শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সৌন্দর্যের শোভা ছড়িয়ে অভিবাদন জানায় সারি সারি তালগাছ

সৌন্দর্যের শোভা ছড়িয়ে অভিবাদন জানায় সারি সারি তালগাছ

জেলার তাড়াশের নিমগাছি-ভুয়াগাঁতী প্রায় ১৭ কিলোমিটার পিচঢালা মসৃণ সড়কের দুপাশে সারি সারি তালগাছগুলো মনে করে দেয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশুতোষ কবিতার চরণ ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে’ উঁকি মারে আকাশে।

তাল গাছের ছায়ায় প্রাণ জুড়ায়, ক্লান্ত পথিক। সারি সারি তালগাছ শুধু সড়কের সৌন্দর্য বাড়ায়নি, মুগ্ধ করছে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বয়সের মানুষকে।

তাড়াশে সড়কের দুধারে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি তাল গাছ। তাল গাছগুলো যেকোন মানুষের নজর কাড়ে। পথ চলতে যেকোন পথচারী ভাবতেই পারেন ঐতিহাসিক চলনবিলের শস্য ভান্ডার খ্যাত তাড়াশ উপজেলার কালের স্বাক্ষী তালগাছগুলো অভিবাদন দিয়ে নিজেকে স্বাগত অথবা বিদায় জানাচ্ছে। তালগাছের নাম অনুসারে স্থানীয় জনসাধারণ ‘তাল সড়ক’ বলে অভিহিত করে থাকেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তাড়াশের ‘তালসড়ক’ গড়ে ওঠার পেছনে এলাকার মানুষের অবদান রয়েছে। সবচেয়ে বেশি অবদান তাড়াশের গুনী ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের। তিনি আব্দুর রহমান চেয়ারম্যান নামেই পরিচিত। বর্ষায় এই ইউনিয়নের আওতাধীন এ সড়কটির ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য এবং পরিবেশ রক্ষার কথা চিন্তা করে সড়কটির দুপাশে তালগাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

আব্দুর রহমান তাড়াশের মাধাইনগর ইউনিয়নের চেয়াম্যান থাকাকালীন ১৯৭৫-৭৭ সাল মেয়াদে তাড়াশ-নিমগাছি-ভূয়াগাঁতি ১৭ কিলো মিটার রাস্তার দুপাশে ১০ ফুট পর পর প্রায় ১৪ হাজার তালগাছ রোপণ করেন। এ জন্য তিনি তার ইউনিয়নের সীমানা ছাড়িয়েও তাড়াশের হাটে বাজারে চৌকিদার দিয়ে ঢোল সহরত করে মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন।

স্কুলের ছেলে মেয়েরাও এ কাজে এগিয়ে আসে। আশ্বিনের এক সকালে সে সময়ে ৩ হাজার টাকার দুটি খাসি ও ৫ মণ চালের খিচুরী রান্না করে ৩০ খানা পানসি নৌকায় নাচ গানের উৎসবের মধ্য দিয়ে ১৪ হাজার তালবীজ রোপণ করা হয়। সেই তালগাছের বয়স এখন ৪৫ বছর পেরিয়ে গেছে। অযত্নে অবহেলায় অনেক তালগাছ মরেও গেছে। আবার ব্যক্তি উদ্যোগে নতুন গাছ রোপণ করা হয়েছে। বৃক্ষপ্রেমী গাজী আব্দুর রহমান ১৯৭৮ সালে বৃক্ষ রোপণের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান।

তালগাছ দিয়ে গৃহস্থালীর কাজসহ নানা উপকরণ তৈরি করা হয়। লালমাটির অঞ্চল তাড়াশে এখনও মাটির ঘরের প্রচলন রয়েছে। তালগাছ চেরাই করে ঘরের ধর্না, পাইর, বাটাম তৈরি করা হয়। মাটির তৈরি দ্বিতল ঘরের পাটাতনও তৈরি করা হয় তালগাছের তক্তা দিয়ে। তাল গাছের পাতা দিয়ে ঘরের ছাউনি দেয়া হয়।

এছাড়া, এ অঞ্চলের মাটির ঘরগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। শীতকালে গরম এবং গরমকালে ঠান্ডা অনুভূত হয়। তাল গাছের বয়স ৩-৪ বছর হলেই তালপাতা দিয়ে তালপাটি, পাখা, হাতব্যাগ, ঝুড়িব্যাগ সহ নানা উপকরণ তৈরি করা হয়। তালগাছ থেকে পাওয়া যায় রসালো ফল। তাল ফলের রয়েছে ঔষধি গুণ। সুস্বাদু অনেক খাবার তৈরি করা যায় তাল রস থেকে। গ্রীষ্মকালে কচি তালের শাঁস সকলের কাছে প্রিয়।

জনশ্রুতি রয়েছে, তাড়াশের বিনসারা গ্রামে কিংবদন্তি বেহুলা সুন্দরীর জন্ম। এককালে তাড়াশের বিভিন্ন এলাকায় রাজা জমিদারের বসত ছিল। এখনও তাড়াশে অতীতের বহু পুরাকীর্তি ও প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন রয়েছে। বেহুলার বাড়ি এবং জীয়ন কুপ তাড়াশেই দেখা যায়। অসংখ্য পুরোনো মন্দির দালান কোঠা এখনও বিদ্যমান। তাড়াশে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও আদিবাসী জনগণের বসবাস রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ নজরুল একাডেমির আজীবন সদস্য প্রদীপ সাহা বিভিন্ন সময়ে তাড়াশে বেড়াতে যান। তিনি জানান, জেলার অন্যতম সুন্দর উপজেলা তাড়াশ। এই অঞ্চলে প্রবেশপথটা সারি সারি তালগাছ যেমন স্বাগত জানায়, তেমনি বিভিন্ন পুরোনো স্থাপনা ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। সিরাজগঞ্জের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা তাড়াশে এখনও বিদ্যমান রয়েছে। আদিবাসী শ্রেণি ও ক্ষুদ্র বেশ কয়েকটি সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে তাড়াশে। আদিবাসিদের বিভিন্ন উৎসব ও পার্বণে অংশগ্রণ করেছি। তাড়াশে গেলে আসলে মাটির ঘ্রাণ ও শেকড়ের টান অনুভূত হয়।

তাড়াশ প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রভাষক সনাতন দাশ বলেন, সারি সারি তালগাছ তাড়াশকে ভিন্ন আঙ্গিকে পরিচিত করেছে। তাড়াশের গুণী ব্যক্তিত্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান এই ‘তাল সড়ক’র গোড়াপত্তন করেছেন। যিনি ৭০ এর দশকে গ্রামীণ রাস্তায় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার ডাক দিয়েছিলেন।

অথচ পরিতাপের বিষয়, সরকারিভাবে ‘তালসড়ক’ অধিগ্রহণ করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। যার ফলে তাল গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে । তাড়াশ উপজেলা পরিষদে একাধিক মাসিক সভা, আইন-শৃঙ্খলা ও সমন্নয় সভাতে ঐতিহ্যবাহী ‘তালসড়ক’ এ তালগাছ রক্ষার্থে আলোচনা হলেও কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।

তাল গাছ রোপণকারী সাবেক চেয়ারম্যান আ. রহমান (৯২) বলেন, এই তাল সড়কের তালগাছগুলো আর আগের মতো নেই, অনেক তালগাছ মরে গেছে। তাল গাছের সাথে সাথে আমার বয়স বেড়ে যাওয়ায় এগুলোকে আর পরিচর্যা করতে পারছি না। ১৯৯০ সালে তালগাছগুলো সড়কসহ জেলা পরিষদ অধিগ্রহণ করে। কিন্তু গাছগুলো দেখভাল করার ব্যবস্থা নেয়নি আজ পর্যন্ত। এরমধ্যে জেলা পরিষদ ৪৫টি গাছ নিলামে বিক্রিও করে দিয়েছে।

এছাড়া, অনেক তালগাছ এলজিইডি কর্তৃক বিভিন্ন সময় কর্তন করা হয়েছে, কিন্তু তার পরিবর্তে কোন তালগাছ রোপণ করা হয় নাই। ইচ্ছা ছিল তাড়াশে স্থানীয় প্রত্যেক রাস্তায় এভাবে সারিবদ্ধ করে তালগাছ রোপণ করার কিন্তু সরকারি ও বে-সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা না পাওয়ায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি বলে জানান সাবেক ওই চেয়ারম্যান।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর