শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২

কোথায় আছে আইয়ুব বাচ্চুর গিটার

কোথায় আছে আইয়ুব বাচ্চুর গিটার

সংগৃহীত

আইয়ুব বাচ্চুর গিটারবাদন আর গায়কিতে মুগ্ধ হননি, এমন শ্রোতা পাওয়া মুশকিল। বেঁচে থাকলে আজও তিনি দাপিয়ে বেড়াতেন দেশ–বিদেশের মঞ্চ। সাত বছর আগে ১৮ অক্টোবরের সকালে উড়ে আসা একটি খবর, আইয়ুব বাচ্চুর ভক্তদের মন বিষণ্ন করে দেয়। এদিন তাঁরা জানতে পারেন, আজীবনের জন্য তাঁর পথচলা থেমে গেছে। ভক্ত–শুভাকাঙ্ক্ষীদের কেউ এসে হাসপাতালে ভিড় করেন, কেউ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে ছুটে যান চট্টগ্রামেও, যেখানে চিরঘুমে আইয়ুব বাচ্চু। আজ দেশের এই জনপ্রিয় গিটার জাদুকরের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুর আগে কিছু স্বপ্নের কথা শুনিয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর সেসব স্বপ্ন পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশন।

আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু হয় ২০২০ সালে, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত হয় চলতি বছরের ৯ জুলাই। রয়েছে আইয়ুব বাচ্চু ডট ফাউন্ডেশন নামে এই প্রতিষ্ঠানের একটি ওয়েবসাইটও। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার বলেন, ‘বাচ্চুর স্বপ্ন পূরণ করতে পারলেই আমি নিজেকে সার্থক মনে করব। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কবে তা পূরণ হবে এখনো বুঝতে পারছি না। কারণ যে স্বপ্নটা আইয়ুব বাচ্চু দেখেছেন, তা পূরণে পৃষ্ঠপোষকতা খুব জরুরি।’

আইয়ুব বাচ্চুর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার মগবাজারের একটি কনভেনশন সেন্টারে আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশন দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে, যেখানে দেশের ব্যান্ড–জগতে তাঁর দীর্ঘদিনের সহযাত্রীদের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশন চাইছে, আইয়ুব বাচ্চুর সংগ্রহে থাকা সব গিটার নিয়ে মিউজিক্যাল ক্যাফে চালু করতে, যেখানে সংগীতে আগ্রহী মানুষদের পাশাপাশি সব মিউজিশিয়ান যেন নানান অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারেন।

কোথায় আছে আইয়ুব বাচ্চুর গিটার

অস্ট্রিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র—দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে নামীদামি ব্র্যান্ডের পছন্দের গিটার সংগ্রহ করে গেছেন প্রয়াত ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত ‘ফেন্ডার স্টাটোকাস্টার’, আইভানেজের ‘জেম সেভেনটি সেভেন’সহ ৫০টির মতো গিটার নিয়ে যাত্রা করছে ‘আইয়ুব বাচ্চু মিউজিয়াম’। আইয়ুব বাচ্চুর সেই গিটারগুলো এখন মগবাজারে বাসায় রয়েছে। স্বামীর স্মৃতিকে আগলে রাখছেন বাচ্চুর স্ত্রী ও আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ফেরদৌস আক্তার। বছর দুয়েক আগে কয়েকটি গিটার নিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি প্রদর্শনী করেছে বাচ্চুর পরিবার। প্রায় সাত বছর ধরে আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতিবিজড়িত গিটার ও এবি কিচেনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ব্যবহৃত ক্যাপ, টি-শার্ট নিয়ে একটি মিউজিয়ামের স্বপ্ন দেখে আসছে আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার ও আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশন।

আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি ও ব্যান্ড এলআরবিতে আইয়ুব বাচ্চুর দীর্ঘদিনের সহযাত্রী আবদুল্লাহ আল মাসুদ গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিউজিয়ামে শুধু বসের (আইয়ুব বাচ্চু) স্মৃতিবিজড়িত গিটারগুলো থাকবে না, তাঁর ব্যবহৃত টি-শার্ট, হ্যাট, ক্যাপ, রোদচশমাসহ বহু কিছু থাকবে। পাশাপাশি ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটিতে তাঁর কনসার্ট সরাসরি উপভোগের অনুভূতি নিতে পারবেন দর্শনার্থীরা। এতে এবি কিচেনের আদলে একটি স্টুডিও থাকবে, যেখানে শিল্পীরা গান রেকর্ড করতে পারবেন। একটি মিলনায়তন থাকবে, যেখানে নতুন মিউজিশিয়ানরা অনুষ্ঠান করতে পারবেন অনায়াসে। কিন্তু চাইলেই কি আর সব সম্ভব?’

বাঁধা কোথায়? এমন প্রশ্নে মাসুদ বলেন, ‘আমরা যেভাবে স্বপ্ন দেখছি, তাতে ১০ কাঠা আয়তনের একটি জায়গা লাগবে, যেখানে আইয়ুব বাচ্চু মিউজিয়াম ও কালচারাল হাব করার স্বপ্নটা দেখছি। সেই ভবনে মিলনায়তন থাকবে, মিউজিক্যাল ক্যাফে থাকবে, যেমনটা আমরা বাইরের দেশে হার্ডরক ক্যাফেতেও দেখি। এখানে নানান ধরনের ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশনও থাকবে—যেখান থেকে দেশের নতুন প্রজন্মের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আসা অতিথিরাও বস সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমরা তো শুধু পরিকল্পনা করতে পারি, বাস্তবায়ন করতে হলে তো অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা সবচেয়ে জরুরি।’

গিটারগুলো কী অবস্থায় আছে, জানতে চাইলে ফেরদৌস আক্তার বললেন, ‘যে তাপমাত্রায় রাখা হলে গিটারগুলো ঠিক থাকবে, আমরা সেভাবেই রেখেছি। আইয়ুব বাচ্চুর গিটার তাঁর আরেকটি অস্তিত্বের অংশ, সেটি যত্নে রাখার জন্য যা যা করণীয় করে যাচ্ছি, যত দিন মিউজিয়াম বা মিউজিক্যাল লাউঞ্জ করতে না পারি।’

অপ্রকাশিত দুই শতাধিক গান

আইয়ুব বাচ্চুর স্টুডিওর নাম এবি কিচেন, যেখানে নিয়মিত গান বানানোয় মগ্ন থাকতেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত বানিয়ে গেছেন। আবদুল্লাহ আল মাসুদ জানালেন, দুই শতাধিক গান অপ্রকাশিত রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি গান এখনই প্রকাশের উপযোগী। মিক্সড-মাস্টারিং করা। জানালেন, বছরের শুরুতে ‘ইনবক্স’ নামের একটি গান প্রকাশ করেছেন। মাসুদ বলেন, ‘নতুন গান প্রকাশ করতে হলে পৃষ্ঠপোষকতা দরকার পড়ে। তা ছাড়া এখন সময়টাও খুব একটা অনুকূলে নয়। পরিবেশ পরিস্থিতি ঠিকঠাক হলেই আমরা বসের গাওয়া গানগুলো প্রকাশ করব।’ মাসুদ জানালেন, সব গান গাওয়ার পাশাপাশি সুর আইয়ুব বাচ্চুর। কথা লিখেছেন, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা আইয়ুব বাচ্চুর গান লিখতেন তাঁরাই।’

আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে ইমন-অনির পরিকল্পনা

বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি চীনে পারফর্ম করেছে ইমন চৌধুরীর তৈরি গানের দল ‘বেঙ্গল সিম্ফনি’। ১৪ অক্টোবর দেশটির রাজধানী বেইজিংয়ে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁদের সঙ্গে আরও ছিলেন গিটারিস্ট অনি হাসান ও ডি-রকস্টারখ্যাত শুভ। এ আয়োজনে প্রবাদ প্রতিম লালন সাঁই, হাসন রাজা, শাহ আবদুল করিম ও আব্বাসউদ্দীন আহমদের সঙ্গে ট্রিবিউট জানানো হয় প্রয়াত ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুকেও। সে সময় তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। জানা গেল, আইয়ুব বাচ্চুর কিছু গান ইনস্ট্রুমেন্টাল করার পরিকল্পনা করছেন ইমন চৌধুরী ও অনি হাসান। দুজনের প্রাথমিক কথাও এগিয়েছে, এখন চলছে পরিকল্পনা।

ইমন চৌধুরী বলেন, ‘বাচ্চু (আইয়ুব) ভাই তো আমাদের সম্পদ। দুজনই পরিকল্পনা করছি তাঁর কিছু গানের ইনস্ট্রুমেন্টাল ভার্সন আনা যায় কি না। এ আয়োজনে আমাদের যুগলবন্দী অনেকেই পছন্দ করেছেন, আমরাও উপভোগ করেছি। আশা করি, সামনে দুজনের অনেক কাজ হবে, আর এ কাজের একটি অংশে বাচ্চু (আইয়ুব) ভাইয়ের মতো কিংবদন্তিকে রাখতে পারলে আমাদের জন্যও গর্বের হবে।’
আইয়ুব বাচ্চু বিভিন্ন সময় ও সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশে তাঁর প্রিয় দুই গিটারিস্ট ইমন চৌধুরী ও অনি হাসান। আইয়ুব বাচ্চুর জীবদ্দশায় একসঙ্গে পারফর্ম না করতে পারলেও চীনে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে পারফর্ম করেছেন এই দুই গিটারিস্ট। তাঁরা এদিন সম্মান জানান আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতিতে। আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয় ‘সেই তুমি’ ও ‘ঘুমন্ত শহর’ গানে ইমন–অনির সঙ্গে ডি রকস্টার শুভও পারফর্ম করেন।

ইমন চৌধুরী বলেন, ‘বাচ্চু ভাই আমাদের দুজনকে অনেক আদর করতেন। ওনার মতো একজন কিংবদন্তি শিল্পীর চোখে আমি আর অনি ভাই প্রিয় দুই গিটারিস্ট, এটা শুনেছি—এ জীবনে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি তো নেই। তিনি বেঁচে থাকতে পারিনি, এবার চীনে এটা করতে পেরেছি। অনেক ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম মঞ্চে। প্র্যাকটিস থেকে ব্যাকস্টেজে তাঁর অনেক স্মৃতি মনে করেছি। কত প্রাণবন্ত একটা মানুষ ছিলেন তিনি। সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বাচ্চু (আইয়ুব) ভাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।’

সূত্র: প্রথম আলো

সর্বশেষ:

শিরোনাম: