পাকিস্তানিদের শোষণ বঞ্চনা নিপীড়নের প্রতিবাদে একটি উন্নত সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলার আশায় ১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের তিনশ বছরের শাসন-শোষণে প্রায় নিঃশেষিত এই ভূ-খণ্ড একদিন সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির সূচকে ঈর্ষণীয় সাফল্য বয়ে নিয়ে আসবে তা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। কিন্তু সেই দুঃসাধ্যকে বাস্তবে পরিণত করেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে সামাজিক অর্থনৈতিক সকল সূচকেই বিশ্বের জন্য রোল মডেল বাংলাদেশ।
গত ১৬ বছরে বিশ্বে যেখানে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে ৫ দশমিক ৫ হারে, সেখানে একই সময়ে বাংলাদেশে গড় আয়ু বেড়েছে ৭ দশমিক ১৭ হারে। ২০০০ সালে বাংলাদেশের গড় আয়ু ছিল ৬৫ দশমিক ৩২। এর মধ্যে নারীর গড় আয়ু ছিল ৬৫ দশমিক ৬৮ এবং পুরুষের গড় আয়ু ছিল ৬৪ দশমিক ২৯। গত এক দশকে গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু মৃত্যুর হার এবং লিঙ্গ সমতার মতো সামাজিক উন্নয়ন সূচকের অগ্রগতির জন্য উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। এরই ফলাফল হিসেবে বাংলাদেশের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭২.৫৮ বছরে। বিগত ১৬ বছরে বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু সাড়ে পাঁচ বছর বাড়লেও একই সময়ে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে সাত বছরেরও বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান ২০১৯-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে ২০০০ সালের পর ১৬ বছরে মানুষের গড় আয়ু সাড়ে পাঁচ বছর বেড়ে ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে মানুষের পূর্ণ স্বাস্থ্যের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে মানুষের উপার্জন। ফলে উন্নত ও অনুন্নত দেশে মানুষের গড় আয়ুর ব্যবধান ১৮ দশমিক ১ বছর। গড় আয়ুর ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের পার্থক্যও রয়েছে।
স্বাধীনতা লাভের আগে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছরের কম। সে সময় দেশের জনসংখ্যার এক বড় অংশকেই অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হতো। স্বাধীনতার পর দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫ বছর। এটি সম্ভব হয়েছে দুর্ভিক্ষ ও মঙ্গাকে ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করা, দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি গ্রহণ সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত করা এবং চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের কারণে। শুধু গড় আয়ুই নয় স্বাস্থ্য পরিচর্যার কারণে দেশে শিশু ও প্রসূতি মৃত্যুর হার ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ