শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

এক সময়ের ধু ধু বালুচরে এখন কলা বাগানের সমাহার

এক সময়ের ধু ধু বালুচরে এখন কলা বাগানের সমাহার

সংগৃহীত

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের পদ্মার এক সময়ের ধু-ধু বালু চরে এখন কলা বাগানের সমাহার। চরের কাশবন কেটে কেউ কেউ গড়ে তুলেছেন বাগান। একে একে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে কলাচাষে বিপ্লব ঘটে গছে।

বিস্তীর্ণ চরে যতদূর দু’চোখ যাবে শুধু দেখা মিলবে সবুজে ঘেরা কলাবাগান আর কলাবাগান। অল্পখরচ ও ফলন ভালো সবমিলে আবাদ বেড়েছে কলাচাষের। ফলন ভালো হওয়ায় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে কৃষক, হচ্ছে কৃষকের ভাগ্য বদল। সবুজ পাতার মাঝে ঝুলে থাকা হাজার হাজার কলার কাদি হাসি ফুটিয়েছে চাষিদের মুখে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বল্প ব্যয়ে লাভ বেশি হওয়ায় গত ৫ বছর ধরে চরাঞ্চলের চাষিরা ঝুঁকেছেন কলা চাষে। কলা চাষে কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও এসেছে। এরইমধ্যেই ভাগ্য বদলেছে অনেক কৃষকের। চরের যতদূর চোখ যায় শুধু কলার বাগান। সবুজ পাতার মাঝে হাজার হাজার কলার কাদি ঝুলে থাকা কলা দৃশ্যমান হওয়ায় ফুটেছে চাষিদের মুখে সাফল্যের হাসি। 
 
ঈশ্বরদী কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নেই ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে কলা আবাদ হয়েছে। কলাচাষে লাভবান হওয়ায় ইউনিয়নের লক্ষীকুন্ডা, কৈকুন্ডা, কামালপুর, দাদাপুর ও ডিগ্রির চর জুড়ে এখন কৃষকদের আর অন্য ফসল চাষে আগ্রহ নেই। এবারে  শুধু কলার আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন চাষিরা।

সবুজ পাতার মাঝে ঝুলে থাকা হাজার হাজার কলার কাদি হাসি ফুটিয়েছে চাষিদের মুখে।

সবুজ পাতার মাঝে ঝুলে থাকা হাজার হাজার কলার কাদি হাসি ফুটিয়েছে চাষিদের মুখে।

কোনো কোনো চাষি চরের কাশবন কেটে গড়ে তুলেছেন বাগান। এমনই একজন চাষি বাংলার কৃষক কৃষি খামারের স্বত্বাধিকারী কৃষক শামীম আহমেদ। তিনি সেখানে গড়ে তুলেছেন কলার বাগান। তার সাফল্যে তিনি এখন কলা শামীম বলে পরিচিত।  উপজেলার পুরাতন ঈশ্বরদীর শহিদুল ইসলামের ছেলে শামীম আহমেদ কৃষি ডিপ্লোমা পাশ দিয়ে চাকরির পেছনে না ঘুরে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। পদ্মার ধু ধু বালু চরে অন্যের ৬৮ বিঘা জমি বাৎসরিক লিজ নিয়ে কাশবন কেটে সেখানে ফলিয়েছেন কলা গাছ। এখন আর সেখানে বালু চর কিংবা কাশবন নেই। বালু চরে এখন সবুজের সমারোহ। লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের পদ্মার দুর্গম ধু ধু বালু চরের চারিদিকে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায়, সবুজ কলার বাগান দেখে।

শামীম জানান, তিনি ২০১২ সালে কৃষি ডিপ্লোমা পাশ করেন। বেশ কিছু দিন চাকরির পেছনে ঘুরে এক রকম ব্যর্থ হয়ে তিনি কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। বর্তমানে তার খামারে ২৫জন শ্রমিক নিয়মিতভাবে কাজ করেন। আত্মবিশ্বাস, ধৈয্য, মনোবল ও কঠোর পরিশ্রম নিয়ে কাশবন কেটে কলার চাষ শুরু করেন।

এদিকে কামালপুর চরের কলাচাষি মামুন বলেন, ৪০ বিঘা জমিতে কলার আবাদ করেছি। ফলন বাম্পার হয়েছে। কলার আবাদ করে চরের কৃষকরা খুবই লাভবান হচ্ছেন। কলার আবাদে সার-বীজ এবং  শ্রমিকের খরচ কম হয়। অন্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে পরিশ্রমও কম হয়।  কলা বিক্রিতেও ঝামেলা নেই। পাইকাররা বাগানে এসে কলা কিনে নিয়ে যায়। কলা চাষে লাভবান হওয়ায় এরইমধ্যেই কয়েকজন কৃষক পাকা সুন্দর বাড়ি করেছেন। কৃষকরা অনেকেই পাওয়ার ট্রিলার, ইঞ্জিন চালিত ট্রাক্টর, হারভেস্টার মেশিন কিনেছেন।

দাদাপুর চরের চাষি হাসান জানান, কলা চাষে এ চরের কৃষকদের ভাগ্য বদলে গেছে। সব কৃষকই এখন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। ৫০ বিঘা জমিতে কলা আবাদ করেছি জানিয়ে তিনি বলেন, বিঘা প্রতি লাভ হয়েছে কমপক্ষে ৫০-৬০ হাজার টাকা। কলা ছাড়া এচরে অন্য আবাদ নেই বললেই চলে। অথচ ৫ বছর আগেও এই চরে কেউ কলার আবাদ করতো না।

দাদাপুর চরের আরেক চাষি আমিরুল বলেন, ১০ বিঘা জমিতে কলা আবাদ করেছি। বিঘাতে চাষাবাদ বাবদ খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। কলা বিক্রি হচ্ছে  এক লাখ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আগে এখানে গাজর, মুলা, পিঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ হতো। এসব চাষাবাদে খরচ বেশি, লাভ কম। তাই এখন সবাই কলার আবাদ শুরু করেছে। 

লক্ষীকুন্ডা ইউপির কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল আলিম বলেন, কলা চাষে এই ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে অভূতপূর্ব সাড়া পড়েছে। সবাই কলা চাষে ঝুঁকছেন। কলাচাষে বিঘা প্রতি খরচ ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। এখানে সবরি কলার বেশি আবাদ হয়। পাশাপাশি সাগর, মেহের সাগর ও  অমৃত সাগর কলার আবাদও হয়।

বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত সফল কৃষক ছিদ্দিকুর রহমান কূল ময়েজ বলেন, শিক্ষিত যুবকেরা কৃষি কাজে এগিয়ে এলে তারা বেশি ভালো করে। এক প্রকার চ্যালেঞ্জ নিয়েই বালু চরে কলার বাগানে সাফল্য পেয়েছেন তরুণ বা যুবকেরা। 

কৃষি সম্প্রসারণ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাবনার উপ-পরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দিন জানান, পদ্মার চরাঞ্চলে এবার কলার ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা লাভবান হওয়ায় প্রতিবছরই আবাদ বাড়ছে। কলা চাষের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

সর্বশেষ: