সংগৃহীত
কর ফাঁকি ও মুদ্রা পাচারের অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদসহ আলোচিত ছয়জনের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) ছয় ব্যক্তির ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্য জানতে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে। তালিকার অন্যরা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এস কে) সুর চৌধুরী এবং সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপা।
জানা গেছে, এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এরই মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেওয়া চিঠিতে ওই ব্যক্তিদের সব আর্থিক লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। সিআইসি তাঁদের নামে জমি, বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাটসহ স্থাবর সব সম্পত্তির আয়কর নথি ও তাঁদের বাস্তব সম্পত্তির সরেজমিন তদন্ত করবে।
জানা গেছে, এই নামের তালিকাসহ এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের কাছে শতাধিক ব্যক্তির তালিকা জমা দিয়েছে সিআইসি। অনুমোদনের জন্য এই তালিকা দেওয়া হয় অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, তালিকাটি যাচাই-বাছাই হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন তালিকা যেন করতে না হয় সে জন্য সব কাটছাঁট করে একটি নির্ভুল তালিকা প্রণয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। শিগগির এই তালিকা অনুমোদন হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সূত্র জানায়, অভিযুক্তদের স্থাবর সম্পদের খোঁজে এবার বিশেষ জোর দেওয়া হবে। আয়কর নথিতে দেওয়া সম্পদ বিবরণী কতটা সঠিক তা যাচাই করা হবে।
যাঁদের নাম কর ফাঁকি ও মুদ্রা পাচারের তালিকায় রেখে সিআইসি কাজ শুরু করেছে, তাঁদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে তাঁর প্রভাববলয়ে থাকা ব্যক্তিদের মাধ্যমে মার্কেট, ফুটপাত থেকে নিয়মিত বড় অঙ্কের চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। এমনও প্রচার রয়েছে যে কয়েকজন প্রকৌশলীকে নিয়েও চক্র গড়ে তুলেছিলেন। এই চক্র নিয়োগে জালিয়াতি, প্রকল্পের টাকা লুটপাট, ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি, দরপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেন। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন ও পাচার, সাবেক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানা কারণে আলোচিত শেখ পরিবারের এই সদস্য।
আগের সরকারের আরেক আলোচিত ব্যক্তি শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ক্ষমতাকে পুঁজি করে দুর্নীতির শীর্ষে থাকা জেনারেল আজিজ। সাবেক এই সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি, অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ একজন কর্মকর্তা ছিলেন হেলাল উদ্দিন। তাঁর উর্বর মস্তিষ্ক থেকেই এসেছিল ‘রাতের ভোট’ থিওরি। ২০১৮ সালে দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় রচিত হয় তাঁর নেতৃত্বেই। এই নির্বাচনের আগে ইভিএম মেশিন ক্রয়ে ব্যাপক লুটপাট, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধাসহ নানাভাবে নির্বাচন ইঞ্জিরিয়ারিং করেছিলেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী তাঁর পদের অপব্যবহার করে পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
একাত্তর টেলিভিশনে কাজ করতেন সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপা। শাকিল ছিলেন বার্তাপ্রধান ও রুপা ছিলেন প্রধান প্রতিবেদক পদে। তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের অন্ত নেই। নিরীহ মানুষ ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিভ্রান্তি ছড়িয়ে উসকানি দেওয়ার পাশাপাশি এই দম্পতি নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র: কালের কন্ঠ