• শনিবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ১৪ ১৪৩০

  • || ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

মালয়েশিয়ার স্থানীয় নির্বাচনে কেন ধাক্কা খেলেন আনোয়ার ইব্রাহিম

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

১৯৫৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীন হয় মালয়েশিয়া। এর পর অন্তত ছয় দশক মালয়েশিয়া শাসন করেছে একটি মাত্র দল। দলটির নাম ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও)। এই দলের নেতা ও মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ ওঠার পর ২০১৮ সালে ক্ষমতা হারায় ইউএমএনও।

তখন নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে ৪৫০ কোটি ডলার আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয়। নাজিব রাজাকের প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর পর থেকে মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গন অস্থির হয়ে ওঠে। এর পর অন্তত চারজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে মালয়েশিয়া। সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে একটি অগোছালো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে একটি ঐক্য সরকার ক্ষমতায় এসে স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। গত ১২ আগস্ট মালয়েশিয়ার ১৩টি রাজ্যের মধ্যে ছয়টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় এ নির্বাচনে বেশ বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে আনোয়ার ইব্রাহিমের জোট ‘পাকাতান হারাপান’। তারা ছয়টি রাজ্যের মধ্যে তিনটিতেই ক্ষমতা হারিয়েছে। বিপরীতে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধী দল পেরিকতান ন্যাশনাল।
 
মালয়েশিয়ার জাতীয় নির্বাচনে যদিও রাজ্য নির্বাচনের খুব একটা প্রভাব নেই, তারপরও অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এটি আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকার পতনের আগাম ইঙ্গিত। আনোয়ারের জোট তুলনামূলক সংস্কারপন্থী। অন্যদিকে পেরিকতান ন্যাশনাল বেশ রক্ষণশীল। তারা ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রীয় নির্বাচনকে ধর্মীয় লড়াই হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। যেমন প্রবীণ বিরোধী নেতা ও মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টির প্রেসিডেন্ট হাদি আওয়াং ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা পেতে হলে মুসলমানদের ভোট দিতে বের হতে হবে। ইসলামকে রক্ষার জন্য আপনার ভোট দেওয়ার দায়িত্বটি পালন করুন।’ মালয়েশিয়ায় অন্তত ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস করে। এর অন্তত দুই-তৃতীয়াংশই মুসলিম। এরা আনোয়ারকে খুব উদার মনে করেন। এই ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতেই তিনি রাজ্য নির্বাচনের আগে রংধনু রঙের সোয়াচ ঘড়িগুলো নিষিদ্ধ করেছিলেন। বলেছিলেন, এগুলো ‘এলজিবিটিকিউ’ প্রচারণায় সহায়তা করে। কেউ যদি এসব ঘড়ি বিক্রি করে অথবা কেউ যদি এ ধরনের ঘড়ি হাতে পরে, তাহলে তার তিন বছরের কারাদণ্ড হবে বলেও ঘোষণা করেন। তারপরও তিনি তাঁর ‘উদারপন্থী’ পরিচয় ঘোচাতে পারেননি, যার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় নির্বাচনে।
 
ধর্মীয় অনুভূতি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বিষয় প্রভাব ফেলেছে স্থানীয় নির্বাচনে। মালয়েশিয়ার জরিপকারী প্রতিষ্ঠান মেরদেকা সেন্টার বলছে, মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভোটারদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত বছরে ৮ শতাংশ বেড়েছে। এটি গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত গতির বার্ষিক অগ্রগতি। তারপরও দেশটি অর্থনীতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় জর্জরিত। কারণ, মালয়েশিয়ার জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দ্রুত বার্ধক্যে পা রাখছে। মেধার পাচার হচ্ছে উদ্বেগজনকভাবে। বিপুলসংখ্যক মেধাবী তরুণ জাতিগত বিভাজনমূলক রাষ্ট্রীয় নীতিতে হতাশ হয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। ফলে অর্থনীতি রয়েছে ঝুঁকিতে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধর্মীয় উদ্বেগ। মালয়পন্থী কট্টর বিরোধীরা নির্বাচনের বেশ আগে থেকে বলে আসছেন, ‘মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক নীতিগুলো ইসলামকে কেন্দ্র করে হওয়া উচিত।’ তাঁদের এই বিরামহীন প্রচার বেশ কাজে দিয়েছে স্থানীয় নির্বাচনে। অপেক্ষাকৃত ‘উদারপন্থী’ হিসেবে পরিচিত আনোয়ার ইব্রাহিমের জোট ধাক্কা খেয়েছে কট্টরপন্থীদের কাছে।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ
আলোকিত সিরাজগঞ্জ