শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জে সরিষা ও মধুর সমন্বিত চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা

সিরাজগঞ্জে সরিষা ও মধুর সমন্বিত চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা

সিরাজগঞ্জে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের হলুদ সমারোহ। এসব সরিষা ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছির ঝাঁক। সংগৃহীত মধু নিয়ে জমা করছে খেতের পাশেই স্থাপিত মৌ-বাক্সে। এতে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন সরিষার উৎপাদন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মধুর উৎপাদনও। সরিষা ও মধুর সমন্বিত চাষে লাভবান হচ্ছেন সরিষা ও মৌচাষীরা। আর সমন্বিত চাষে লাভবান হওয়ায় জেলায় প্রতি বছরই সরিষা ও মধু উৎপাদন বাড়ছে।

জেলা কৃষি বিভাগের দাবি, কৃষককে সরকারিভাবে বীজ ও সার সহায়তা দেয়ার কারণে এবার জেলার পতিত জমিতেও সরিষার চাষ হয়েছে। বীজ সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি কৃষি খেতের পাশে মৌচাষীদের মৌবাক্স স্থাপনের সুযোগ দিতেও তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এতে পরাগায়ন ভালো হওয়ায় চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলন সে সঙ্গে মধুর উৎপাদনও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

জেলায় এ বছর ৬৩ হাজার ৫০০ হেক্টর শস্য খেতে ২৯৭ টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে মৌ-বাক্স বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলায় ১০১ কৃষক এসব মৌ-বাক্স বসিয়েছেন।

এরই মধ্যে জেলায় প্রায় ৫০ টন মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ লাভজনক হওয়ায় চাষীদেরসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রাকৃতিক এ মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছেন মৌ-চাষী ও কৃষকরা।

উল্লাপাড়া বাঙ্গালা ইউনিয়নের ধরাইল গ্রামে মাঠে বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন চাষী মঞ্জু ইসলাম। তিনি জানান, প্রায় ১০ বছর হলো মধুর ব্যবসা করছেন। সরিষা খেত থেকে বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ  করা হয়। ঋণ করে প্রায় ২৫ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে মৌ-খামারির কাজে নেমেছেন। ২১০টি বাক্স বসিয়েছেন তারা। এসব বাক্স থেকে প্রতি আট দিনে গড়ে প্রায় ৭০০ কেজি  মধু পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘সহজ শর্তে ঋণ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে জেলার মধু থেকে ব্যাপক রাজস্ব আয় সম্ভব।’

জেলা মৌচাষী মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, সরিষার মধু স্বাদে ভালো, চাহিদাও ভালো। বিক্রি করতে তেমন সমস্যা হয় না। গত বছরের তুলনায় মধুর দাম এবার কম। গত বছর প্রতি মণ মধু বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৮-৯ হাজার টাকা দরে। আর এ বছর প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকা দরে। তবে মৌ-খামারিরা আশায় আছেন হয়তো মধুর দাম বাড়বে। না হলে তারা লোকসানে পড়বেন। তিনি মধু প্রক্রিয়াকরণ এবং আধুনিকভাবে সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে সরকারি সহযোগিতার দাবি জানান। এর ফলে চাষীরা অধিক লাভবান হবে বলে তিনি মনে করেন।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর  বলেন, সরিষার মাঠে মৌচাষে কৃষক ও মৌচাষী উভয়ই সমানভাবে লাভবান হন। কারণ সরিষা ফুলে মৌমাছি বসে এর পরাগায়ন ঘটায়। ফলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সার ও বীজ প্রণোদনা দেয়ায় জেলার সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর মধু সংগ্রহ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন জেলায় সরিষার পাশাপাশি মৌচাষীর সংখ্যা বাড়ছে। জেলায় এ মৌসুমে সরিষা ফুল থেকে ২৯৭ টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করছি।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ: