শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

দই বিক্রেতা জিয়াউল হকের স্বপ্ন পূরণের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

দই বিক্রেতা জিয়াউল হকের স্বপ্ন পূরণের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

সংগৃহীত

একুশে পদক পাওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের দই বিক্রেতা মো. জিয়াউল হকের স্বপ্ন পূরণের ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জিয়াউল হকের পাঠাগারের জন্য জমি এবং ভবন তৈরি করে দেয়ার ঘোষণার পাশাপাশি তার স্কুলটিকে সরকারিকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন।

এর আগে অমর একুশে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জিয়াউল হকসহ ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘একুশে পদক-২০২৪’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ তুলে দেন তিনি। অনুষ্ঠানে জিয়াউল হক সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্যের কারণে নিজে লেখাপড়া করতে পারেননি। এটা নিয়ে তার ভেতরে একটা দুঃখ-যন্ত্রণা ছিল।

কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। সাধারণ কাজ করে, দই বিক্রির ছোট্ট দোকান দিয়ে তিনি নিজের জীবন জীবিকা এবং সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন। পাশাপাশি অন্যের মাঝে জ্ঞানের আলো বিতরণ করার জন্য পাঠাগার তৈরি এবং সাধারণ মানুষকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেন তিনি। তিনি একটি স্কুল তৈরি করেছেন। জিয়াউল হককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাকে এই পুরস্কার তুলে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত- সারা দেশে যদি আমরা খোঁজ করি এরকম অনেক গুণীজন পাবো। হয়তো দারিদ্র্য কিংবা সামাজিক কারণে তারা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাননি কিন্তু তারা সমাজকে কিছু দিয়েছেন।তিনি যে পাঠাগারটা করেছেন তার জন্য আমার কাছে কিছুদিন আগে বললেন, একটা স্থায়ী ভূমি এবং একটা বিল্ডিং দরকার। আমি করে দেবো।

শুধু তাই নয়, যে স্কুলটা করেছেন সেটাও তিনি চান যেন সরকারিকরণ করা হয়। আমি স্কুলটার খোঁজখবর নেবো এবং যথাযথভাবে এটা করে দেবো। কেন করে দেবো? যে মানুষটা জীবনে এত বড় ত্যাগ স্বীকার করতে পারে তাদের জন্য করা আমার দায়িত্ব। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বলছি না, আমি জাতির পিতার কন্যা হিসেবে বলছি। আমি যদি প্রধানমন্ত্রী নাও থাকতাম এবং আগে এই তথ্যটা পেতাম তাহলে আমরা নিজেরাই চেষ্টা করতাম। এর আগে অনুষ্ঠান মঞ্চে পদক গ্রহণের জন্য জিয়াউল হকের নাম ঘোষণার সময় উপস্থিত অতিথিরা দাঁড়িয়ে এবং করতালি দিয়ে তাকে সম্মান জানান। এ সময় তার সম্পর্কে বলা হয়, মো. জিয়াউল হক একজন অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব। অত্যন্ত মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে ছোটবেলা থেকেই স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে জীবনসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হন।

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। দইয়ের ব্যবসা শুরু করেন। এরপর সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা ফিরে এলে দই বিক্রির লভ্যাংশের টাকা দিয়ে গরিব, অসহায় এবং পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি গরিব, অসহায় শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৬৯ সাল থেকে তিনি তিল তিল করে তার পারিবারিক লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। একজন সাধারণ মানুষ হয়েও নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও মানবসেবায় ব্রতী হয়ে যে সাধারণ চিন্তা করেছেন তা এই সমাজে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। উল্লেখ্য, জিয়াউল হকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার চামামুশরীভুজা গ্রামে। দই বেচে তিনি এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে গৌরব অর্জন করেছেন।

সূত্র: মানবজমিন

সর্বশেষ: