বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চলনবিলের সুস্বাদু ক্ষীরা যাচ্ছে সারাদেশে

চলনবিলের সুস্বাদু ক্ষীরা যাচ্ছে সারাদেশে

জমে উঠেছে সিরাজগঞ্জের চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী ক্ষীরার হাট। চলনবিলের প্রাণকেন্দ্রে দিঘরিয়ার ক্ষীরার আড়তগুলো পাইকার ও বিক্রেতাদের ভিড়ে জমে উঠেছে। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে শত শত টন ক্ষীরা। চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশের উৎপাদিত সুস্বাদু ক্ষীরা রাজধানীসহ যাচ্ছে সারাদেশে। ক্ষীরার আড়ৎ থেকে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৭৫ টন ক্ষীরা রাজধানীতে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

উত্তরাঞ্চলের শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত সিরাজগঞ্জ জেলায় এ বছর ৬৬৬ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে ক্ষীরার। উপযোগী আবহাওয়া থাকায় ক্ষীরার বাম্পার ফলনও হয়েছে। দাম ভাল পাওয়ায় খুশি কৃষকেরা।স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, চলনবিলের উত্তর এলাকার তাড়াশ, নাটোরের সিংড়া ও বগুড়ার শেরপুরের এক ইউনিয়নের কৃষকদের উৎপাদিত ক্ষীরা বেচাকেনার জন্য দিঘরিয়া আড়তটি প্রায় ১৭ বছর আগে চালু হয়।

সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও বগুড়া জেলার ক্ষীরা চাষিরা এখানে বিক্রি করতে আসেন। প্রতিদিন ভোর থেকে বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা খিরা আড়তে আনতে শুরু করেন। আর আড়ৎ থেকে জেলাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা ক্ষীরা কিনতে আসেন। প্রতিদিন শত শত মেট্রিক টন খিরা বেচাকেনা হচ্ছে। দুপুরের পর শুরু হয় ট্রাক লোড। প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি ট্রাক প্রস্তুত থাকে। বেলা ১১টা থেকে শুরু হয় বিক্রি।

মহাজনরা ক্ষীরা কিনে ট্রাকে লোড দিতে থাকেন। পাইকারেরা ক্ষীরা ক্রয় করে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক যোগে চলে যায়। এবার এই আড়তগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ টন ক্ষীরা যাচ্ছে ঢাকায়। এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক। কেনাবেচার মধ্য দিয়ে ১ বা ২ ঘণ্টার মধ্যে ভরে যায় মহাজনদের আড়ৎ। হাটে প্রচুর ক্ষীরা আমদানি হওয়ায় ওজনের পরিবর্তে বস্তা চুক্তিতে বিক্রি করা হয়। প্রকারভেদে প্রতি ছোট বস্তা ক্ষীরা বিক্রি হয় ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং প্রতি বড় বস্তা বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। এ হাটটি ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলে এপ্রিল পর্যন্ত।

এদিকে ক্ষীরার বড় হাট এখন লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের চরবর্দ্ধনগাছা। এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খিরা বেচাকেনা চলে। সপ্তাহে ৭ দিনই বসে এই হাট। চাষিরা ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ খিরা বিক্রি করছেন। তবে বিক্রির জন্য কৃষকদের দিতে হয় না কোনো খাজনা।

কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, তাড়াশ উপজেলার পশ্চিম এলাকার বারুহাস ও তালম ইউনিয়ন, নাটোরের সিংড়ার বিয়াস ইউনিয়ন এবং বগুড়ার শেরপুরের বিশালপুর ইউনিয়নের কৃষকরা প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ক্ষীরা চাষ করে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্ষীরা চাষে ৩ হাজার হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। এ বছর ফলন কম হলেও দাম বেশি হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

এ বছর সিরাজগঞ্জ জেলায় মোট ৬৬৬ হেক্টর জমিতে ক্ষীরা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে তাড়াশে ৪৩৯, উল্লাপাড়ায় ২০৪, কাজিপুরে ৫, বেলকুচিতে ৫, কামারখন্দে ৪, রায়গঞ্জে, শাহজাদপুরে ১ ও সদরে ৬ হেক্টর জমিতে খিরা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে তাড়াশ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়েছে। অনুরূপ দাম পাওয়া গেলে এক বিঘা জমির খিরা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকার বিক্রি করা যাবে।

চাষিরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ক্ষীরা চাষ করতে প্রায় ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এক বিঘা থেকে উৎপাদিত ক্ষীরা বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। এ আবাদে পোকা-মাকড়ের ঝামেলা কম, তাই ক্ষীরা চাষে কৃষকের আগ্রহ বেশি।

ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, তাড়াশ অঞ্চলের উৎপাদিত ক্ষীরার মান ভালো, দামও কম। ক্ষীরার মান ভালো হওয়ায় এর কদর সারাদেশে রয়েছে। প্রতিদিন দেশের চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে ক্ষীরা ক্রয় করতে আসছে ব্যাপারীরা।

দিয়ারপাড়া গ্রামের ক্ষীরা চাষি করিম হোসেন জানান, গত মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে ক্ষীরা চাষ করেছিলাম। আবহাওয়ার কারণে খুব একটা লাভের মুখ দেখিনি। এবার ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ফলনও বাম্পার হয়েছে। দামটাও খুব ভাল পেয়েছি।

বারুহাস ইউনিয়নের দিঘড়িয়া গ্রামের বর্গা চাষি ফজর আলী জানান, গত বছর ১৫ শতাংশ জমির ক্ষীরা বিক্রি করে বেশ লাভ হয়েছিল। এবারও ২৫ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে খিরার চাষ করেছি। ফলন খুবই ভালো হয়েছে এবং দামও ভালো পাচ্ছি।

সান্দ্রা গ্রামের কৃষক হোসেন আলী জানান, আমি তিন বছর ধরে ক্ষীরা চাষ করে আসছি। আগে এই আবাদ কম হতো। কিন্তু অন্য ফসলের চেয়ে ক্ষীরা চাষে অধিক লাভের কারণে প্রতি বছর কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। উল্লাপাড়ার চলনবিল গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী জানান, প্রতি বছর আমি ধান ও সরিষা চাষ করি। এবার আড়াই বিঘা জমিতে খিরা চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ১০০ থেকে ১২০ মণ ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে ক্ষীরা ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দর এ রকম থাকলে আড়াই বিঘা জমিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাভ হবে।

এ বিষয়ে তাড়াশের দিঘরিয়ার ক্ষীরার আড়ৎদার ফজলুল করিম জানান, গত বারের তুলনায় এবার ক্ষীরার দ্বিগুণ আমদানি হয়েছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্ষীরার আড়ৎ ভরে যায়। চাহিদাও বেড়েছে, দামও ভাল। তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছর ক্ষীরার ফলন ভালো হওয়ায় এ বছরও আবাদে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। সামনে আরও বেশি ক্ষীরার আবাদ হবে বলে আমি আশাবাদী।

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, জেলার জমি ক্ষীরা চাষের জন্য উপযোগী। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার্বক্ষণিক কৃষকদের ক্ষীরা চাষে উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৬৬ হেক্টর জমিতে ক্ষীরা চাষ করা হয়েছে, যা গত বছরের লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৭৫ হেক্টর বেশি চাষ হয়েছে।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর