বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১

সেই অন্ধ শিল্পীর মুখে হাসি ফোটালেন জেলা প্রশাসক

সেই অন্ধ শিল্পীর মুখে হাসি ফোটালেন জেলা প্রশাসক

এক হাতের অর্ধেক অংশ নেই, নেই দুই চোখে আলো। তারপরও জীবনযুদ্ধে থেমে নেই ইবাদুল বাউল (৭২)। দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন ফুটপাতে কাটা হাতের অর্ধেক অংশ দিয়ে হারমোনিয়াম বাজিয়ে ও গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন এই অন্ধ শিল্পী।

জানা গেছে, পরিবারের উপার্জনক্ষম কোনো ব্যক্তি না থাকায় চোখে পৃথিবীর সকল অন্ধকার নিয়ে এই বয়সেও ফুটপাতে গান গেয়ে টাকা রোজগার করে পরিবারের ঘানি টেনে চলেছেন তিনি।

অন্ধ শিল্পী ইবাদুল বাউলের বাড়ি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলী গ্রামে। জন্মের আড়াই মাস বয়সে মায়ের ভুলে আগুনে পুড়ে যায় তার এক হাত ও দুই চোখ। সেই থেকে দুই চোখ অন্ধ ও ডান হাতের অর্ধেক অংশ কেটে ফেলতে হয় তাকে।

গত ২৪ জুলাই অন্ধ শিল্পী ইবাদুল বাউলকে নিয়ে দেশের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘৫২ বছর ধরে গান গেয়ে সংসার চালাচ্ছেন অন্ধ ইবাদুল বাউল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে সংবাদটি গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী মাহাবুবুল আলমের নজরে আসে। এরপর ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে ইবাদুল বাউলকে চলতি বছরের ২ আগস্ট তার নিজ কার্যালয়ে ডেকে নেন জেলা প্রশাসক। এরপর ইবাদুল বাউলকে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান কিনে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

আজ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভ্যানটি তৈরি হলে নিজ হাতে হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহাবুবুল আলম। এ সময় ইবাদুল বাউলকে ভ্যানটি ভাড়া দিয়ে সংসারের খরচ জোগাতে বলা হয়। এছাড়া ইবাদুলের পরিবারের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

ভ্যান বুঝে পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে ইবাদুল বাউল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিসি স্যার আমার জন্য যা করেছেন সেজন্য আমি তার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। এখন গান তেমন কেউ শুনতে চায় না। বলতে গেলে আয় হয়ই না। তারপর আবার বয়স হয়ে গেছে। ভ্যানটি পেয়ে আমার অনেক উপকার হলো। ভ্যানটি ভাড়া দিলে আমি প্রতিদিন যে টাকা পাব তাতে আমার সংসারের খরচ চলে যাবে। ডিসি স্যার অনেক ভালো মানুষ। আল্লাহ তায়ালার কাছে তার জন্য দোয়া রইলো।

জেলা প্রশাসক কাজী মাহাবুবুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েক দিন আগে ঢাকা পোস্টে ইবাদুল বাউলকে নিয়ে একটি নিউজ দেখি। নিউজটি পড়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিবেদককে আমার অফিসে আসতে বলি। এরপর ইবাদুল বাউল এলে তার দীর্ঘ জীবন কাহিনি শুনে আমার প্রচণ্ড খারাপ লাগে। তাকে আমরা একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান দিতে চেয়েছিলাম। আজ ভ্যানটি হস্তান্তর করলাম। অন্ধ শিল্পী ইবাদুল বাউল এতে অনেক খুশি হয়েছেন। জেলা প্রশাসন সব সময় তার পাশে থাকবে।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ: