সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সড়কে গাড়ির গতি বেঁধে দিল সরকার

সড়কে গাড়ির গতি বেঁধে দিল সরকার

সংগৃহীত

দেশের সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার। মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেট কার ও বাসের সর্বোচ্চ গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার এবং এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইলের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার।

গত ৫ মে ‘মোটরযানের গতিসীমা সংক্রান্ত নির্দেশিকা, ২০২৪’ জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) এ নির্দেশিকা কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া হয়। গতকাল বিআরটিএর রোড সেফটি বিভাগের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেদিন থেকে প্রজ্ঞাপন হয় সেদিন থেকেই এটি কার্যকর ধরে নেওয়া হয়। তার মানে এটি অলরেডি কার্যকর হয়ে গেছে।

রোড সেফটি বিভাগের পরিচালক বলেন, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী সব সড়কে গাড়ির গতিসীমা বলে দেওয়া হয়েছে। যারা গতিসীমা লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বলেছে, দেশব্যাপী উন্নত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির ফলে সড়ক ও মহাসড়কে দ্রুতগতির যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রায়ই অনাকাক্সিক্ষত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ মোটরযানের অতিরিক্ত গতি ও বেপরোয়া মোটরযান চালানো। দ্রুতগতির কারণে আঘাতের মাত্রাও হয় অত্যধিক।

২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই নতুন এই নির্দেশিকা জারি করা হলো বলে জানানো হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের মতো হালকা যাত্রীবাহী গাড়ি এবং বাস-মিনিবাসের মতো মধ্যম ও ভারী যাত্রীবাহী গাড়ি জাতীয় মহাসড়ক (একমুখী) ও এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার, জাতীয় মহাসড়কে (দ্বিমুখী) ৭০ কিলোমিটার, জেলা সড়কে ৬০ কিলোমিটার, উপজেলা, সিটি করপোরেশনের মধ্য দিয়ে ৪০ কিলোমিটার গতিতে চলবে। এ ছাড়া শহর এলাকার সংকীর্ণ সড়ক ও গ্রামীণ সড়কে এসব যানের গতি ৩০ কিলোমিটার রাখতে হবে। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে এক্সপ্রেসওয়েতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার, জাতীয় মহাসড়কে (একমুখী ও দ্বিমুখী) ও জেলা সড়কে ৫০ কিলোমিটার, উপজেলা, সিটি করপোরেশনের মধ্য দিয়ে ৩০ কিলোমিটার গতি রাখতে হবে। এ ছাড়া শহর এলাকার সংকীর্ণ সড়কে ২০ ও গ্রামীণ সড়কে ৩০ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল চালাতে হবে।

ট্রাক, মিনিট্রাক, কাভার্ডভ্যান ইত্যাদি মালবাহী মোটরযান এবং ট্রেইলারযুক্ত আর্টিকুলেটেড মোটরযান জাতীয় মহাসড়ক (একমুখী) ও এক্সপ্রেসওয়েতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার, জাতীয় মহাসড়কে (দ্বিমুখী) ৪৫ কিলোমিটার, জেলা সড়কে ৪০ কিলোমিটার এবং উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের মধ্য দিয়ে ৩০ কিলোমিটার গতিতে চলবে। এদিকে এক্সপ্রেসওয়ে ও জাতীয় মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। অন্যান্য সড়কে অনুমতি সাপেক্ষে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটারে তিন চাকার গাড়ি চলাচল করতে পারবে। ওপরে উল্লেখ করা গতিসীমা না মানলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নির্দেশনাপত্রে উল্লেখ করা হয়। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এই নিয়ম অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি পরিষেবামূলক যানবাহনের জন্য প্রযোজ্য হবে না। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ গতিসীমার এই বাধ্যবাধকতা শুধুমাত্র স্বাভাবিক অবস্থায় প্রযোজ্য হবে; দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, প্রখর রোদ, অতিরিক্ত বৃষ্টি, ঘনকুয়াশাসহ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণযোগ্য নিরাপদ গতিসীমা প্রযোজ্য হবে; দৃষ্টিসীমা বেশি মাত্রায় কমে গেলে বা একেবারেই দেখা না গেলে মোটরযান চালানো বন্ধ রাখতে হবে।

পাহাড়ি এলাকা, আঁকাবাঁকা সড়ক, বাঁক, ব্রিজ, রেল বা লেভেলক্রসিং, সড়ক সংযোগস্থল, বাজার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের সামনে সাইনে প্রদর্শিত গতিসীমা প্রযোজ্য হবে। মালবাহী মোটরযানসহ অন্যান্য স্বল্পগতির মোটরযান সর্বদা সড়কের বামপাশের লেন দিয়ে চলাচল করবে। শুধুমাত্র ওভারটেক করার সময় ডান লেন ব্যবহার করতে পারবে, কখনো বাম লেন দিয়ে ওভারটেক করা যাবে না। এ নির্দেশিকায় উল্লিখিত গতিসীমা অমান্য করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ: