শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

জারুয়া মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সাফল্য

জারুয়া মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সাফল্য

দেখতে অনেকটা বাটা মাছের মতো। নাম জারুয়া মাছ। মাছটির জাত সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবস্থিত মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্বাদুপানি উপকেন্দ্র। এখানকার বিজ্ঞানীরা ২০১৮ সাল থেকে গবেষণা চালিয়ে জারুয়া মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সাফল্য দেখিয়েছেন। এর আগে এ কেন্দ্রে ট্যাংরা ও গুতুম মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সাফল্য আসে।

শনিবার সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়কের পাশে স্বাদুপানি উপকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বিজ্ঞানীরা উপকেন্দ্রের জলাধার ও গবেষণাগারে জারুয়া মাছের নতুন উদ্ভাবিত জাত নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আজহার আলী বলেন, ‘মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশে ছোট মাছের অবদান ৩০–৩৫ শতাংশ। আমরা বেশ কিছু দেশি মাছের উৎপাদন বাড়াতে গবেষণা অব্যাহত রেখেছি। সে ধারাবাহিকতায় জারুয়া মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও সংযোজন মাছের চাষাবাদ বাড়াতে সহায়ক হবে।’ তিনি জানান, জারুয়া মাছটি বাংলাদেশে মিঠাপানির মাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Chagunius chagunio। উত্তরাঞ্চলে কেউ কেউ এ মাছকে ‘উত্তি’ মাছ বলে ডাকেন। মিঠাপানির জলাশয়ের তলদেশ ও গভীর স্বচ্ছ পানিতে মাছটির আবাসস্থল।

উপকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, জারুয়া মাছ নিয়ে শুরুতে গবেষণা চলে উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আজহার আলীর নেতৃত্বে। তাঁকে সহযোগিতা করেন জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালিহা হোসেন, মো. ইশতিয়াক হায়দার, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শ্রীবাস কুমার সাহা ও তাসরিক মাহমুদ। সাফল্যের জন্য মহাপরিচালক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। চলতি মাসে মাছটির কৃত্রিম প্রজনন ও সাফল্য তুলে ধরে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি মহাপরিচালকের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একসময় জারুয়া মাছের প্রাচুর্য ছিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (ডিজি) ইয়াহিয়া মাহমুদ। তিনি বলেন, ক্রমেই জারুয়া মাছ বিলুপ্ত হতে থাকে। মাছটি উত্তরাঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু জলাশয়ের দূষণ, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, নদীতে বানা ও কারেন্ট জাল ব্যবহারের কারণে মাছটির প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্রে মাছটি নিয়ে গবেষণা করা হয়। ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত গবেষণায় মাছটির কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনের কলাকৌশলে সাফল্য পাওয়া গেছে।

গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জারুয়া মাছের প্রজননকাল জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। প্রজনন মৌসুমের দু–এক মাস আগে নদ-নদী ও বিল থেকে সুস্থ সবল ও রোগমুক্ত এক–দেড় শ গ্রাম ওজনের মাছ সংগ্রহ করা হয়, যা উপকেন্দ্রের প্রস্তুত করা পুকুরে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখানে দেড় শ জারুয়া মাছের সঙ্গে দুটি কাতলা, দুটি সিলভার কার্প, তিনটি রুই ও তিনটি রাজপুঁটি ছেড়ে এক মাস প্রতিপালন করা হয়। পরে প্রজনন উপযোগী মা মাছ (ব্রড) তৈরি করা হয়। এসব মাছকে ৩০ শতাংশ সম্পূরক খাদ্য দেওয়া হয়। এরপর পুকুরের তাপমাত্রা, পানির গুণাগুণ, দ্রবীভূত অক্সিজেন ও মোট ক্ষারকের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করা হয়। পানিতে অক্সিজেন বাড়াতে পুকুরে এয়ার রেডিয়েটর স্থাপন করা হয়। সংরক্ষণের ১৫ দিন পর পর জাল টেনে পর্যবেক্ষণ করা হয় মাছের দেহের বৃদ্ধি ও পরিপক্বতা। একটি পরিপক্ক ১০০ গ্রাম দৈহিক ওজনের জারুয়া মাছে ১২ থেকে ২৩০০০ হাজার পর্যন্ত ডিম পাওয়া যায়। এসব ডিম ৮৪ থেকে ১০৯ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে পাওয়া যায় পোনা, যা বড় হতে সাত–আট মাস সময় লাগে।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ: