শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

৭ অক্টোবর থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

৭ অক্টোবর থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বপ্নের থার্ড টার্মিনাল হবে সত্যিকার অর্থেই বিশ্বমানের। যার অভ্যন্তরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন নকশা। এটি হবে এমন একটি এয়ারপোর্ট—যেখানে কোনো বিদেশি নাগরিক পা রেখেই গোটা বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা  ইতিবাচক ধারণা পাবেন। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে অত্যাধুনিক  এই থার্ড টার্মিনাল।

প্রথম দেখাতেই এ দেশের মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য ধারণা পাবেন যাত্রীরা। একজন বিদেশি এখানে নামার পরই যখন দেখবেন, দুরন্ত গতির এস্কেলেটর, ডানে-বামে, সামনে-পেছনে যাওয়ার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংকেত, কিংবা বোর্ডিং ব্রিজে দাঁড়িয়েই গোটা বিমানবন্দরের আউটলুক চোখে পড়বে—তখন তিনি অভিভূত হবেন, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। বর্তমানে এই বিমানবন্দরের ‘ঘিঞ্জি’ পরিবেশ দেখে যে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়, সেটা মুছে যাবে। বিমানবন্দর নিয়ে বর্তমানে  বিদেশিদের যে ধারণা তা পালটে যাবে থার্ড টার্মিনালে নামার পর। যাত্রীরা পাবেন আন্তর্জাতিক মানের সেবা।

আগামী ৭ অক্টোবরে নতুন এই টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের অন্যতম এই মেগাপ্রকল্পের কাজের অগ্রগতি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। এই বিমানবন্দরের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি ১০ শতাংশ কাজ শেষ হলে যাত্রীসেবার মান আমূল বদলে যাবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধি গতকাল সরেজমিনে গিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক থার্ড টার্মিনালে নির্মিত অবকাঠামো ঘুরে দেখেন। কর্তব্যরত কর্মকর্তারা ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধিকে জানান, তারাও এই ধরনের দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দর কম দেখেছেন। 

২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল থেকে নির্মাণকাজ শুরু হয়। মাত্র তিন বছর পর উদ্বোধন হচ্ছে এটি। নকশা অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষে চালু হবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। থার্ড টার্মিনাল চালু হলে বর্তমান বিমানবন্দরের চেয়ে সক্ষমতার বাড়বে আড়াই গুণ। ফলে তিনটি টার্মিনাল দিয়ে বছরে শাহজালালের যাত্রী পারাপারের সক্ষমতা ৮০ লাখ থেকে বেড়ে ২ কোটি ২০ লাখে দাঁড়াবে। দেশের প্রধান বিমানবন্দর শাহজালালে বর্তমানে দুটি টার্মিনাল রয়েছে। এই দুটি টার্মিনাল ১ লাখ বর্গমিটার জায়গার ওপর। তৃতীয় যে টার্মিনালটি হচ্ছে, সেটি বর্তমান দুটি টার্মিনালের দ্বিগুণের বেশি। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে প্রায় ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে এই থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে।

অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। লাগেজ হ্যান্ডেলিংয়ের ক্ষেত্রে মনুষ্য সৃষ্ট অব্যবস্থাপনার কোনো সুযোগ নেই। স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হবে এটি। করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ও থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজও চলেছে বিরতিহীনভাবে। বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে জি-৭ রাষ্ট্রগুলো থেকে অত্যাধুনিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। ১৬ মিলিয়ন যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই টার্মিনালে লাগেজ হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে প্রাইভেট পার্টনারশিপ হিসেবে বিদেশি একটি দক্ষ সংস্থাকে। কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করবে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। সেখানে একটি আধুনিক মনিটরিং রুমও থাকছে। বিমানবন্দরে দায়িত্বরত সব সংস্থার কর্মকর্তারা এই কন্ট্রোল রুম থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন এবং সরেজমিনে মনিটরিং করতে পারবেন।

শাহজালাল বিমানবন্দরে বর্তমানে চারটি ট্যাক্সিওয়ে আছে। নতুন করে আরও দুটি হাই স্পিড ট্যাক্সিওয়ে যোগ হচ্ছে। রানওয়েতে উড়োজাহাজকে যাতে বেশি সময় থাকতে না হয়, সে জন্য নতুন দুটি ট্যাক্সিওয়ে তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য দুটি আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আরও থাকবে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তিনতলা ভবন। বেবিচকের তথ্যানুযায়ী, থার্ড টার্মিনালে থাকবে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ। প্রথম ধাপে চালু করা হবে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ। থাকবে উড়োজাহাজ রাখার জন্য ৩৬টি পার্কিং বে। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেকইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেকইন কাউন্টার থাকবে। এছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ থাকবে ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার। আগমনের ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেকইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট ও ১৯টি চেকইন অ্যারাইভাল কাউন্টার থাকবে। এর বাইরে টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে।

গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে মালটিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ১ হাজার ২৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। থার্ড টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথ ও উড়ালসেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগব্যবস্থা থাকবে। এতে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। থার্ড টার্মিনালে স্বতন্ত্র কোনো ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে না। তবে টার্মিনাল ভবনের ভেতরে দক্ষিণ পাশে সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ভিভিআইপিদের সময় কাটানোর জায়গা থাকবে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেট যুদ্ধের কারণে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করা দুরূহ ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুঃসাহিকতা ও দূরদর্শী ভূমিকার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। ইতিমধ্যে রানওয়ের সঙ্গেও সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অটোমেটিক রোবোটিক সমৃদ্ধ কার্গো টার্মিনাল করা হচ্ছে। পাশাপাশি যাতায়াত সহজ করতে মালটিপল ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই টার্মিনাল দেশের অ্যাভিয়েশন খাতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ: