
সংগৃহীত
সাপের বিষ মিশ্রিত কফি! চমকে উঠবেন না। পৃথিবীতে এরকম কফি আছে। আপনি যদি কখনো উত্তর ভিয়েতনামে ভ্রমণে যান, সেখানে বিশেষ বিশেষ রেস্তোরাঁয় খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন সাপের বিষ মেশানো কফি। আর অবাক ব্যাপার হলো, সে অঞ্চলের মানুষ মনে করে এটি এক আশ্চর্য ওষুধ!
কফি নিয়ে ভিয়েতনামিজদের এই উন্মাদনা এখনকার নয়। তার শুরু সেই আঠারো শতক থেকে। সে সময় দেশটি ছিল ফরাসি কলোনি। তারাই ভিয়েতনামে কফি চাষের সূচনা করে। ধীরে ধীরে এটি দেশটির সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠে। এই লাইনটি শুধু লেখার জন্যই লেখা হলো না। ভিয়েতনামে কফি পানের যে ধারা গড়ে উঠেছে, তা বিশ্বে অনন্য। এটি পানের জন্য ফরাসিরা কনডেন্সড মিল্ক আবিষ্কার করেছিল একদা! তা দিয়ে কফি পানের রীতি এখনো চলছে ভিয়েতনামে। ফিন ড্রিপার নামে কফি তৈরির যে স্টাইল, সেটি ভিয়েতনামের এবং এটি পৃথিবীতে কফি ব্রিউইংয়ের অন্যতম আইকন।
ভিয়েতনামের বড় শহর সায়গন বা হো চি মিন সিটিতে অ্যামাজন-থিমড কফি শপ আছে। যেখানে জঙ্গল ও জলপ্রপাতের মধ্যে কফি পান করা যায়! বুঝুন এবার তাদের কফি প্রেমের নমুনা।
তো এমন একটি কফিপ্রেমী দেশের কফি যে বিশ্বের সেরা কফির তালিকায় থাকবে, তাতে আশ্চর্য কিছু নেই। তবে দেশটি টেক্কা দিয়েছে সংখ্যার দিক থেকে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খাদ্য ম্যাগাজিন ‘টেস্ট এটলাস’ প্রকাশ করেছে বিশ্বের সেরা ৬৩টি কফির তালিকা। ‘বেস্ট রেটেড কফিস ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামের এই তালিকায় প্রথমেই জায়গা করে নিয়েছে কিউবার ক্যাফে কুবানো। এই জায়গাতেই চার মেরেছে ভিয়েতনাম। দেশটির আইসড মিল্ক কফি, ব্ল্যাক কফি, এগ কফি ও দই কফি এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ভিয়েতনাম সৃজনশীল কফি সংস্কৃতির জন্য এই তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। দেশটির এই কফিগুলো শুধু পানীয় নয়, বরং সংস্কৃতির নিদর্শন। তালিকায় কেবল জনপ্রিয়তা নয়, বরং এসব পানীয়ের সাংস্কৃতিক প্রভাব ও ঐতিহ্যকেও মূল্যায়ন করা হয়েছে।
কফির জগতে ভিয়েতনাম
ভিয়েতনাম বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রোবাস্টা কফি উৎপাদনকারী দেশ। ভিয়েতনামে এখন আরবিকা ও স্পেশালিটি কফির চাষ বাড়ছে, বিশেষভাবে দালাত ও সোন লা অঞ্চলে। ভিয়েতনামের কিছু কফি শপে এখন উন্নতমানের সিঙ্গল অরিজিন কফি পাওয়া যায়।
যে কফিগুলো তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে, সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেখে নেওয়া যাক।
আইসড মিল্ক কফি: এটি তৈরি হয় রোবাস্টা কফি, কনডেন্সড মিল্ক ও বরফ দিয়ে। কফি মগের একেবারে নিচে থাকে কন্ডেন্সড মিল্ক। ধীরে ধীরে ড্রিপ ফিল্টার বা ফিন দিয়ে কফি ড্রিপ করা হয়। শেষে বরফ যোগ করে ঠান্ডা করে পরিবেশন করা হয়। এটি আছে তালিকার সপ্তম স্থানে।
ব্ল্যাক কফি: তালিকায় চৌদ্দতম স্থানে আছে ব্ল্যাক কফি। স্থানীয় ভাবে একে বলা হয় সি ই ফি ডেন। এই ব্ল্যাক কফি ভিয়েতনামিজদের কাছে ভীষণ প্রিয়। খাঁটি কফি প্রেমীদের জন্য সেরা কড়া এই পানীয়টি পরিবেশন করা হয় দুধ ও চিনি ছাড়া।
এগ কফি: ’ ৪০ এর দশকে হ্যানয়ের ক্যাফে জাংয়ে এটি প্রথম তৈরি হয়েছিল। ডিমের কুসুম, কনডেন্সড মিল্ক ও রোবাস্টা কফির অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটানো হয় এখানে। ডিমের মিশ্রণটি ফেটিয়ে ক্রিমি করে তুলে তা কফির ওপরে ঢেলে পরিবেশন করা হয়। এটি দেখতে তিরামিশুর মতো। তালিকার ২৭ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে এই কফিটি।
ইওগার্ড কফি: যেদেশে সাপের বিষ মিশিয়ে কফি পান করা হয় সে দেশে দই দিয়ে কফি তৈরির রেসিপি পাওয়া আশ্চর্য ঘটনা নয়। তবে তা পৃথিবীর মানুষকে আশ্চর্য করে বৈকি। সেরার তালিকায় ৫৩ নম্বরে আছে দই কফি বা ইওগার্ড কফি। অপেক্ষাকৃত নতুন ও সৃজনশীল একটি ভিন্নধর্মী কফি এটি। দই, কফি, কনডেন্সড মিল্ক ও বরফ একত্রে মিশিয়ে অথবা স্তর করে পরিবেশন করা হয় এ কফি।
এই তারকা কফিগুলোর বাইরেও নারকেল দুধ দিয়ে তৈরি কফি পাওয়া যায় ভিয়েতনামে। নাম চি ফি দোয়া। আরও পাওয়া যায় লবণ দেওয়া কফি। তার নাম চি ফি মুওয়ি।
সূত্র: ঢাকা পোষ্ট