সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি ব্যবস্থাপনায় কৃষি শ্রমিক যাচ্ছেন হাওরে

সরকারি ব্যবস্থাপনায় কৃষি শ্রমিক যাচ্ছেন হাওরে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় হাওর অঞ্চলে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের শ্রমিকের অভাব দেখা দিয়েছে। এজন্য দেশের হাওর অধ্যুষিত সাত জেলায় বোরো ধান কাটার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বোরো ধান কাটার জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছে গেছেন। এসব জেলা থেকে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে সুনামগঞ্জেও প্রয়োজনীয় ধান কাটার শ্রমিক পৌঁছাবেন। কাজেই বোরো ধান কাটা নিয়ে হাওর অঞ্চলের কৃষকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কৃষি শ্রমিকরা যাতে অবাধে হাওর অঞ্চলে যেতে পারেন এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে সহযোগিতা চেয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। 

দেশের উত্তরাঞ্চল বিশেষ করে, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ থেকে কৃষি শ্রমিকরা এসব জেলায় ধান কাটার জন্য গেছেন। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক হাওর অঞ্চলে ধান কাটতে আসেন।

সূত্র জানিয়েছে, আসলে দেশের কোনও অঞ্চলেই ধান কাটার জন্য শ্রমিকের অভাব নেই। কিন্তু দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে আসা শ্রমিকরা স্থানীয় শ্রমিকদের তুলনায় কম মজুরিতে ধান কেটে দেন বলে তাদের কদর বেশি। এ বছর কারোনার প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলা লকডাউন থাকায় উত্তরাঞ্চলের শ্রমিকরা দেশের হাওর অঞ্চলের ধান কাটতে আসতে পারছেন না। এতে এই সংকট তৈরি হয়েছে। তবে এসব জেলা থেকে যাতে শ্রমিকরা ধান কাটার জন্য হাওর অঞ্চলের জেলাগুলোয় অবাধে যাতায়াত করতে পারেন সরকারের পক্ষ থেকে সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘কৃষি শ্রমিকের অভাব না থাকলেও স্থানীয় শ্রমিকরা মজুরি বেশি চায় বলে দেশের উত্তরাঞ্চলের শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল হাওর অঞ্চলের কৃষকরা। কারণ, তারা কম মজুরিতে কাজ করে।’ এক প্রশ্নের জবাবে কৃষি সচিব জানান, ‘ “নিজের ধান নিজে কাটি” এই স্লোগান নিয়ে কিশোরগঞ্জের একজন সংসদ সদস্য (যিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতির ছেলে) ছাত্রলীগের কর্মীদের ধান কাটার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এটি আসলে শ্রমিক সংকটের জন্য নয়।’  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে শ্রমিকরা কয়েকজন মিলে গাড়ি ভাড়া করে যাচ্ছেন। আবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ধান কাটার জন্য শ্রমিকদের সেইসব জেলায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কৃষি শ্রমিকদের পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ি এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের বিষয়ে সতর্কতার জন্য সেসব এলাকার সিভিল সার্জন, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাদের শ্রমিকদের পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। এসব শ্রমিকদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করতেও বলা হয়েছে। চলতি এপ্রিলের ৯ তারিখ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ-১ অধিশাখা থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে লেখা এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অধিশাখার উপসচিব মো. জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত ছুটিকালীন সময়ে বাস ও পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় দূরদূরান্ত থেকে কৃষি শ্রমিকদের হাওর অঞ্চলে গমনে অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আগ্রহী কৃষি শ্রমিকদের চিহ্নিত করে গমানাগমনের বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, হাওর অঞ্চলে গমনে আগ্রহী কৃষি শ্রমিকদেরকে সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কর্তৃক করোনাভাইরাস বিষয়ে প্রাথমিক স্ক্যানিং করে অনুমোদিত নির্ধারিত বাস ও পরিবহনযোগে গমনাগমনে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, হাওড়ে ধান কাটার আনুমানিক সময় ১৪ থেকে ৩০ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, কৃষি শ্রমিকদের হাওর অঞ্চলে গমানগমন নির্বিঘ্ন করা এবং তাদের সেখানে অবস্থান কালের সময় (১৪ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত) নিরাপত্তা প্রদান, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করাসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনদেরও অনুরোধ জানানো যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে শ্রমিকরা যাতে হাওর অধ্যুষিত জেলাগুলোয় যেতে পারেন সেজন্য জেলা প্রশাসক এবং কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকরা নিজেরা ব্যবস্থা করতে পারলে সরকার সেক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। করোনাভাইরাসের দিকটা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তারা শ্রমিকদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ যা যা লাগবে তার ব্যবস্থা করবে।

জানা গেছে, হাওর অঞ্চলে দ্রুত ধান কেটে নেওয়ার জন্য মাইকিং করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ধান কাটা ও মাড়াইয়ের শ্রমিকের অভাবে চিন্তার মধ্যে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ভারি বৃষ্টি ও আগাম বন্যার আশঙ্কা করা হয়েছে বিধায় কৃষকরা বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

জানতে চাইলে নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুড়ী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কৃষক মোতালেব হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘উত্তরাঞ্চল থেকে আসা শ্রমিক পাওয়া না গেলে ধান কাটতে পারবো না। স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে আমরা হাওড়ের ধান কাটাই না, কারণ তাদের মজুরি বেশি। ইতোমধ্যেই সরকারের প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে উত্তরাঞ্চল থেকে শ্রমিকদের আনার ব্যবস্থা করছেন।’ ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারি বিধি-নিষেধ অনুসরণ করেই যাতে শ্রমিকরা ধান কাটতে পারেন সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে চলতি মৌসুমে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য কেনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। চলতি বোরো মৌসুমে আগের বছরের তুলনায় বেশি চাল, ধান, আতপ চাল ও গমসহ প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টনের খাদ্য সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (২০ এপ্রিল) ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ বছর ৮ লাখ মেট্রিক ধান, ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল এবং ৮০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ মোট ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমরা সংগ্রহ করে রাখবো যাতে ভবিষ্যতে অভাব না হয়।’

এদিকে বাংলাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুসারে এবার চলতি মৌসুমে সারা দেশের ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ফসলের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরের সাত জেলা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবাদ করা জমির পরিমাণ নয় লাখ ৩৬ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে শুধু হাওরেই চার লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ফসলের চাষ করা হয়েছে। সারাদেশে এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দুই কোটি চার লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। অধিদফতরের হিসাব মতে, হাওর অঞ্চলে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ এই লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ ভাগের জোগান দেয় হাওর অঞ্চলের বোরো ধান।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

সিরাজগঞ্জ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসছে জুনে
বেলকুচিতে জামান টেক্সটাইল পরিদর্শনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী
রায়গঞ্জে কোকোডাস্ট পদ্ধতিতে ট্রেতে চারা উৎপাদন
সিরাজগঞ্জের নলকায় চায়না দুয়ারী জাল জব্দ, আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস
সিরাজগঞ্জে প্রতিবন্ধীদের আর্থিক অনুদান ও ট্রাইসাইকেল বিতরণ
চুরি প্রতিরোধে কাজিপুর থানা পুলিশের মতবিনিময় সভা
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে আজ
শাহজাদপুরে ছাত্রলীগের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ ও শরবত বিতরন
সিরাজগঞ্জে মে দিবসের আলোচনা সভায় হেনরী এমপি
গরমে সুপেয় পানি ও শরবত বিতরন করলেন সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ
বেলকুচি পৌর ছাত্রলীগের উদ্যোগে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি
কামারখন্দে শ্রমিকদের সুপেয় পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেন যুবলীগ