শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সৌন্দর্য পুষ্টি ও ঔষধি গুণে ভরপুর, কদর দেশের বাইরেও

সৌন্দর্য পুষ্টি ও ঔষধি গুণে ভরপুর, কদর দেশের বাইরেও

খাদ্য ও কৃষিসমৃদ্ধ অঞ্চল শেরপুরে এবার প্রথমবারের মতো ‘ব্ল্যাক রাইস’ বা ‘কালো ধান’ চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন ৫ উদ্যোক্তা। শ্রীবরদী উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লীতে দেশের বাইরে থেকে ওই ধানের বীজ সংগ্রহ করে প্রায় ৫ একর জমিতে লাগিয়েছিলেন সেই উদ্যোক্তারা। এখন বাতাসে দোল খাচ্ছে সেই কালো ধান। সেই সঙ্গে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন তারা। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ ধান ও চালের কদর দেশের বাইরেও থাকায় এলাকার অনেকেই একদিকে যেমন এ ধান চাষে উৎসাহী হয়ে উঠছেন, অন্যদিকে তেমনি আগামী মৌসুমে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে ওই বীজ জেলায় ছড়িয়ে দিয়ে সফলতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চান তারা।

জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলার চককাউরিয়া গ্রামের ৪ বন্ধু মুক্তাদির আহম্মেদ নয়ন, স্বপন আহসান, নিশাত হাসান, শান্ত মিয়া এবং হাসধরা গ্রামের গোলাম রসুল চীন থেকে ৩ হাজার টাকা কেজি দরে ১৮ কেজি কালো ধানের বীজ সংগ্রহ করেন। পরে তারা প্রথমবারের মতো ৫ একর জমিতে ব্ল্যাক রাইস বা কালো ধান লাগান। এতে সবকিছু মিলিয়ে আবাদে তাদের খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। এরই মধ্যে সুন্দরভাবে গুজিয়ে উঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে সেই কাল ধান। ফলে তাদের চোখে-মুখে এখন সফলতার স্বপ্ন।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় প্রথমবারের মতো কালো ধানের আবাদ হয়েছে শ্রীবরদীতে। এ ধান সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। এ ধানগাছের পাতা ও কা-ের রং সবুজ হলেও ধান ও চালের রং কালো। তাই এ ধানের জাতটি কালো চালের ধান নামে পরিচিত। ওষুধের গুণাগুণের জন্য ‘ব্ল্যাক রাইস’ চালকে ‘ওয়ার্ল্ড সুপার ফুড’ বলা হয়। তাই এর দামও অন্য সব চালের তুলনায় অনেক বেশি। বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে এ চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সরেজমিনে গেলে কথা হয় উদ্যোক্তা মুক্তাদির আহম্মেদ নয়নের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি, চাকরির পিছে না ঘুরে নিজেরাই কিছু করব। এ চিন্তা থেকেই আমরা চার বন্ধু মিলে চীন থেকে ১০ কেজি ব্ল্যাক রাইস ধানের বীজ সংগ্রহ করি। পরে তিন একর জমি লিজ নেই। সেই জমিতে বীজ রোপণের জন্য সবকিছু করে আমাদের মোট খরচ হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। প্রথমে আমরা চিন্তায় ছিলাম যে, এ ধান হবে কি হবে না। পরে কৃষি বিভাগের দেখাশোনা ও পরামর্শক্রমে আস্তে আস্তে ফলন আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ধানও পাকতে শুরু করে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, ৩ একরের খেত থেকে বীজ, ধান বিক্রি ও খাওয়াসহ প্রায় ১০ লাখ টাকা আমাদের আয় হবে।’

অপর উদ্যোক্তা স্বপন আহসান বলেন, ‘এ বীজ আমরা জেলায় ছড়িয়ে দিতে চাই। এ জন্য আমাদের কৃষি বিভাগের সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। আমরা চিন্তা করেছি, তিন হাজার টাকা কেজি দরে বীজ কিনে আনলেও আগ্রহী কৃষকদের এক হাজার টাকা দরে বীজ দেব। কারণ, কৃষকরা যেন খুব সহজে, অল্প খরচে ও বেশি লাভে ডায়াবেটিস এবং ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে এ ধান চাষ করতে পারে।

হাসধরা গ্রামের কৃষক গোলাম রসুল জানান, আমি বিদেশ থেকে এ ধানের বীজ সংগ্রহ করি। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি প্রায় ২ একর জমিতে এ ধান চাষ করেছি। এরই মধ্যে কালো ধান কাটা শুরু হয়েছে। বেশি লাভজনক ও পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকায় আগামীতে এ কালো ধান চাষে উৎসাহী হয়ে উঠছেন স্থানীয় কৃষকরা। একইভাবে আগ্রহী কৃষকদের একজন চককাউরিয়া গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বাপু হুনতাছি, এ ধানে খুব বেশি লাভ। আমি তাদের বলেছি আমাকে যেন চারা দেয়, আমি আগামীতে লাগামু এক একর জমিত। কৃষি অফিসও কইতাছে, এ ধান নাকি ওষুধের মতো কাজ করে। তাই আগামীতে লাগামু।’ কৃষক ফকির মিয়া বলেন, ‘এই বন্দের মধ্যে নতুন এডা ধান আইছে, দেখতে কালা কালা। আবার হুনতাছি, বিরাট লাভ, লাগাইতে খরচও কম। তাই আমি সামনের বার আবাদ করমু। ধানের চারা চাইছি তাদের কাছে, তারা দিবার চাইছে। এজন্নি এক হাজার টাকা করে চাইতাছে।’

শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হূন দিলদার বলেন, উদ্যোক্তারা বারবার আমার অফিসে এসেছে। আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছি। এ ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ধানের চাষ বাড়ালে কৃষক খুবই লাভবান হবে।

এ ব্যাপারে শেরপুরের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ডাঃ মুহিত কুমার দে বলেন, এরই মধ্যে আমরা ওই ৫ উদ্যোক্তার ধানখেত পরিদর্শন করেছি। খেতের ধান খুব ভাল হয়েছে। আমরা চাচ্ছি, তাদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে জেলায় অন্য কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। এ জন্য কৃষি বিভাগ সবসময় তাদের পাশে থাকবে। তার মতে, এ ধান সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। এ ছাড়াও ওষুধের গুণাগুণের জন্য ‘ব্ল্যাক রাইস’ চালকে ‘ওয়ার্ল্ড সুপার ফুড’ বলা হয়। তাই এর দামও অন্য সব চালের তুলনায় অনেক বেশি। বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে এ চালের ব্যাপক চাহিদা।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর