বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১

সিরাজগঞ্জে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার কমছে খরচ বাড়ছে উৎপাদন

সিরাজগঞ্জে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার কমছে খরচ বাড়ছে উৎপাদন

সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার বড়েছে উৎপাদন একই সঙ্গে কমছে উৎপাদন খরচ। শ্রমিক সংকট, সময়ের স্বল্পতা ,ফসল কর্তন ও মাড়াই, বীজ বোপন ও চারা রোপনে যন্ত্র ব্যাবহার হচ্ছে। এতে করে কৃষকদের যেমন কম সময় লাগছে পাশপাশি অর্থেরও সাশ্রয় হচ্ছে। প্রতি বছরই সরকার কৃষকদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে আসছে। জেলার কৃষকরা ভর্তুকি মূল্যে এসব যন্ত্র পেয়ে বেশ খুশি বলে জানা গেছে।

জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরই কৃষকদের মধ্যে পাওয়ার টিলার, হারভেস্টার মেশিন, ধান, গম মাড়াইয়ের মেশিনসহ নানা ধরনের কৃষিযন্ত্র সমবায়ের মাধ্যমে সরকারিভাবে বিক্রি করা হয়ে থাকে। স্থানীয় কৃষকরা এসব মেশিন ভাড়া নিয়ে চাষাবাদ করছেন। এতে কম সময়ে কম খরচের পাশপাশি কৃষিতে উৎপাদন অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষিতে আধুনিকায়ন জেলায় নতুন দিগন্তের সুচনা করেছে। এ ছাড়াও জেলাতে পলিনেট পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও ট্রে পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন শুরু হয়েছে। এর ফলে কৃষকরা আর্থিভাবে লাভবান হচ্ছে।

উল্লাপাড়া উপজেলার মাছিয়াকান্দি গ্রামের কৃষক আজহার আলী বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে আমরা আগে চাষাবাদ করেনি । এই পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষিতে উৎপাদন কয়েক গুন বেড়েছে । এতে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছে ।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার একডালা গ্রামের কৃষক শহীদুল ইসলাম বলেন, পলিনেট হাউসে চাষাবাদ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপদ থাকা যাচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যে উন্নতমানের টমেটো, ক্যাপসিকাম, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলাসহ নানা সবজির চাষাবাদ করা যায়। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। পলিটেন আসার পর এখন আর জমি পতিত থাকে না।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বনবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আবু সাইদ বলেন, আগে আমরা গরু দিয়ে জমি চাষ করতাম। তখন এক বিঘা জমি চাষ করতে দিনই চলে যেত। এখন ট্রাক্টর আসায় দিনে ৮/১০ বিঘা জমি চাষ করা যায় । এতে আমাদের খরচ ও সময় কম হচ্ছে। পাশাপাশি উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে লাভ হচ্ছে।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূবর্ণা ইয়াসমিন সুমী বলেন, কৃষিকে আধুনিকায়নের আওতায় বীজতলা করার জন্য কৃষিবিভাগ থেকে ট্রে ও বোরো ধান বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। পলিনেট হাউসে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফুল চাষ সিরাজগঞ্জে এই প্রথম। এভাবে দীর্ঘমেয়াদী সবজি ও ফুল চাষ করা যায়।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, কৃষিতে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকিকরনের ফলে মানসম্মত বীজ ও প্রযুক্তি ব্যাবহারের কারনে মানসম্মত ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া অল্প জায়গায় বেশি ফসল উৎপাদন করে কৃষক লাভবান হচ্ছে। এই সব প্রযুক্তি ব্যাবহারের মাধ্যমে কৃষকরা সারা বছরই কোন না কোন ফসল উৎপাদন করছে। এতে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে ।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সুত্রধর বলেন, কৃষি আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকি করণের ফলে ফসল উৎপাদনে সময় কম লাগে, উৎপাদন খরচ কম হয়। পাশাপাশি কৃষকেরাও আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে।‘সমলয়’ চাষের এক নতুন পদ্ধতি। সবাই মিলে একটি মাঠে একসঙ্গে একই জাতের ধান একই সময়ে যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করে। বীজতলা থেকে কর্তন, সব প্রক্রিয়া যন্ত্রের সাহায্যে সমসময়ে সম্পাদন করা হয়। এ পদ্ধতিতে ধান আবাদ করতে হলে চারা তৈরি করতে হয় ট্রেতে। ট্রেতে চারা উৎপাদনে জমির অপচয় কম হয়। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। কৃষক তার ফসল একত্রে মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পারে। কারণ, একসঙ্গে চারা রোপণ করায় সব ধান পাকেও একই সময়ে। তখন ধান কাটার মেশিন দিয়ে একই সঙ্গে সব ধান কর্তন ও মাড়াই করা যায়। এসব কারণে কৃষিতে আধুনিক পদ্ধতি ব্যাবহারে চাষে সময়, শ্রম ও খরচ কম লাগে। যার ফলে উৎপাদনও হয় বেশি এবং লাভবান হচ্ছে কৃষকেরা।

সর্বশেষ: