শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জে ৬৮ মে.ও. সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকাজ শেষের পথে

সিরাজগঞ্জে ৬৮ মে.ও. সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকাজ শেষের পথে

সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে ৬৮ মেগাওয়াটের আরও একটি সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ৭৫ ভাগ নির্মাণ কাজ শেষে হয়েছে। আট কোটি ৭৭ লাখ ডলার ব্যয়ে বাংলাদেশ-চায়না রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড (বিসিআরইসিএল) এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

এর আগেও যমুনাপাড়ে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডবিøউপিজিসিএল) সয়দাবাদে সাত দশমিক আট মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে।

দেশে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে বিদ্যুতের বহুমুখী উৎসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশীদারিত্ব বাড়াতে বাংলাদেশ ও চীন যৌথভাবে এই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বাড়াতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের সঙ্গে সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ-চায়না রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড (বিসিআরইসিএল) গঠন করে সরকার। যৌথ এ কোম্পানিতে রয়েছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন এবং বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডবিউপিজিসিএল)।

দেশের মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনে কাজ করছে সরকার। তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে যৌথ কোম্পানিটি। এই প্রকল্পের নবায়নযোগ্য জ্বালানির সৌর বিদ্যুৎভিত্তিক প্রথম উদ্যোগ সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে যমুনা নদীর তীরে ২১৪ একর অকৃষি জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে ৬৮ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। দেশী বিদেশী ৩৫ জন নির্মাণ প্রকৌশলী এবং চার শতাধিক দক্ষ শ্রমিক দিনরাত পরিশ্রম করে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিচ্ছেন এই সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ।

যমুনা নদীর তীরে নদীর গাইড বাঁধ নির্মাণ কাজ করে ২০৪ একর জমির ওপর প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার পিলার বসানো হয়েছে। এই পিলারের ওপর বসবে সোলার প্যানেল। একদিকে চলছে পিলার ও সোলার প্যানেল বসানোর কাজ, অন্যদিকে বাকি ১০ একর জমিতে চলছে কন্ট্রোল বিল্ডিং, অফিসার ডরমিটরি, রেস্ট হাউস, নিরাপত্তা ভবনসহ অন্যান্য নির্মাণ কাজ। নির্ধারিত সময় এপ্রিল মাসের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবারহ করার প্রত্যাশা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।

বাংলাদেশ-চায়না রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এএম খোরশেদুল আলম জানান, মোট জ্বালানি উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার। তাই বিদ্যুৎ খাতে আমদানি ব্যয় কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

সেই লক্ষ্যে প্রথম ধাপে ৫০০ মেগাওয়াট ও পরবর্তীতে আরও ৫০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া পাবনা ও কুড়িগ্রামে শুরু হয়েছে আরও দুটি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। সিরাজঞ্জের এই প্রকল্প থেকে আগামী এপ্রিল মাসেই বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা এই কর্মকর্তার।

চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) ভাইস প্রেসিডেন্ট লিউ উই জুন জানান, বাংলাদেশ এবং চীন যৌথভাবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের উৎপাদিত বিদ্যুৎ স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি  সহযোগিতা করবে। সেই সঙ্গে যমুনায় জেগে ওঠা চরে আরও নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোতে স্থানীয় জনশক্তিও কাজে লাগাতে পারব। আশা করছি, ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প কাজ শেষ হলে পরবর্তীতে আরও বড় পরিসরে কাজ করব। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে ভবিষ্যতেও একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের ভাইস প্রেসিডেন্টের।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাম এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম তালুকদার লাবু জানান, সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত শিফটওয়াইজ প্রকল্পের নির্মাণ কাজে চারশ শ্রমিকসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন বিভিন্ন পর্যায়ের প্রকৌশলী এ প্রকল্পে কাজ করছেন। যথাসময়ে নির্মাণ কাজ শেষ করে তা হস্তান্তরের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরী বলেন, ৬৮ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বাড়াতেই নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলে দেশী-বিদেশী বড় বড় শিল্প উদ্যোক্তাদের শিল্প কারখানা স্থাপনেও সহায়ক ভ‚মিকা রাখবে। পাশাপাশি সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতিও।

সর্বশেষ: