
সংগৃহীত
গিয়ান-বারে সিনড্রোম, সংক্ষেপে জিবিএস, একটা বিরল কিন্তু বিপজ্জনক রোগ। অনেকেই এই রোগের নাম শোনেননি, কিন্তু একে অবহেলা করলে সেটি পক্ষাঘাত (প্যারালাইসিস) পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।
এই রোগে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) ভুল করে স্নায়ুতন্ত্রকে (nerves) আক্রমণ করে। ফলে ধীরে ধীরে শরীরের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যেতে থাকে। কেউ কেউ হাঁটতে পারেন না, খাবার গিলতে পারেন না, এমনকি নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।
সাধারণত কাদের হয়?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে :
- ৩০-৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়
- পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নারীদের তুলনায় একটু বেশি
- যে কোনো বয়সেই এই রোগ হতে পারে
জিবিএসের লক্ষণ
শুরুর দিকে লক্ষণগুলো হালকা হয়, তাই বোঝা মুশকিল। তবে কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো নজরে রাখলে বোঝা যেতে পারে :
- প্রথমে পায়ের পাতা, আঙুল বা গোড়ালিতে ঝিনঝিনে ভাব, অবশতা বা সুই ফোটানোর মতো অনুভূতি
- পায়ের দুর্বলতা উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে — কোমর, হাত, মুখ পর্যন্ত
- হাঁটতে বা সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট হয়
- চিবাতে, গিলতে, কথা বলতে অসুবিধা হয়
- নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, অনেক সময় ভেন্টিলেটরের দরকার হয়
- ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা ও মন খারাপ লাগা হতে পারে
- অনেকে সামনে কিছু থাকলেও দুটো করে দেখতে পান (Double Vision)
সবচেয়ে গুরুতর অবস্থা হলে, রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করাতে হতে পারে। এমন লক্ষণ মানেই জিবিএস, তা নয়। অন্য রোগেও এমন হতে পারে। তাই দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান।
এই রোগ কেন হয়?
জিবিএস হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এটি অনেক সময় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের পরে হতে পারে, যেমন :
- জিকা ভাইরাস
- এপস্টাইন বার ভাইরাস
- এইচআইভি
- হার্পিস
- ফ্লু বা ডায়রিয়ার পরে কিছু ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ
কখনো কখনো ফ্লুর টিকা নেওয়ার পরও এটি হতে পারে, তবে এটা খুবই বিরল।
জিবিএস কীভাবে ধরা পড়ে?
প্রথম দিকে বোঝা কঠিন, তাই ডাক্তাররা কয়েকটি পরীক্ষা করেন :
- রিফ্লেক্স পরীক্ষা – শরীর দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে কি না
- স্নায়ু ও পেশির ইলেকট্রিক্যাল টেস্ট
- রক্ত পরীক্ষা
- ফুসফুসের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা (Spirometry)
- লাম্বার পাংচার – মেরুদণ্ড থেকে তরল নিয়ে পরীক্ষা
চিকিৎসা কীভাবে হয়?
জিবিএস ধরা পড়লে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। পুরোপুরি ভালো হতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
চিকিৎসার মূল দিকগুলো
- ইমিউনোথেরাপি – রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শান্ত করা হয় যেন সেটা স্নায়ুর ক্ষতি না করে
- প্লাজমা এক্সচেঞ্জ বা ইমিউনোগ্লোবুলিন – রক্ত থেকে ক্ষতিকর অ্যান্টিবডি সরানো হয়
- ব্যথা কমানোর ওষুধ
- রক্ত জমাট না বাঁধার জন্য ওষুধ ও কমপ্রেশন স্টকিংস
- ফিজিওথেরাপি – পেশি সচল রাখতে
- শ্বাস নিতে সমস্যা হলে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট
- মানসিক সমস্যা হলে থেরাপি বা কাউন্সেলিং
সুস্থ হওয়া কি সম্ভব?
ভাগ্য ভালো হলে, লক্ষণ দেখা দেওয়ার ৭-১৪ দিনের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করলে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব।
কেউ কেউ ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই উন্নতি দেখাতে পারলেও, কারও কারও ক্ষেত্রে ৬ মাস, ১ বছর বা ৩ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। মনে রাখবেন, দেরি করে চিকিৎসা শুরু করলে কিছু স্থায়ী দুর্বলতা থেকে যেতে পারে। তবে প্রাণঘাতী জটিলতাও (যেমন : শ্বাসকষ্ট, হার্ট অ্যাটাক, ইনফেকশন) হতে পারে, তাই সময়মতো চিকিৎসা খুবই জরুরি।
চিকিৎসার পরেও মাঝে মাঝে চেকআপ করতে হয় যেন রোগ আবার ফিরে না আসে।
সূত্র: কালবেলা