সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

জেন জিদের হাত ধরে বড় হচ্ছে পুরোনো বিলাসী পণ্যের বৈশ্বিক বাজার

জেন জিদের হাত ধরে বড় হচ্ছে পুরোনো বিলাসী পণ্যের বৈশ্বিক বাজার

সংগৃহীত

পুরোনো বিলাসী পণ্যের বৈশ্বিক বাজার দ্রুত বাড়ছে। তার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে আরেকটি বিষয়—অথেনটিকেশন; অর্থাৎ পণ্য আসল না নকল, তা যাচাই করা। এই বিষয়ই এখন নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। এসব পণ্যের ক্রেতাদের বড় একটি অংশ জেন জি ও মিলেনিয়াল প্রজন্ম।

বস্টন কনসালটিং গ্রুপ (বিসিজি) ও বিলাসী পণ্য পুনর্বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম ভেস্তিয়ার কালেকটিভের যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্যাশন ও বিলাসী পণ্যের পুনর্বিক্রয় বাজার প্রতিবছর প্রায় ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে—নতুন পণ্যের বাজারের চেয়ে তিন গুণ দ্রুত। প্রতিবেদনের হিসাবে, বর্তমানে প্রায় ২১০ বিলিয়ন বা ২১ হাজার কোটি ডলারের এই বৈশ্বিক বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৬০ বিলিয়ন বা ৩৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। খবর সিএনবিসি।

২১০ বিলিয়ন বা ২১ হাজার কোটি ডলারের এই বৈশ্বিক বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৬০ বিলিয়ন বা ৩৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে।

ব্যবহৃত বিলাসী পণ্য কেনাবেচার সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে উঠছে বিশ্বাস। দক্ষিণ কোরিয়ার অনলাইন মার্কেটপ্লেস বুনজাংয়ের প্রধান নির্বাহী জে-হোয়া চোই বলেন, ‘নকল পণ্য তৈরির প্রযুক্তি এতটাই নিখুঁত হয়ে গেছে যে অনেক সময় বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো নিজেরাই আসল–নকল বুঝতে ভুল করে। এমনকি অনেকে অজান্তেই নকল পণ্য মেরামত করে দেয়।’

ইন্টারনেটে এমন বহু ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়—কেউ হাজার হাজার ডলার দিয়ে নকল হারমেস ব্যাগ বা যন্ত্রাংশ বদলানো রোলেক্স ঘড়ি কিনেছেন। অনেক নকল এতটাই নিখুঁত যে সেগুলোকে বলা হয় ‘সুপারফেকস’—আসল ব্র্যান্ড পণ্য সরবরাহকারীদের উপকরণই তাতে ব্যবহৃত হয়।

কিন্তু পুনর্বিক্রয়ের বাজার যত বাড়ছে, ততই সত্যতা যাচাইয়ের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। দীর্ঘদিন ধরেই পুরোনো পণ্যের ব্যবসায় প্রচলিত কথা ‘ক্যাভিয়াট এম্পটর’, অর্থাৎ ‘ক্রেতা সাবধান’।

এই সুপারফেকস মোকাবিলায় এখন বিভিন্ন পুনর্বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম যাচাইকরণে বিপুল বিনিয়োগ করছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক অনলাইন মার্কেটপ্লেস ক্যারোসেল এ বছর শহরের কেন্দ্রস্থলে বিলাসী পণ্যের প্রথম দোকান খুলেছে। এখানে বিক্রেতারা তাঁদের পণ্য কোম্পানির নির্ধারিত বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে যাচাই করিয়ে বিক্রির তালিকায় তুলতে পারেন।

ক্যারোসেল লাক্সারির বিক্রয় ও বিপণন পরিচালক ট্রেসর টান সিএনবিসিকে বলেন, ‘আমরা শুধু ব্যাগের উপকরণ নয়—সেলাই, ছাপ, স্ট্যাম্প—সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। এটাই তাঁদের সুনাম উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এই আত্মবিশ্বাস থেকেই আমরা ক্রেতাদের আসল–নকল যাচাইয়ে অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা দিই।’

ক্যারোসেল প্রায় ৫০০ ধরনের পণ্যের তথ্যভান্ডার তৈরি করেছে। দামি পণ্যের ক্ষেত্রে একাধিক ধাপে পরীক্ষা হয়। কোনো পণ্যের সত্যতা নিয়ে সামান্য সন্দেহ থাকলে তা বিক্রির তালিকায় ওঠে না।

একইভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার বুনজাং তৈরি করেছে নিজস্ব যাচাই ব্যবস্থা। তারা চোখের দেখা–নির্ভর প্রচলিত যাচাইয়ের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত করেছে। চোই জানান, তাঁদের এআই লাখ লাখ তথ্যের ভিত্তিতে প্রশিক্ষিত। নতুন জালিয়াতির কৌশলের সঙ্গে এটি খাপ খাইয়ে নিতে পারে। বুনজাং দাবি করছে, তাদের যাচাইয়ের নির্ভুলতা ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ।

বিশ্বাসই বিক্রির চালিকা শক্তি

বুনজাং ও ক্যারোসেল—দুই প্রতিষ্ঠানই বলছে, যাচাইয়ের এই ব্যবস্থার কল্যাণে ব্যবসায় গতি এসেছে। বুনজাংয়ের হিসাবে, বর্তমানে তাদের মোট বার্ষিক ১ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১১০ কোটি ডলারের লেনদেনের এক-চতুর্থাংশের বেশি আসে বিলাসী পণ্য থেকে। শুধু ২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই বিলাসী পণ্যের লেনদেন ও মোট মূল্য ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

ক্যারোসেলের টান নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ না করলেও জানান, ‘বিলাসী পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ খুব বেশি, আমাদের প্রবৃদ্ধিও হচ্ছে দ্রুতগতিতে।’

২০১২ সালে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যাত্রা শুরু করা ক্যারোসেল এখন দোকান চালু করেছে। টান বলেন, ‘যখন কেউ প্ল্যাটফর্মে এক লাখ ডলারের ঘড়ি কেনাবেচা করছে, সেটা আমাদের নজরে আসে।’

যাচাইকরণের পাশাপাশি দোকানটি অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তাও দেয়। টান বলেন, ‘আমাদের পণ্যের দাম হয়তো সব সময় সবচেয়ে কম নয়, কিন্তু আমরা ন্যায্যমূল্য দিতে চাই। কেউ যদি ২০০ ডলার কমে অন্য কোথাও পান, তবু তিনি ভাবেন—আমরা যে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, সেটাই কি বেশি মূল্যবান নয়?’

বিলাসী পণ্যের নতুন প্রজন্ম

বিসিজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবহৃত বিলাসী পণ্য কেনার সবচেয়ে বড় কারণ হলো সাশ্রয়ী মূল্য—৮০ শতাংশ উত্তরদাতা এ কথা বলেছেন।

শুধু টাকার সাশ্রয় নয়, অনেক ক্রেতা এখন বিরল বা বাজারে আর পাওয়া যায় না—এমন পুরোনো পণ্য খোঁজেন। ভেস্তিয়ার কালেকটিভের মার্কেটিং প্রধান সামান্থা ভার্ক বলেন, ‘গত কয়েক বছরের তুলনায় এই বিষয়গুলো এখন আরও শক্তিশালী। এখন ব্যবহৃত পণ্য কেনা ফ্যাশনের অংশ হয়ে গেছে।’

বুনজাংয়ের চোইয়ের ভাষায়, তরুণ ক্রেতারা—বিশেষ করে মিলেনিয়াল (জন্ম আনুমানিক ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে) ও জেন–জি (জন্ম আনুমানিক ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে) প্রজন্ম—সীমিত বাজেটে বিলাসী পণ্য কিনে ব্যবহার করেন, তারপর দ্রুত বিক্রি করে দেন।

সূত্র: প্রথম আলো

সর্বশেষ:

শিরোনাম: