সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

ডোপামিন ডিটক্স কী? অতিরিক্ত চিন্তার জাল থেকে বেরোতে কি এটি কাজে দেয়

ডোপামিন ডিটক্স কী? অতিরিক্ত চিন্তার জাল থেকে বেরোতে কি এটি কাজে দেয়

সংগৃহীত

ডোপামিন ডিটক্সের ধারণাটি জনপ্রিয় বেশ কয়েক বছর ধরেই। আদতে এটি কী বা কীভাবে জীবনধারায় প্রয়োগ করা যায়, জানেন? অতিরিক্ত চিন্তার জালে জড়িয়ে থাকা মানুষেরা কি আদতেই এই পদ্ধতিতে উপকার পান? এসব বিষয়ে শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ। 

ডোপামিন ডিটক্স কী

ভালো লাগার অনুভূতির সঙ্গে যেসব হরমোন যুক্ত, তার মধ্যে অন্যতম ডোপামিন। অর্থাৎ দেহে ডোপামিনের মাত্রা বাড়লে আমাদের ভালো লাগে।

তবে তাৎক্ষণিকভাবে ভালো লাগার একটা অনুভূতি পেতে অনেকেই এমন কাজে ডুবে থাকেন, যাতে অস্থিরতা বাড়তে পারে। এই বিষয়টা মনের জন্য ক্ষতিকর।

যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রল করা কিংবা তা করতে না পারলেই অস্থির হয়ে পড়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ডোপামিনের ব্যাপারস্যাপার।

একই রকম ব্যাপার যুক্ত থাকে বারবার মুঠোফোনের নোটিফিকেশন দেখা, রিল দেখা, গেম খেলা, চা-কফি খাওয়া কিংবা জাঙ্ক ফুড খাওয়ার সঙ্গেও।

এ ধরনের যেকোনো অভ্যাসে কারও জড়িয়ে পড়ার কারণই হলো, ওই কাজটি থেকে তিনি অনেক বেশি মাত্রায় ডোপামিন পান। তাই ওই কাজটি করতে না পারলেই অস্থির হয়ে পড়েন।

এ ধরনের যেকোনো কাজের প্রতি অতিনির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার পদ্ধতিকেই বলা হয় ডোপামিন ডিটক্স।

যেভাবে করা যায় এই ডিটক্স

ডোপামিন ডিটক্স মানে কিন্তু এই নয় যে দেহ থেকে ডোপামিন বের করে দিতে হবে। সুস্থ থাকতে দেহে ডোপামিনের ভারসাম্য তো ঠিকঠাক থাকতেই হবে। ডোপামিন ডিটক্সের অর্থ হলো আপনি এমন কাজের চর্চা করবেন, যাতে দেহে ডোপামিনের মাত্রা বাড়বে ধীরে ধীরে।

প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটানো, বাগান করা, ধ্যান করা, নীরবতা উপভোগ করা, বই পড়া, মনের কথা লিখে রাখা কিংবা পছন্দের কাজ শেখার মাধ্যমে ধীরে ধীরে ডোপামিন বাড়ে। তাই প্রশান্তিদায়ক আনন্দ পাওয়া যায়। কার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোন কাজটা উপকারে আসবে, তা তিনি নিজেই ভেবে বের করতে পারবেন।

ধাপে ধাপে এগোন

এ ধরনের কাজের অভ্যাস করার কথা বলা যতটা সহজ, করা ততটা সহজ নয়। তাই এগোতে হবে ধাপে ধাপে।

সপ্তাহের একটা দিন দিয়ে আপনি শুরু করতে পারেন। সেদিন আপনি ওসব কাজ করবেন না, যেসবের প্রতি আপনি অতিনির্ভরশীল; অর্থাৎ যেসব কাজে উচ্চমাত্রার ডোপামিন পাওয়া যায়। বরং কাটাবেন প্রশান্তির সময়।

ডিটক্সের জন্য যে ধরনের কাজ করা প্রয়োজন, তেমন কিছুতে সময় কাটান। ঘুরে আসতে পারেন ধারেকাছে কোথাও।

এভাবে অভ্যাস করার পর একসময় আপনি এক বা দুই সপ্তাহ একটানা ডিটক্স করার চর্চা চালিয়ে যেতে পারবেন। এ সময় নতুন একটা কিছু শিখতে শুরু করতে পারেন। পরিবারকে সময় দিতে পারেন।

এভাবে চর্চা করার পর গোটা জীবনধারায় বদল আনার কাজটা শুরু করতে পারবেন আপনি। অতিনির্ভরশীলতার কাজগুলোর জন্য একটা সময়সীমা নির্ধারণ করা তখন সহজ হবে।

যেমন সকালে উঠেই মুঠোফোন না দেখা বা সারা দিনে মাত্র এক ঘণ্টা মুঠোফোন দেখা, লম্বা সময় গেম না খেলা কিংবা সারা দিনে দুবারের বেশি চা-কফি না খাওয়া—এ ধরনের অভ্যাস করতে পারবেন আপনি।

অতিরিক্ত চিন্তা করেন যাঁরা

অনেকেরই থাকে অতিরিক্ত চিন্তা করার প্রবণতা। ‘চিন্তা কোরো না’ বললেই তো আর চিন্তা না করে থাকা যায় না! তবে এই অতিচিন্তার পাল্লায় পড়ে জীবনের নানা দিকে পিছিয়ে পড়তে পারেন তাঁরা। জীবন নিয়ে অনুভব করেন বাড়তি চাপ।

সম্পর্ক বা ক্যারিয়ারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তো বটেই, ছোটখাটো বহু বিষয়েই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন তাঁরা। এটা করা ঠিক হবে কি না, ভবিষ্যতে কী ঘটবে, লোকে কী বলবে—নানান চিন্তার বেড়াজালে আটকে থাকেন। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় তাঁদের জীবনের বহু সুযোগ হারিয়েও যেতে পারে।

এ ধরনের মানুষ ডোপামিন ডিটক্স করলে তাঁদের জন্য এই চিন্তার জাল থেকে বেরোনো সহজ হয়। কারণ, প্রশান্তির চর্চায় মন হয় স্থির। সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন বিষয় বলে মনে হয় না তখন আর। এদিক-ওদিক কিছু একটা ভাবতে থাকা মনটাকে নিয়ন্ত্রণও করতে শেখেন তাঁরা।

সূত্র: প্রথম আলো

সর্বশেষ:

শিরোনাম: