বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

নার্সিংয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার

নার্সিংয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার

অসুস্থ মানুষের সুস্থতায় স্বাস্থ্যসেবা জগতে নার্সরা অনন্য ও অবিসংবাদিত ভূমিকা পালন করছেন। নার্সিংয়ের রূপকার নাইটিংগেলের হাত ধরেই আজকের নার্সরা বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারে নিজেদেরকে দিন দিন আরও পরিপক্ক করে তুলছেন। শুরুর দিকে নার্সিংয়ে রোগীদেরকে বেশির ভাগ সাধারণ নিয়মেই সেবা দেয়া হতো। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে নার্সিংয়েও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

আজকাল হাসপাতালগুলোতে অনেক ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। কম্পিউটারের মাধ্যমে হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে রোগীর সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়, রোগীর ঔষধের প্রস্তাবনা করা হয়। এখন অনলাইন পদ্ধতিতে ও চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে।

হাসপাতালে রোগীর প্রয়োজনীয় তথ্য অনেক দিনের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা যাচ্ছে, রোগীর সঙ্গে টেলিমেডিসিন- এই পদ্ধতির মাধ্যমে ডাক্তারের সামনাসামনি রোগী না থাকলেও চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে।

নার্সরা আজকাল হাসপাতালে রোগীর সেবায় অনেক রকমের নতুন প্রযুক্তি যন্ত্র ব্যবহার করছেন। যেমন, ভেনটিলেটর, মানে কৃত্রিম শ্বাস যন্ত্র। এটি ব্যবহার করে রোগীকে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় স্যালাইন পাম্প রোগীর স্যালাইন চালানোর জন্য ব্যবহার হচ্ছে। প্রোটেবল মনিটর রোগীর সব ধরনের শারীরিক প্যারামিটার জানার জন্য কাজ করছে।

সিরিঞ্জ পাম্প-রোগীকে সঠিক সময় অনুসারে ইনজেকশন দেবার জন্য। সেনট্রালাইজ মনিটর- সব রোগীর শারীরিক অবস্থা একই সাথে জানার জন্য। নিউমাটিক স্যুট- হাসপাতালে জিনিসপত্র খুব তাড়াতাড়ি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানোর জন্য নার্সরা ব্যবহার করছেন।

ডিজিটাল বিছানা ব্যবহার করে বেড সাইডের অনেক ঝামেলার অবসান ঘটিয়েছেন। আজকাল ব্লাড প্রেসার, রক্তে শর্করা, শরীরের তাপমাত্রা, ওজন ও শরীরে অক্সিজেন মাপার জন্য নার্সরা ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করেন। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে নার্সরা তাদের কাজের অনেক ত্রুটি রোধ করতে পেরেছেন। রোগীর সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারছেন।

আজকাল বিভিন্ন নার্সিং শিক্ষা ব্যবস্থাতেও প্রযুক্তির অনেক ব্যবহার হচ্ছে। নার্সিংয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কম্পিউটারসহ ডামির মধ্যে দিয়ে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাচ্ছেন। যেমন, সিপিআর ডামি। এখন অনলাইনের সাহায্যে নার্সিং ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক ড্রাগের রেফারেন্স, ডাইগোনোসিস এবং মেডিকেলের অনেক তথ্যের বিষয়ে জানতে পারছেন।

নার্সিং প্রশাসনের ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির ব্যবহার অনস্বীকার্য। আজকাল নার্সিং প্রশাসকরা কম্পিউটার ব্যবহার করে অনেক তথ্য সংরক্ষণ করতে পারছেন। ই-মেল ব্যবহার করে খুব দ্রুত অনেক তথ্য বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতে পারছেন। এক্সসেল ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে নার্সদের ডিউটির একটি সঠিক তালিকা বের করতে পারছেন। পানচিং মেশিন ব্যবহারের মধ্য দিয়ে নার্সদের সময়ানুবর্তিতা ব্যাপারটাতেও নজর দিতে পারছেন।

নার্সরা এই প্রযুক্তিবিদ্যা তার অনেক গবেষণার কাজে ব্যবহার করেছেন। প্রযুক্তির ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে নার্সয়ের কাজের অনেক উন্নতি হয়েছে। রোগীর সেবায় অনেক দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা করতে পারছেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে নার্সরা তাদের রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেও রোগীর অনেক তথ্যের আদান-প্রদান করতে পারছেন।

তাই রোগীর সেবার বিষয়ে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে একটা নিশ্চিন্তভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেটা নার্সিং প্রফেশনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নার্সরা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে অনেক দক্ষতা অর্জন করেছেন। এবং হাসপাতালে নিজেদের একটা সুনাম অর্জন করেছেন। রোবটিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে নার্সরা অনেক কাজ খুব দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করছেন।

কোভিড ১৯ মোকাবেলাতেও নার্সরা বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার করেছেন। ভিডিও কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে রোগীকে বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে বাড়ির লোকের অনেক চিন্তা দূর করেছেন।

কোভিড টিকা প্রদানেও নার্সরা কম্পিউটার দিয়ে সাধারণ মানুষের সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে নিবন্ধ করেছেন। সব মিলিয়ে নার্সিং প্রফেশন প্রযুক্তির ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে এক যুগান্তকারী ও বৈপ্লিবিক পরিবর্তনের পথ দেখেছে।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, নার্সিং বিভাগ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ