আজ মুখ থুবরে পড়েছে।
রায়গঞ্জ, ও তাড়াশ এলাকায় বাঁশ শিল্পের কারিগর দুলাল, আয়েশা ও রহিমা বেওয়া বলে, কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ায় আমরা সরকারি-বেসরকারি সংস্থার ঋণ সহায়তা কামনা করছি। প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, মজুরি বৃদ্ধি ও উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিসহ প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যতায় বাঁশ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে বলে সচেতন মহল মনে করেন।
মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান খাঁন সিরাজগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয় উপ-পরিচালক বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মধ্যে ২ হাজার ৩ শত ৯ জনের নাম তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২০৯ জনকে প্রশিক্ষণ ও প্রতিজনকে ১৮ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিদের প্রশিক্ষণ ও অনুদান প্রদান করা হবে।