বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

বিশ্ব বাজারে বেড়েছে ডলারের মান ও ট্রেজারি বন্ডের সুদহার, ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব

বিশ্ব বাজারে বেড়েছে ডলারের মান ও ট্রেজারি বন্ডের সুদহার, ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব

সংগৃহীত

আজ বুধবার মার্কিন মুদ্রা ডলার ও সরকারি বন্ডের সুদের হার একসঙ্গে বেড়েছে। এ কারণে জাপানি ইয়েনের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বাজারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব ধীরে ধীরে পড়তে শুরু করেছে।

কফি, সাউন্ডসিস্টেম থেকে শুরু করে আসবাব, বিভিন্ন ধরনের আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম গত জুন মাসে বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে দেশটির সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন, এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ হয়তো আর সুদহার কমাবে না। ফলে ডলারের দাম ও বন্ডের সুদ দুটিই বেড়ে গেছে।

সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ইয়েনের ওপর। ডলারের বিপরীতে ইয়েনের মান রাতারাতি নেমে গেছে চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। প্রতি ডলারে এখন পাওয়া যাচ্ছে ১৪৯ দশমিক শূন্য ৩ ইয়েন। তার আগে ডলারের বিপরীতে ইয়েনের মান ছিল ১৪৮ দশমিক ৯০।

ইউরো ও ব্রিটিশ পাউন্ডও দুর্বল। গত সোমবারের মতো গতকাল মঙ্গলবারও এই দুটি মুদ্রার দাম তিন সপ্তাহের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। ইউরোর মান ছিল ১ দশমিক ১৬০৮ ডলার আর পাউন্ডের মান ছিল ১ দশমিক ৩৩৯৪ ডলার।

খাদ্য ও জ্বালানি ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির এই বাড়তি চাপ সম্পর্কে ইভলিন পার্টনার্সের বিনিয়োগ কৌশলবিদ ন্যাথানিয়েল কেসি বলেন, ‘শুল্কের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ দেখা যাচ্ছে। হতে পারে এই চাপ সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়ার ইঙ্গিত। যদিও এখনই চূড়ান্তভাবে কিছু বলা যায় না।’

ন্যাথানিয়েল কেসি আরও বলেন, ‘এই প্রতিবেদন খুব একটা উদ্বেগজনক না হলেও খাদ্য ও জ্বালানিবহির্ভূত পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যতে শুল্ক বৃদ্ধির অনিশ্চয়তার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধান্বিত হতে পারে।’

এখন বিনিয়োগকারীরা ভাবছেন, ডিসেম্বর নাগাদ সুদের হার কমার সম্ভাবনা কমে ৪৩ বেসিস ভিত্তি পয়েন্টে এসে দাঁড়াবে। সপ্তাহের শুরুতে যা ৫০ ভিত্তি পয়েন্টের ওপরে ছিল। আজ যুক্তরাষ্ট্রের ১০ বছরের সরকারি বন্ডের সুদের হার বেড়ে এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। সুদহার হয়েছে ৪ দশমিক ৪৯৫ শতাংশ। দুই বছরমেয়াদি বন্ডের সুদহার ছিল ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশের কিছু ওপরে।

এই বাস্তবতায় ডলারও অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় বেশ শক্তিশালী অবস্থানে আছে। বিশ্বের প্রধান ছয়টি মুদ্রার বিপরীতে যে ডলারের সূচক প্রণয়ন করা হয়, তার মান এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে—৯৮ দশমিক ৬০-এর কাছাকাছি।

অস্ট্রেলিয়ান ডলারের মান গতকাল শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ কমেছে। আজ সকালে তা অবশ্য অল্প একটু বৃদ্ধি পেয়ে শূন্য দশমিক ৬৫১৭ ডলারে উঠেছে। নিউজিল্যান্ডের ডলারের মান বেড়েছে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ।

এদিকে আরেকটি সম্ভাবনা বিনিয়োগকারীরা ভাবনায় ফেলেছে। সেটা হলো, ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের উত্তরসূরি যদি এমন কেউ হন, যিনি সুদের হার কমানোর পক্ষপাতী, তাহলে দাম আরও বাড়তে পারে।

ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই জেরোম পাওয়েলের খোলাখুলি সমালোচনা করে আসছেন। গতকাল তিনি বলেন, ফেডের সদর দপ্তরের সংস্কারকাজে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ২৫০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত ব্যয় ‘ছাঁটাইয়ের মতো অপরাধ’।

র‍্যাবো ব্যাংকের বিশ্লেষক মলি শোয়ার্টজ বলেন, ‘পাওয়েলের ওপর ট্রাম্পের চাপ বাড়তে থাকায় ফেড চেয়ারম্যানের আগাম বিদায় এবং ট্রাম্পের তরফ থেকে নতুন কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।’

এদিন বাণিজ্য নিয়েও মুখ খুলেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার পণ্যের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক বসাবে এবং আরও কিছু চুক্তি প্রক্রিয়াধীন। পাশাপাশি ছোট দেশগুলোর জন্য শিগগিরই শুল্ক হার জানিয়ে চিঠি পাঠানো হবে। সম্ভাব্য হারে শুল্ক হবে ‘১০ শতাংশের কিছু ওপরে’।

সূত্র: প্রথম আলো

সর্বশেষ: