শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে

সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে

বিনিয়োগে সব ধরনের সুবিধা দিয়ে বড় পরিসরে পরিকল্পিত শিল্পায়নে যেতে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা শুরু হয় এক যুগ আগে। নানা উদ্যোগ আর প্রচেষ্টার পর সেই পথেই এখন হাঁটতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে আটটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আসছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। কারখানা স্থাপন করে উৎপাদনও শুরু করেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। 

বড় পরিসরে পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সেই স্বপ্নযাত্রায় সারাদেশে ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামোর নির্মাণকাজ এখন দৃশ্যমান। এর মধ্যে আটটি অঞ্চলের নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে এবং সেগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। বাকি ২০টি অঞ্চলের বেশিরভাগের নির্মাণকাজও শেষের পথে।

এসব অঞ্চলে এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি মিলিয়ে দুই হাজার ৮২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে দেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব রয়েছে দুই হাজার ৫১৮ কোটি ১৭ লাখ ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব ৩০৯ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

২০১৪ সালে শুরু হয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মূল কাজ। উদ্দেশ্য ছিল ৭৫ হাজার একর জমিতে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করা। এরপর লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে এক লাখ একর নির্ধারণ করা হয়। এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার একরের বেশি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বেজার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনার এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯৩টি অঞ্চল স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ২০১৫ সালে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোংলা ইজেড স্থাপনের মাধ্যমে সরকারের এই বিশেষ উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

বেজা বলছে, সব অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেলে দেশে শিল্পবিপ্লবের যাত্রা শুরু হবে। স্থাপন হবে শত শত শিল্পকারখানা। পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বদলে যাবে দেশের অর্থনীতির চেহারা। সৃষ্টি হবে কমপক্ষে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান। পাশাপাশি ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির পথ সুগম হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪১ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

বাংলাদেশকে বিনিয়োগের হাবে পরিণত করতে দেশি-বিদেশিদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ অঞ্চল। চীন ও জাপানের বিনিয়োগ বাড়াতে নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে নির্মাণ হচ্ছে দুটি অঞ্চল। ভারতের জন্য থাকছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের একটি অংশ ও মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল। সৌদি আরব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে জিটুজি ভিত্তিতে একটি অঞ্চল করার প্রস্তাব দিয়েছে। আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে জিটুজি অঞ্চল স্থাপনের আলোচনা চলছে।

এ পর্যন্ত বেসরকারি ২০টি ইজেডকে প্রাক-যোগ্যতা সনদপত্র দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত সনদ দেওয়া হয়েছে ১১টি অঞ্চলকে। এগুলোর মধ্যে মেঘনা ইজেড, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইজেড, সিটি অর্থনৈতিক ইজেড, আবদুল মোনেম ইজেড, আমান ইজেড, বে-ইজেড, হোসেনদি ইজেড- এই আটটিতে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইস্ট-ওয়েস্ট, সিরাজগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ ইজেডে উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এ অঞ্চলগুলোতে ১৯টি শিল্পকারখানা পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে।

বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন ওই ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সরকারি উদ্যোগে করা হয়েছে ছয়টি। সেগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর, জামালপুর ইকোনমিক জোন, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, মহেশখালী ইকোনমিক জোন-৩ এবং শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোন। বাকিগুলো বেসরকারি এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক রূপান্তরে অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এই রূপান্তর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি ও সহজ করে দেওয়া এবং সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার মাধ্যমে। সেজন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রের সহায়ক নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, বিভিন্ন প্রণোদনা ও ভর্তুকি প্রদানের পাশাপাশি নিজেদের প্রতিযোগিতা সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে। সেবা দেওয়ার গতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে হবে। ব্যবসায়ীরা যেন অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে ঘিরে বেশি আগ্রহী থাকে তা নিশ্চিত করা জরুরি। স্বচ্ছতা ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। এসব নিশ্চিত করা না হলে অঞ্চলগুলো থেকে পুরোপুরি সুফল মিলবে না।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে উৎপাদনের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেসব কাঁচামাল আমদানি করবে সেগুলো পরিবহন সহজ ও নিরাপদ করতে হবে। তাছাড়া নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা বাড়াতে হবে। সবচেয়ে বেশি জরুরি বিষয় হলো প্রতিটি স্তরে সুশাসন নিশ্চিত করা।

৩০ হাজার একরজুড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর :চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড এবং ফেনীর সোনাগাজী এলাকায় গড়ে উঠেছে এই শিল্পনগর। দেশের প্রথম বড় আকারের পরিকল্পিত শিল্পনগর হবে এটি। ৩০ হাজার একর নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অঞ্চলটি, যা হবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিল্পনগর। হাল্ক্কা, মাঝারি ও ভারী পণ্য উৎপাদনের জন্য এই নগরটিকে আবার বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এই শিল্পনগরে ৫০০ একর ভূমিজুড়ে থাকবে বিজিএমইএ গার্মেন্ট ভিলেজ আর বেপজা ইকোনমিক অঞ্চলকে দেওয়া হয়েছে ১১শ একর জমি।

দেশি-বিদেশি ১৪টি প্রতিষ্ঠান শিল্প স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছে এখানে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে দেশি-বিদেশি যে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, তার মধ্যে শুধু এ অঞ্চলেই এসেছে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। প্রাথমিকভাবে প্রায় আট লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এখানে। তবে বেজার প্রত্যাশা, অন্তত ৩০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হবে এখানে। এতে ১৫ লাখ মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

পর্যটনশিল্পের বিকাশেও থাকছে উদ্যোগ :দেশের পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে তিনটি ট্যুরিজম পার্ক স্থাপন করছে বেজা। কক্সবাজারের মহেশখালীতে প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ক এবং টেকনাফে এক হাজার একর জমিতে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ও ২৯১ একর জমিতে নাফ ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করছে বেজা। এসব পার্কে পাঁচতারকা হোটেল, ইকো-ট্যুরিজম, মেরিন অ্যাকুয়ারিয়াম, সি-ক্রুজ, ভাসমান জেটি, শিশু পার্ক, পানির তলদেশে রেস্টুরেন্ট, ভাসমান রেস্টুরেন্ট, ঝুলন্ত সেতুসহ বিনোদনের নানা আকর্ষণীয় স্থাপনা থাকবে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে পার্কগুলোতে।

আসছে বিদেশি বিনিয়োগ :অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ প্রস্তাব আসছে ভারত, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, অস্ট্র্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, জার্মানি ও নরওয়ে থেকে। এই ১৩টি দেশের ৩৮ প্রতিষ্ঠানের ৩০৯ কোটি ৪৩ লাখ ডলার বিনিয়োগ করার প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭০ কোটি ২৭ লাখ ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে চীন থেকে। ৪৯ কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ড। ১৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানা স্থাপনও করেছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসা ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চীনের ৯টি, যুক্তরাজ্যের পাঁচটি, ভারতের চারটি, অস্ট্রেলিয়ার চারটি, জার্মানির দুটি, যুক্তরাষ্ট্রের দুটি, জাপানের দুটি, নেদারল্যান্ডসের দুটি, সিঙ্গাপুরের দুটি। এ ছাড়া নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের একটি করে প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাবের প্রায় ২০ শতাংশ এসেছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ এসেছে পেইন্ট ও কেমিক্যাল খাতে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ভোজ্যতেল পরিশোধন খাত। সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অঞ্চলে। এরপর রয়েছে আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল।

বিনিয়োগকারীর জন্য নানা সুবিধা :অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নানা ধরনের সুবিধা দিচ্ছে সরকার। ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন কাগজপত্রের অনুমোদন ব্যবসায়ীরা বেজার মাধ্যমে পাচ্ছেন। তুলনামূলক কম দামে জমি বরাদ্দ, দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ, শিল্পবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ সুবিধা, ওয়ানস্টপ সার্ভিস (ওএসএস) থেকে বিভিন্ন সংস্থার ২৭ ধরনের ১২৫টি সেবা দেওয়া হচ্ছে। ২০ হাজার দক্ষ জনবল তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। যেখান থেকে বিনিয়োগকারীরা দক্ষ জনবল পাবেন। বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন হারে আয়কর অব্যাহতি, কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা, ভূমি উন্নয়ন কর অব্যাহতি, স্থানীয় সরকারের অন্তর্ভুক্ত কর, স্ট্যাম্প ডিউটি অব্যাহতি ও উৎসে কর অব্যাহতির পাশাপাশি বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা, কাস্টমস প্রক্রিয়ার সহজীকরণ সুবিধা দিচ্ছে সরকার।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর