
সংগৃহীত
দিন দিন জীবনের গতি যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মানসিক চাপ, স্মৃতিভ্রংশ, মনোযোগের ঘাটতি আর তথাকথিত ‘ব্রেইন ফগ’। সারাক্ষণ মোবাইল, কাজের দৌড়ঝাঁপ, ডিজিটাল ওভারলোড— সব মিলিয়ে মাথা যেন সারাক্ষণ ভারী লাগে। অথচ সুস্থ ও তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক ধরে রাখার গোপন রহস্যটা খুব কাছেই, নিয়মিত ব্যায়াম। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিদিন ঘাম ঝরানো শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্ককেও করে আরও ধারালো। তাদের ভাষ্য, ব্যায়ামই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর ‘ব্রেইন বুস্টার’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি চার প্রাপ্তবয়স্কর একজন নিয়মিত ব্যায়াম করেন না। এতে শুধু শরীর নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি হয়। এই প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. ওয়েন্ডি সুজুকি জানিয়েছেন, ব্যায়াম সরাসরি মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যক্ষমতা বদলে দিতে পারে। এমনকি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি এবং মনোযোগ ও মানসিক স্থিতি রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
মস্তিষ্কের ব্যায়ামের পেছনের বিজ্ঞান
ড. ওয়েন্ডি সুজুকির গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ৪৫ মিনিট করে ব্যায়াম করলেই মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন বাড়ে। এর ফলে হিপ্পোক্যাম্পাস নামের অংশটি সক্রিয় হয়ে ওঠে; যা শেখা ও স্মৃতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত শরীরচর্চায় এই অংশটি আরও শক্তিশালী ও পুরু হয়, ফলে চিন্তা হয় পরিষ্কার, স্মৃতি হয় দ্রুত এবং মনোযোগও থাকে স্থায়ী।
‘দ্য ডায়েরি অব আ সিইও’ পডকাস্টে তিনি বলেন, ‘ঘামের প্রতিটি বিন্দু আসলে মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায়।’ তার পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা নিয়মিত ব্যায়াম করার পর স্মৃতি, ফোকাস এবং মেজাজে চমকপ্রদ উন্নতি দেখিয়েছেন।
সপ্তাহে কতটা ব্যায়াম দরকার?
যারা এখনো নিয়মিত শরীরচর্চা শুরু করেননি, তাদের জন্য ড. সুজুকির পরামর্শ, সপ্তাহে ২-৩ দিন, অন্তত ৪৫ মিনিট করে কার্ডিও বা এ্যারোবিক ব্যায়াম করুন। যেমন দ্রুত হাঁটা, দৌড়, সাঁতার, নাচ বা সাইক্লিং। এই রুটিন মাত্র ৭-৮ সপ্তাহ মেনে চললেই মস্তিষ্কের ফোকাস ও স্মৃতি শক্তিতে উন্নতি লক্ষ্য করা যাবে।
মস্তিষ্কের ‘সুইট স্পট’
গবেষণার দ্বিতীয় ধাপে দেখা গেছে, যারা ইতোমধ্যেই নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তারা সপ্তাহে ৬-৭ দিন এক্সারসাইজ করলে আরও ভালো ফল পান। অর্থাৎ সপ্তাহে গড়ে ৪-৫ ঘণ্টা এ্যারোবিক এক্সারসাইজ মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস ও প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সকে আরও শক্তিশালী করে। এতে শুধু স্মৃতিশক্তিই বাড়ে না, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, চিন্তাভাবনার গতি এবং মানসিক তীক্ষ্ণতাও বাড়ে।
কেন এ্যারোবিক এক্সারসাইজ সবচেয়ে কার্যকর
কার্ডিও বা এ্যারোবিক এক্সারসাইজ মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায় এবং ‘ব্রেন-ডিরাইভড নিউরোট্রপিক ফ্যাক্টর’ (BDNF) নামের একটি প্রোটিন নিঃসরণ ঘটায়, যা মস্তিষ্কের কোষকে শক্তিশালী রাখে ও শেখার ক্ষমতা উন্নত করে। পাশাপাশি ব্যায়াম কমায় স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা, যা অতিরিক্ত হলে মস্তিষ্কের স্মৃতিবাহী অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
সূত্র: কালবেলা