সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের জন্য কাজ করে যাওয়ার লক্ষ্যে ‘সংহতি প্রতিরোধ পুনর্গঠন’ স্লোগানে ৫৬ সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটি আত্মপ্রকাশ করেছে।
গতকাল রবিবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই জাতীয় নাগরিক কমিটি আত্মপ্রকাশ করে। কমিটিতে মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্যসচিব এবং সামান্তা শারমিনকে মুখপাত্র করা হয়েছে। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের সঞ্চালনায় শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের প্রথমে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর আন্দোলনে শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন শহীদ পরিবারের দুজন সদস্য সৈয়দা আক্তার ও স্বর্ণা আক্তার।
বক্তব্যে শহীদ মো. আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহ বোন সৈয়দা আক্তার নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের নাম ঘোষণা করেন। তাঁর বক্তব্যের পর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন।
সামান্তা শারমিন বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও আগের ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এখনো জনগণের সাফল্যের প্রতিদ্বন্দ্বিরূপে সক্রিয়। নিপীড়ক রাষ্ট্রযন্ত্রের ধ্বংসাবশেষ প্রতি পদে রাষ্ট্রের পুনর্গঠনকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজপথে নেমে আসা জনতাকে সংগঠিত করা, ৮ আগস্টে গঠিত সরকারকে যুগপৎ সহযোগিতা করা এবং জবাবদিহির আওতায় আনা এবং জনস্বার্থের পক্ষে নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে আমরা নাগরিক দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করছি।’
অচিরেই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে তৃণমূল পর্যন্ত এই কমিটির বিস্তৃতি ঘটিয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ সময় কমিটির আটটি প্রাথমিক কাজের কথা ঘোষণা করা হয়। সেগুলো হলো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা। ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা। রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ও জবাবদিহির পরিসর তৈরি করা। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা।
দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা। জনস্বার্থের পক্ষে নীতিনির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণী প্রস্তাবনা তৈরি ও সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণ-আলোচনার আয়োজন করা।
লিখিত বক্তব্য শেষে নাগরিক কমিটির বাকি সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী। বাকি সদস্যরা হলেন আরিফুল ইসলাম আদীব, সাইফ মোস্তাফিজ, মনিরা শারমিন, নাহিদা সারোয়ার চৌধুরী, সারোয়ার তুষার, মুতাসিম বিল্লাহ, আশরাফ উদ্দিন মাহদি, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, অনিক রায়, জাবেদ রাসিন, মো. নিজাম উদ্দিন, সাবহানাজ রশীদ দিয়া, প্রাঞ্জল কস্তা, মঈনুল ইসলাম তুহিন, আব্দুল্লাহ আল আমিন, হুযাইফা ইবনে ওমর, শ্রবণা শফিক দীপ্তি, সায়ক চাকমা, সানজিদা রহমান তুলি, আবু রায়হান খান, মাহমুদা আলম মিতু, অলিক মৃ, সাগুফতা বুশরা মিশমা, সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ, তাসনিম জারা, মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, মো. আজহার উদ্দিন অনিক, মো. মেসবাহ কামাল, আতাউল্লাহ, এস এম শাহরিয়ার, মানজুর আল মতিন, প্রীতম দাশ, তাজনুভা জাবীন, অর্পিতা শ্যামা দেব, মাজহারুল ইসলাম ফকির, সালেহ উদ্দিন সিফাত, মুশফিক উস সালেহীন, তাহসীন রিয়াজ, হাসান আলী খান, মো. আব্দুল আহাদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, মশিউর রহমান, আতিক মুজাহিদ, তানজিল মাহমুদ, আবদুল্লাহ আল মামুন ফয়সাল, মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, এস এম সুজা, মো. আরিফুর রাহমান, কানেতা ইয়া লাম লাম, সৈয়দা আক্তার, স্বর্ণা আক্তার, সালমান মুহাম্মাদ মুক্তাদির ও আকরাম হুসেইন।
সূত্র: কালের কন্ঠ