রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষকতা ছেড়ে খামারেই সফল খানসামার জয়নাল

শিক্ষকতা ছেড়ে খামারেই সফল খানসামার জয়নাল

মহান পেশা হচ্ছে শিক্ষকতা। এ মহান পেশাকে ছেড়ে  খামার করেই সফল হয়েছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের ছাতিয়ানগড় গ্রামের জয়নাল আবেদীন (৬০)। তিনি শখের বসে প্রথমে মাত্র ৩০০ ব্রয়লার মুরগী নিয়ে খামারের যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর খামারে ১০ সহস্রাধিক বয়লার ও লেয়ার মুরগী রয়েছে। 

খামার করেই তিনি সফলতা লাভ করেছেন। তিনি শুধু মুরগীর খামারই নয়, মাছ চাষ ও গরুর খামারও করেছেন। মাছ, মুরগি ও গরুর খামার করে উপজেলার সবচেয়ে বড় সমন্বিত খামারি তিনি। জয়নাল আবেদীন কৃষিক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০১০ সালে পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর পুরষ্কারও। তিনি বাড়ির পাশে অন্তত ৪ একর জমিতে জয়নাল এগ্রো ফার্ম লিমিটেড নামে একটি সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। তাঁর খামারে রয়েছে-ছয়টি মুরগীর ও তিনটি গরুর সেড। খামারের পাশে প্রায় তিন একর জমিতে নেপিয়ার, পাচং ও জারা ঘাস বুনেছেন। তিনি এসব ঘাসই খাওয়ান খামারের গরুকে। মুরগী ও গরুর খামারের পাশাপাশি তার তিনটি পুকুর রয়েছে। এসব পুকুরে তিনি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে আমিষের ঘাটতি হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে ২০ জন লোকের। তাঁর খামারে কাজ করে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়াসহ সংসারের খরচও চালাতে পারছেন।

জয়নাল আবেদীন জানান, তিনিই গ্রামের সফল খামারী। তিনিই প্রথম গ্রামে মুরগী ও গরুর খামার গড়ে তোলেন এবং বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ শুরু করেন। তিনি শখের বসে জমানো মাত্র ২০০ টাকা দিয়ে ৫০টি হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করে পালন করেন। এগুলো পালনে সফল হলে আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি বয়লার মুরগির খামার করার। আমি ১৯৮৮ সালে ৩০০টি বয়লার মুরগি দিয়ে প্রথম খামারের যাত্রা শুরু করি। সেই থেকে আস্তে আস্তে আমার এ পর্যন্ত আসা।

তিনি আরো জানান, ডেইরি খামারে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন হয় সেই বর্জ্যকে কাজে লাগানোর জন্য তিনি কিছু প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। এই বর্জ্য থেকে তিনি জৈব সার তৈরির চেষ্টা করছেন। এছাড়াও গরুর গোবর দিয়ে বায়োগ্যাস উৎপাদন করার ব্যবস্থা করেছেন। যা রান্নাসহ ফার্মের কাজে ব্যবহার করা হবে বলে তিনি জানান।

তরুণ-যুবকদের স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে জয়নাল আবেদীনকে উদাহরণ মনে করেন ওই এলাকার প্রবীণরা। তারা বলেন, চাকরির পিছনে হন্যে হয়ে না ছুটে যুবকদের স্বাবলম্বী হতে জয়নাল আবেদীনকে অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। সমন্বিত খামার করেই তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। দেশের অর্থনীতিতে তিনি অবদান রাখছেন। পাশাপাশি আমিষের অভাব পূরণেও তাঁর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে তার এই সাফল্য দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক খামার ব্যবস্থাপনায় আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে চান।

জয়নাল আবেদীন একজন সফল খামারি হিসেবে শিক্ষিত বেকারদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা ভাবছেন একজন সফল খামারি বা উদ্যোক্তা হবেন তারা ধৈর্য্যধারণ করে লেগে থাকবেন, তাহলে সফলতা আসবেই। এছাড়া চাকরির পিছনে হন্যে হয়ে না ছুটে তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ: