বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

এক নজরে এটিএম শামসুজ্জামান

এক নজরে এটিএম শামসুজ্জামান

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কিংবা নাটকে যে কয়জন শক্তিমান অভিনেতা রয়েছে তাদের একজন এটিএম শামসুজ্জামান। শিল্প চর্চার নানা প্রশাখায় জনপ্রিয় এ অভিনেতার বিচরণ রয়েছে। তিনি ছিলেন একাধারে অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার। 

জন্ম

এটিএম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা নূরুজ্জামানের পৈতৃক নিবাস লক্ষীপুরের ভোলাকোটের বড় বাড়িতে। তৎকালীন শামসুজ্জামানের বাবা নামকরা আইনজীবী ছিলেন। রাজনীতিতেও ছিলেন পারদর্শী। নূরুজ্জামান শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। শামসুজ্জামানের মায়ের নাম নুরুন্নেসা বেগম। নূরজ্জামান-নুরুন্নেসা দম্পতির আট ছেলে মেয়ের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।

শিক্ষা

এটিম শামসুজ্জামান বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছেন। ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। পগোজ স্কুলে পড়ার সময় তার সহপাঠী ছিলেন আরেক শক্তিমান অভিনেতা প্রবীর মিত্র। এক পর্যায়ে ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন শামসুজ্জামান।

চলচ্চিত্রে আগমন

১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্র অঙ্গনে পা রাখেন এটিএম শামসুজ্জামান। ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি লিখেন কাহিনী ও চিত্রনাট্য। এটিই ছিল তার প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। তার কাহিনী ও চিত্রনাট্যে অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। তার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনী লেখার অর্জন রয়েছে। 

অভিনেতা হিসেবে এটিএম শামসুজ্জামানের যাত্রা 

প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন এটিএম শামসুজ্জামান। ১৯৬৫ সালের দিকে অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনা আসেন তিনি।

‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্র ছাড়াও কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ‘জলছবি’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘রামের সুমতি’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’ চলচ্চিত্রে তাকে কৌতুক চরিত্রে দেখা যায়।

শুরুতে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করলেও আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রটিতে খল চরিত্র তাকে অভিনেতার তকমা এনে দেয়। তিনি ‘অশিক্ষিত’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘স্বপ্নের নায়ক’ চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মণিকোঠায় স্থান করে নেন। 

খল চরিত্র ছাড়াও পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ে পারদর্শী ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। ‘অনন্ত প্রেম’, ‘দোলনা’, ‘অচেনা’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘চোরাবালি’ উল্লেখ্যযোগ্য চলচ্চিত্র।

পরিচালনার মাধ্যমেই এটিএম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্রে যাত্রা হয়। ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্তদের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর ২০০৯ সালে প্রথম পরিচালনা করেন শাবনূর-রিয়াজ জুটির ‘এবাদত’ নামের ছবিটি।

সম্মাননা

১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এটিএম শামসুজ্জামান। ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’ চলচ্চিত্রে কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। এটিএম শামসুজ্জামান রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালি’তে অভিনয় করেন এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তাকে ৪২ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২০১৭) অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। 

শিল্পকলায় বিশেষ অবদান রাখায় ২০১৫ সালে তাকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদকের ভূষিত করা হয়। একই সালে তিনি ঢাকা মডেল এজেন্সি এ্যাওয়ার্ড আজীবন সম্মাননা ভূষিত হন। এছাড়া অভিনেতা বুলবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা পদক অর্জন করেন এটিএম শামসুজ্জামান।
 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ