শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘সলপের ঘোল’ ব্যাপক বিক্রি

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘সলপের ঘোল’ ব্যাপক বিক্রি

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ রেলওয়ে স্টেশনের পাশে তৈরি করা হয় সলপের ঘোল। সুস্বাদু পানীয় হিসেবে কয়েকটি জেলাজুড়ে খ্যাতি পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘সলপের ঘোল’। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ রেলওয়ে স্টেশনের পাশে তৈরি করা হয় বলেই এটি সলপের ঘোল নামে পরিচিত। প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা এখানে ঘোল কিনতে আসেন। বিশেষ করে তপ্ত রোদে তৃষ্ণা মেটাতে এই ঘোলের চাহিদা বাড়তি থাকে।

দাবদাহের এই সময়ে তাই উৎপাদনও বেড়েছে। ১০০ বছরের পুরনো এই ঘোলের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের প্রথম শুক্রবার এখানে আয়োজিত হয় ‘ঘোল উৎসব’। চলতি বছর বিশ্ব দুগ্ধ দিবসে ঢাকার খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঘোল উৎপাদনে অবদান রাখায় উদ্যোক্তা আব্দুল মালেককে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।  

১৯২০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে উল্লাপাড়ার সলপ এলাকায় রেলওয়ে স্টেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯২২ সালে এই স্টেশনকে ঘিরে ঘোল ও দইয়ের ব্যবসা শুরু করেন স্থানীয় সাদেক আলী খান। তাঁর মৃত্যুর পর এই ব্যবসার হাল ধরেন দুই ছেলে আব্দুল খালেক খান ও আব্দুল মালেক খান।    

প্রতিদিন ভোরে আশপাশের গ্রামের খামারিদের কাছ থেকে গরুর দুধ সংগ্রহ করা হয়। এরপর নির্দিষ্ট সময় জ্বাল দেওয়ার পর সেই দুধ সারা রাত পাত্রে রেখে দেওয়া হয়। সকালে জমে থাকা সেই দুধে চিনি ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু পানীয় ঘোল। বর্তমানে প্রতি লিটার ঘোলের দাম ৬০ টাকা। সাধারণত প্রতিদিন এখানে ১০ থেকে ১৫ মণ ঘোল বিক্রি হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রতিদিন এখানে ২০ থেকে ২৫ মণ ঘোল উৎপাদন ও বিক্রি করা হচ্ছে। রোজার মাসে উৎপাদন ও বিক্রি হয় কয়েক গুণ বেশি।

সলপ ঘোল ঘর অ্যান্ড সাদেক খান দই ঘরের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মালেক খান বলেন, এই ব্যবসার সঙ্গে এখন অনেক মানুষ যুক্ত। তাঁদের কাছে কাজ শিখে অনেকে আশপাশেই নিজস্ব দোকান দিয়েছেন।

মালেক খান জানান, এখানকার ঘোল পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা। বর্তমানে তীব্র রোদের কারণে ঘোলের চাহিদা বেড়েছে।

প্রতিদিন দুই ভাইয়ের দোকানে খুচরা ও পাইকারি মিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ মণ ঘোল বিক্রি হয়। আর এখানকার ছোট-বড় সব দোকান মিলিয়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ৫০ মণ ঘোল।

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল জব্বার ও রুহুল আমিন বলেন, একসময় সলপের তৈরি ঘোল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরের বাসিন্দাদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় ছিল। প্রতিদিনের তৈরি ঘোল ট্রেনযোগে কলকাতায় নেওয়া হতো।

সিরাজগঞ্জ শহর থেকে ঘোল কিনতে এসেছিলেন মিজানুর রহমান ও শরিফ মাহমুদ। তাঁরা বললেন, সলপের ঘোলের স্বাদ অতুলনীয়। প্রায়ই তাঁরা বন্ধুরা মিলে এই ঘোল কিনতে আসেন।

তরুণ উদ্যোক্তা ইমরান হোসেন গাজীপুরে সিরাজগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করেন। তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, থ্রিপিস বিক্রির পাশাপাশি সিরাজগঞ্জের মিষ্টি, দই ও সলপের ঘোল বিক্রি করেন তিনি।

ফোনে যোগাযোগ করা হলে ইমরান বলেন, ‘গাজীপুরে সারা বছরই সলপের ঘোলের অনেক চাহিদা থাকে। অল্প দামে ভালো মানের ঘোল পেয়ে গ্রাহকরাও খুশি। বিশেষ করে রমজানে ও দাবদাহের সময় এই ঘোলের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ’

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন গরমের শুরু থেকেই সিরাজগঞ্জ শহরে ভ্যানগাড়িতে ফেরি করে সলপের ঘোল বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, তীব্র গরমে তৃষ্ণা মেটাতে শহরের লোক সমানে সলপের ঘোল খাচ্ছে। ৬০ টাকায় কিনে প্রতি লিটার বিক্রি করেন ৮০ টাকায়। বর্তমানে প্রতিদিন চার-পাঁচ মণ ঘোল বিক্রি করছেন তিনি।         

এই ঘোলের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের প্রথম শুক্রবার সলপে ঘোল উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ উৎসবের উদ্যোক্তা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সিরাজগঞ্জের সাবসেক্টর পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ সরকার। তিনি জানান, সলপের ঘোলের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ১৯৯০ সাল থেকে এই উৎসব শুরু করা হয়। প্রথমে কামারখন্দ উপজেলার ড. সালাম জাহানারা ডিগ্রি কলেজের উদ্যোগে এই উৎসব পালিত হতো। ১৯৯৮ সাল থেকে এটি পালিত হচ্ছে সিরাজগঞ্জ শহরের প্রভাতি সংঘের উদ্যোগে।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর