বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

এনায়েতপুরে নববর্ষে কাটা হলো পৃথিবীর বৃহৎ সন্দেশ

এনায়েতপুরে নববর্ষে কাটা হলো পৃথিবীর বৃহৎ সন্দেশ

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখ সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে সুবিধা বঞ্চিত অসহায় মানুষের সম্মানে আয়োজন করা হয়েছিল পৃথিবীর বৃহৎ সন্দেশ। দেশের প্রথম টেরিষ্টেরিয়াল টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের ২০ বছর পদার্পন ও বাংলা নববর্ষ বরণে তৈরী করা হয়েছিল ৫০ কেজি ওজনের সন্দেশ। রোববার দুপুরে এনায়েতপুর ইসলামীয়া উচ্চ বিদ্যালয় চত্তরে সমাজের সুবিধা বঞ্চিতদের নিয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে এই সন্দেশ কাটা হয়। বৃহৎ সন্দেশের সাথে ইতিহাসের সাক্ষী হতে ঢাকা, বগুড়া, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত সহ বিদেশ হতেও উৎসাহী মানুষ অংশ নেয়। আপ্পায়ন করা হয় দেড় হাজার মানুষকে।

 অতিথি পরায়ন ভোজন রসিক বাঙালীর খাবার-দাবার নিয়ে অতীত আমল হতেই কৌতুহলী। খাবারের মধ্যে মিষ্টান্ন হচ্ছে সবার আগ্রহের শীর্ষ স্থানে। যেকোন আচার-অনুষ্ঠানে খাবার শেষে একটু খানী মিষ্টি মুখ না করলে আয়োজনরই যেন পুর্নতা পায়না। তাই পায়েস, দই, হরেক রকম মিষ্টি, জিলাপী, সন্দেশ না হলেই যেন নয়। ঐতিহ্যের বাংলা নববর্ষ সেই ধারাই রক্ষা করে চলছে বাঙালীদের হৃদয় পটে। পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষে বাঙালীর জাতির জন্মদিনে সর্বজনীন এই আয়োজন মিষ্টি হচ্ছে অত্যাবর্শকীয়। এবার বাংলা নববর্ষ উদযাপন এবং দেশের প্রথম টেরিষ্টেরিয়াল টেলিভিশন একুশেটিভির ২০ বছরে পদার্পন উপলক্ষে পৃথিবীর বৃহৎ সন্দেশের আয়োজন করা হয়েছিল। ৩ হাত লম্বা, সোয়া ২ হাত প্রস্ত ও সাড়ে ৩ ইঞ্চি উচ্চতার সন্দেশটি দেখতে ১ দিন আগে থেকেই উৎসুক জনতা ভীড় করে।

চ্যানেলটির সেবা সংগঠন একুশে ফোরামের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ইসলামীয়া উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরুতে ৫০ কেজি ওজনের আকাঙ্খিত এই ছানার সন্দেশটি কাটা হয়। এর আগে সন্দেশটি ৮ জন ছাত্র মিলে অনুষ্ঠান স্থলে নিয়ে আসা মাত্র একনজর দেখতে উপস্থিত সবাই হুমরী খেয়ে পড়ে।  ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, তাঁত ও ভ্যান শ্রমিক, এতিম শিশু, প্রতিবন্ধী এবং সমাজের বিভিন্ন স্থরের সুবিধা বঞ্চিত দেড় সহ¯্রাদিক মানুষের অংশ গ্রহনে এই মিষ্টান্নটি কাটা হয়। তখন উপস্থিত সকলের মুহুমুহু করতালীতে মুখোরিত হয়ে ওঠে এলাকা। সমকালের এই ইতিহাসের সাক্ষীকে ধারণ করতে সকলেই মোবাইল সেলফীতে উৎসাহী হয়ে ওঠে। এর আগে তা কাটবার জন্য সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের বাড়ি হতে আনা হয় জাপান হতে সংগ্রহীত সুবিশাল সামুরাই।

তখন ইটিভির প্রতিনিধি স্বপন মির্জার ব্যবস্থাপনায় একুশে ফোরামের উদ্যোগে দিন ব্যাপী এ অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি আখতারুজ্জামান তালুকদারের সভাপতিত্বে বিকেএমইএ-এর সাবেক পরিচালক আলহাজ্ব শেখ আব্দুস ছালাম, সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম তালুকদার, বাংলাদেশ এ্যাষ্ট্রেনমিক্যাল সোসাইটির সহ-সভাপতি এফ.আর সরকার, পৌর মেয়র আশানুর বিশ্বাস, বগুড়া জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মিলন সাহা, সাংবাদিক নেতা ফেরদৌস হাসান, ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম সিরাজ, হাজী সুলতান মাহমুদ, ফোরামের সাধারন সম্পাদক ফজলুল হক ডনু, প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 
অতিথিরা তাদের শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ছোট বেলা হতেই আমরা কয়েকটি সন্দেশ এক সাথে গিলে খেয়েছি। ৫০ কেজি ওজনের সন্দেশ হবে তা কখনো ভাবিনি। এ সন্দেশটি দেড় হাজার মানুষ খেয়েছে। অনেকেই উচ্চবিত্তদের জন্য বড় বড় কেকের আয়োজন করে। এ আয়োজনটি ব্যতিক্রম। সমাজের অসহায় মানুষের জন্য তা আয়োজন করা হয়েছে। তাই আমরা বৃহৎ এই সন্দেশ আয়োজনে উপস্থিত থাকতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরাও পৃথিবীর বৃহৎ সন্দেশের সাথে সাক্ষী হয়ে রইলাম।

অনুষ্ঠানে আসা প্রখ্যাত জ্যোতিবিজ্ঞানী এফ.আর সরকার, টেক্সজেন গ্রুপের এমডি আলহাজ্ব শেখ আব্দুস ছালাম, ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম সিরাজ জানান, আমরা শুনেছি। উপস্থিত হয়ে সন্দেশটির আকৃতির প্রমান পেয়ে আসলেই বিষ্মিত হয়েছে। সন্দেশ যে অনেক বড় হয়, তারই প্রমান দিয়েছে স্বপন মির্জা তথা একুশে ফোরাম। এটা শুধু সিরাজগঞ্জের জন্য নয় সাড়া বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা চাই এটা যেন গিনিস ওয়াল্ড রেকর্ড বুকে স্থান দেয়া হয়।

এদিকে এই অনুষ্ঠান বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন এবং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক প্রচার হওয়ায় টাঙ্গাইল, বগুড়া, ঢাকা, সমগ্র জেলা সহ মালয়শিয়া হতেও উৎসাহীরা অংশ গ্রহন করে। এ ব্যাপারে মালয়শিয়া প্রবাসী শুকুর আলী জানান, এক মাস পরে আমার দেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু বড় সন্দেশের আয়োজনে শরীক হতে ২দিন আগেই উপস্থিত হয়েছি। আসলেই আমি মুগ্ধ। 
বাঘাবাড়ি হতে আসা স্থানীয় কলেজের প্রভাষক সফিকুল ইসলাম স্বপন, মাওঃ সেলিম রেজা, চৌহালীর শিক্ষক ইদ্রিস আলী, শাহজাদপুরের জামিরতার রায়হান আলী ও আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, বৈশাখী আয়োজনে ইটিভির জন্মদিনে আমরা আসলেই হতভাগ হয়েছি। যে সন্দেশ কয়েকটি খাওয়া একজনের জন্য কোন ব্যাপারই নয়। সেই সন্দেশ ৮/৯ জন কাধে করে নিয়ে আসলো। হতভাগ হওয়া ছাড়া আসলেই কোন উপায় ছিলনা।

আয়োজক একুশে ফোরামের সভাপতি আখতারুজ্জামান তালুকদার, সাধারন সম্পাদক ফজলুল হক ডনু ও সমাজ-সেবক শওকত আলী জানান, ইটিভির প্রতিনিধি স্বপন মির্জা জানান, ৫০ কেজি ওজনের সন্দেশে তৈরীতে গাভীর ১০ মন খাটি দুধ দিয়ে তৈরী হয়েছে। এনায়েতপুর, শাহজাদপুর উপজেলার ঘোষদেশ সম্মিলিত বোর্ড এই বৃহৎ সন্দেশটি তৈরী করেছে। রণি মিষ্টান্ন ভান্ডারে  আমাদের এজন্য ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফেসবুক সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে বলে সাড়া দেশ জুড়েই সন্দেশটি নিয়ে সবার মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। তারা আরো জানান, ২০১২ সালে চেন্নাই কিংসকে হারিয়ে কলকাতা নাইটরাইডার্স চ্যাম্পিয়ান হবার পরে ইডেন গার্ডেন্সে টিম শাহরুখ খান কলকাতার বিখ্যাত নকুড়ের তৈরী ৩৪ কেজি ওজনের সন্দেশ কেটেছিল। তখন রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিল। এটাই এ যাবৎকালের বড় সন্দেশ ছিল। এখন সে রেকর্ড ভেঙ্গে আমরা পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ ৫০ কেজি ওজনের সন্দেশ তৈরী করেছি। তবে আমাদের এই আয়োজনটি সমাজের সাধারন মানুষের জন্য করতে পেরে আমরা খুবই উৎসাহিত ও আনন্দিত। আমরা চাই এটা বিশ্ব ব্যাপী স্বীকৃতির জন্য যেন গিনিস ওয়াল্ড রেকর্ড বুকে স্থান দেয়া হয়।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ