শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

৭০ বছর ধরে এই রসগোল্লার সুনাম সবার মুখে মুখে

৭০ বছর ধরে এই রসগোল্লার সুনাম সবার মুখে মুখে

প্রতিষ্ঠানের নাম হারু ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। মিষ্টির গুণগত মান ঠিক রেখে সত্তর বছর ধরে এই দোকানটি সুনাম অক্ষুণ্ন রেখেছে। এ দোকানের রসগোল্লার নাম শুধু জেলা নয়, সুনাম কুড়িয়েছে গণভবনেরও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হারু ঘোষের মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরীয়তপুরের পালং উত্তর বাজারে ১৯৫৩ সালের দিকে যাত্রা শুরু হলেও হারু ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের নামকরণ করা হয় প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পরে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হারাধন ঘোষের বাবা শচীনাথ ঘোষ। তিনি পালং এলাকার বাসিন্দা। মাত্র ৩ জন মিষ্টি তৈরির কারিগর নিয়ে টিনের এক চালার ছোট্ট একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন শচীনাথ ঘোষ। রসগোল্লার পাশাপাশি এই দোকানে তৈরি করা হতো আমিত্তি, জিলাপি, খেজুর, লালমোহন আর সন্দেশ। এরপর শচীনাথের ছেলে হারাধন ঘোষ দায়িত্ব নেন প্রতিষ্ঠানটির। এসব মিষ্টির পাশাপাশি তিনি তৈরি করে বিক্রি করতে থাকেন ছানা সন্দেশ, রসমালাই আর দই। অল্প সময়ের মধ্যে হারাধনের মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে জেলা জুড়ে। এরপর থেকেই দোকানের নাম হয়ে যায় হারু ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। বর্তমানে এই দোকানে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকার মিষ্টি কেনাবেচা হয়ে থাকে। হারাধন ঘোষের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতে সাহায্য করছেন তারই ছেলে সুমন ঘোষ। 

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৬ জন কারিগর মিষ্টি তৈরির কাজ করছেন। এদের মধ্যে প্রধান কারিগর মিঠুন বালা প্রায় ২৫ বছর ধরে এখানে মিষ্টি তৈরির কাজ করেন। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি দুধের বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি তৈরি করি। এর মধ্যে শুধু রসগোল্লাই তৈরি হয় ৭০ থেকে ৮০ কেজি ছানার। আমরা ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখতে সব সময় মিষ্টির সঠিক গুণাগুণ ধরে রাখি।

হারাধন ঘোষের ছেলে সুমন ঘোষ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবা এই দোকানের সুনাম যত্ন সহকারে ধরে রেখেছেন। হারু ঘোষের মিষ্টির দোকানের কথা বললে যে কেউ এক নামেই চিনে ফেলে। আমাদের এই দোকানের রসগোল্লা জেলার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কয়েকবার গণভবনে গিয়েছে। আর সেই রসগোল্লা খেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশংসা করেছেন বলে জানতে পেরেছি। 

প্রতিষ্ঠানটির মালিক হারাধন ঘোষ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এই রসগোল্লা তৈরির কাজটি বাবার হাত ধরেই শিখেছি। তিনি খুব ভালো রসগোল্লা বানাতেন। এরপর আমিও বাবার মতোই সুনামের সঙ্গে ব্যবসাটি ধরে রেখেছি। আমার দোকানের নাম মূলত এই মিষ্টির কারণেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় মিষ্টির মান ভালো রাখার জন্য।

এই দোকানের নিয়মিত ক্রেতা বোরহান উদ্দিন। তিনি বলেন, আমার যখন পাঁচ বছর বয়স, তখন দাদা হাসান উদ্দিন সঙ্গে এই দোকানের মিষ্টি খেতে আসতাম। এখন আমার বয়স পঁয়তাল্লিশ বছর, এখনো সেই রসগোল্লার স্বাদ একই রয়েছে। তবে দামটা একটু বেড়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটির মিষ্টির সুনাম অনেক শুনেছি। শুনেছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নাকি এ দোকানের রসগোল্লা খেয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। তাদের তৈরিকৃত মিষ্টির গুণগত মান ভাল হওয়ার কারনেই এই সুনাম ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ: