সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে : প্রধানমন্ত্রী

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে : প্রধানমন্ত্রী

সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির যে আভাস দেখা যাচ্ছে, তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। দেশের অর্থনীতিতে এই সংঘাতের কিছুটা প্রভাব আসতে পারে। তবে সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতা, বাজার ব্যবস্থাপনায় অসামঞ্জস্য এবং বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে পণ্যের সাপ্লাই চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে মূলত ইরান বা পাশের অঞ্চলে রপ্তানিসংশ্লিষ্ট পরিবহন খরচ বাড়তে পারে। এতে পণ্য তৈরি ও সরবরাহের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে রপ্তানিকারকরা কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারেন।

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের আশঙ্কার বিষয়ে দেশের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রত্যেকে যেন মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ঘটনাপ্রবাহের ওপর নজর রাখে এবং এ বিষয়ে নিজ নিজ করণীয় নির্ধারণ করে। সংঘাত দীর্ঘ হলে কোন কোন সেক্টরে প্রভাব পড়তে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো সংঘাত বা সংঘাতের খবর জ্বালানি তেলের বাজারকে প্রভাবিত করে।

এতে পণ্যের জাহাজভাড়া বাড়ে, যা আমদানি ব্যয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। সার আমদানি ব্যয়ে প্রভাব পড়ে। এতে বিকল্প উৎস হিসেবে চীন, মরক্কো, তিউনিশিয়া, কানাডা, রাশিয়া ইত্যাদি দেশের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক আরো জোরদার করা হবে।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবুল কালামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সব সময় সচেষ্ট। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

এতে ভোগ্য পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারের কয়েকটি পণ্য, যেমন—জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্য পণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বাড়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতের ফলে সংকট ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এ পরিস্থিতিতেও আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, টাকার বিনিময়হারের সাম্প্রতিক পতন অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এ ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য শিগগির ক্রলিং পেগ ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় নীতি গ্রহণ করা হবে। নির্ধারিত করিডরভিত্তিক এ ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন রোধ করবে বলে আশা করা যায়। ফলে এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে। মূল্যস্ফীতির ওপর বাহ্যিক প্রভাব কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিলাসদ্রব্য বা অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যে এলসি স্থাপন সহজীকরণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সংসদে সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ নিয়ে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ড. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে টিসিবির কার্যক্রম সম্প্রসারণের প্রস্তাব করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টিসিবিতে যে লোকবল আছে সেটা দিয়ে আমরা মানুষের যে সেবা করে যাচ্ছি, সেটাই যথেষ্ট। আর সাধারণ মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায়, বিশেষ করে যারা সীমিত আয়ের তাদের কষ্ট হচ্ছে। তবে গ্রামে যাঁরা নিজেরা উত্পাদন করতে পারেন বা করছেন তাঁদের খুব একটা কষ্ট নেই, হাহাকারও নেই। এর পরও আমাদের সব সময় প্রচেষ্টা থাকে দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ জন্য যে যে পণ্যের প্রয়োজন সেটা যথাযথভাবে দেশে উত্পাদনের পদক্ষেপ নিয়েছি। পাশাপাশি আমদানিও করে যাচ্ছি। সেটা যত টাকাই লাগুক না কেন, আমরা কিন্তু খরচ করে যাচ্ছি, যেটা আমাদের রিজার্ভেও চাপ ফেলছে। মানুষের কল্যাণটা হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় কথা। সেদিকে আমরা লক্ষ রাখছি।’

তিনি আরো জানান, টিসিবির মাধ্যমে ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় ভর্তুকি মূল্যে এক কোটি পরিবারকে পাঁচ কেজি করে প্রতি মাসে মোট ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল বিতরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এই ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় চালের পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে দই কেজি ডাল এবং দুই কেজি সয়াবিন তেলও বিতরণ করা হচ্ছে।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মুজিবুল হকের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের ট্রাফিক পুলিশ দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে। তাদের ঈদ বা ঝড়-বৃষ্টি-রোদ বলে কিছু নেই। তারা তাদের কর্তব্য পালন করে যায়। কিন্তু মানুষের সচেতনতা না এলে কী করবেন। হেলপার যদি গাড়ি চালায় বা যার লাইসেন্স নেই, সে যে কখন কোন গাড়িতে বসে চালাতে শুরু করে—এটা তো বোঝাও দুষ্কর। আর এভাবে গাড়ি চালাতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটে। এরা নিজেও মরে, যাত্রীদেরও মারে।’

দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। আমরাও গাড়ি কেনার সুযোগ দিয়েছি মানুষকে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সুযোগ দিয়েছি। এখন আমাদের গাড়ির সংখ্যা এত বেশি, কিন্তু সেই তুলনায় ড্রাইভারের সংখ্যা খুব কম। আমরা চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নিচ্ছি। এখন শুধু হাতে-কলমেই ট্রেনিং নয়, একেবারে কম্পিউটারাইজড। ডিজিটাল সিস্টেমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাতে লাইসেন্স দেওয়া হয় সেই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। এই প্রশিক্ষণটা নেওয়া আর যাঁদের ভারী গাড়ি চালানোর কোনো লাইসেন্স নেই তাঁরা যেন সেটা চালাতে না যান। এটা করতে গেলে তা হবে আত্মঘাতী। এই আত্মঘাতী ব্যবস্থা থেকে মানুষকে বিরত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সবাই সচেতন ও সোচ্চার হলে দুর্ঘটনা অনেকটা কমবে। এর পরও বলব—দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। এটা আমাদের দেশ বলে নয়, সারা বিশ্বে অন্য দেশে যান—কী পরিমাণ মানুষ দুর্ঘটনায় মারা যায়। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা সুনির্দিষ্ট করে দুর্ঘটনামুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছি, যার জন্য অনেক এলাকায় দুর্ঘটনা হচ্ছে না। এই ড্রাইভারের ব্যাপারটা নিয়ে সমস্যা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চালকদের দীর্ঘ সময় যাতে একটানা গাড়ি চালাতে না হয়, এ জন্য তাদের বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা করছি। অনেক বিশ্রামাগার তৈরি করা হচ্ছে। এটা হলে চালকরা কিছু স্বস্তি পাবে। সবাইকে বলব, আপনারা চালকদের দিয়ে গাড়ি চালান। সে সময়মতো খেল কি না, বিশ্রাম নিতে পারল কি না, অনেকে সেটা দেখেন না, গাড়ি চালাতে বলে দেন। গাড়ি চলতেই থাকে। আপনি পার্টিতে খেয়ে আসেন, দাওয়াত খেয়ে আসেন, কিন্তু ড্রাইভার খেল কি না সে খবরটা রাখেন না।’ এ বিষয়ে সবাইকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে এবং জনসাধারণ উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার সুফল ভোগ করতে পারছে।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুর রউফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি পর্যালোচনাধীন আছে।

সূত্র: কালের কন্ঠ

সর্বশেষ: