শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২

ইসলামী জীবন

কোরআনে যাকাতকে সদকা বলা হয়েছে কেন?

কোরআনে যাকাতকে সদকা বলা হয়েছে কেন?

সংগৃহীত

ইসলামী শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান যাকাত। যাকাতকে কোরআন ও হাদিসে কখনো কখনো সদকা বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে ইরশাদ করেছেন, তাদের সম্পদ থেকে সদাকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে। আর তাদের জন্য দোয়া কর, নিশ্চয় তোমার দোয়া তাদের জন্য প্রশান্তিকর। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সুরা আত-তাওবা : ১০৩)

আবার অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আর তাদের মধ্যে কেউ আছে, যে সদাকা বিষয়ে তোমাকে দোষারোপ করে। তবে যদি তাদেরকে তা থেকে দেয়া হয়, তারা সন্তুষ্ট থাকে, আর যদি তা থেকে দেয়া না হয়, তখন তারা অসন্তুষ্ট হয়।  (সুরা আত-তাওবা আয়াত :৫৮)

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন, সাদাকাহ তো শুধু গরিব ও অভাবগ্রস্তদের জন্য। (সুরা আত-তাওবা আয়াত : ৬০)

হাদিসে যাকাত ও সদকা

রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও যাকাত প্রসঙ্গে সদকা শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এক হাদিসে এসেছে, পাঁচ ওসুকের কম শস্যে কোনো সদকা নেই, পাঁচ উটের কম উটে কোনো সদকা নেই এবং পাঁচ উকিয়াহর কম রূপায়ও কোনো সদকা নেই। (বুখারি ও মুসলিম)

সাহাবি মুয়াজ ইবন জাবালকে  ইয়েমেনে পাঠানোর সময় নবী করিম (সা.) বলেছিলেন, তুমি তাদের জানিয়ে দিও, আল্লাহ তাদের সম্পদের ওপর সদকা ফরজ করেছেন, যা ধনীদের থেকে সংগ্রহ করে গরিবদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

এইসব আয়াত ও হাদিসে যাকাত বোঝাতে ‘সদকা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এমনকি যাকাত সংগ্রাহককেও বলা হতো ‘মুসাদ্দিক’।অর্থাৎ যিনি সদকা সংগ্রহ করেন।

কিন্তু ইসলামের পরবর্তী যুগে ‘সদকা’ শব্দটি মূলত স্বেচ্ছায় দান-খয়রাত বোঝাতে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। অথচ কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময়কালে এ শব্দের অর্থ ছিল অনেক বিস্তৃত ও গভীর।

সদকা শব্দের মূল অর্থ

‘সদকা’ শব্দটি এসেছে ‘সিদক’ (সত্যতা) মূল ধাতু থেকে। বিশিষ্ট বিচারক আবু বকর ইবনুল আরাবি বলেন, যাকাতকে সদকা বলা হয়েছে, কারণ এটি মুমিনের ঈমানের সত্যতার বহিঃপ্রকাশ।

‘সিদক’ মানে হলো ঘোষিত বিশ্বাসকে কর্মের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা। যেমন নারীর ‘সাদাক’ বা মোহর হলো বৈধ দাম্পত্য সম্পর্কের সত্যতা প্রমাণের প্রতীক। আবার ‘তাসাদ্দাক’ ক্রিয়াপদ অর্থ, নিজ সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিলিয়ে দেওয়া; অর্থাৎ ঈমানের বাস্তব প্রমাণ উপস্থাপন করা।

আল-বিজাওয়ির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সদকা মানে হলো এমন দান, যা মুমিনের ঈমানের সততা ও পরকাল বিশ্বাসের প্রতিফলন।

ঈমানের প্রমাণ হিসেবে দান

কোরআনে দানকে ঈমানের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, যে দান করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং উত্তম পরিণামে বিশ্বাস রাখে, আমি তার জন্য সহজ করে দেব আনন্দের পথ। কিন্তু যে কৃপণতা করে, নিজেকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে এবং উত্তম পরিণাম অস্বীকার করে, আমি তার জন্য সহজ করে দেব দুর্ভোগের পথ। (সুরা আল-লাইল, আয়াত :৫–১০)

অর্থা সদকা হলো ঈমানের সত্যতার এক জীবন্ত প্রমাণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সদকা হলো প্রমাণ। (মুসলিম)

অতএব, যাকাতকে ‘সদকা’ বলার কারণ হলো, এটা শুধু আর্থিক ইবাদত নয়, বরং ঈমান, আন্তরিকতা ও আল্লাহভীতির বাস্তব প্রকাশ।

সূত্র: ঢাকা পোষ্ট

সর্বশেষ:

শিরোনাম: