শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

যেসব সম্পদের জাকাত দিতে হয় না

যেসব সম্পদের জাকাত দিতে হয় না

ইসলামের পাঁচস্তম্ভের মাঝে জাকাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হলো নামাজ ও জাকাত। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের অনেক নামাজ ও জাকাতের আদেশ দিয়েছে। আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য অশেষ সওয়াব, রহমত ও মাগফিরাতের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধিরও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক সকল মুসলিম নর-নারীর ওপর জাকাত প্রদান করা ফরজ। এক সাহাবি এসে নবী করিম (সা.) এর কাছে আরজ করেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আমাকে এমন কিছু আমলের কথা বলেন, যা করে আমি জান্নাতে যেতে পারবো। রাসূল (সা.) তাকে বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। ফরজ নামাজ কায়েম করবে। ফরজ জাকাত আদায় করবে। রমজানে রোজা রাখবে।

জাকাতের উদ্দেশ্যই হলো দরিদ্র দূর, কিন্তু সেটা না হয়ে জাকাত যদি অপাত্রে যায় তবে সেই জাকাতে উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে না। তবে অনেকেই কোন কোন জিনিসে জাকাত ফরজ এবং কোন কোন সম্পদের জাকাত হয় না তা জানেন না। চলুন জেনে নেয়া যাক আপনার কোন সম্পদগুলোর জাকাত দিতে হবে না-
 
এক. নিজ ও পোষ্য পরিজনের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও বাহনের ওপর জাকাত ফরজ হয় না। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৪/১৯-২০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ১০২০৭; আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৬৫)

দুই. ঘরের আসবাবপত্র যেমন খাট-পালঙ্ক, চেয়ার-টেবিল, ফ্রিজ, আলমারি ইত্যাদি এবং গার্হস্থ্য সামগ্রী যেমন হাড়ি-পাতিল, থালা-বাটি, গ্লাস ইত্যাদির উপর জাকাত ফরজ নয়। তা যত উচ্চমূল্যেরই হোক না কেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭০৯৩,৭১০২; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ১০৫৬০; আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৬৫)

তবে এক্ষেত্রে মনে রাখাতে হবে যে, যেসব বস্তুর ওপর জাকাত আসে না— সেগুলোতে যদি সোনা-রুপা সংযুক্ত থাকে, তাহলে অন্যান্য জাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে এই সংযুক্ত সোনা-রুপারও জাকাত ফরজ হবে।

তিন. শরীরে ব্যবহারের বস্ত্র, জুতা যদি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিও থাকে তবুও তাতে জাকাত ফরজ হবে না। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৬৫)

চার. দোকান-পাট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এমন আসবাবপত্র যা ব্যবসাপণ্য নয়, তার ওপর জাকাত ফরজ হয় না। তবে ফার্নিচারের দোকানে বিক্রির উদ্দেশ্যে যেসব ফার্নিচার রাখা থাকে তা যেহেতু বাণিজ্যদ্রব্য তাই এসবের ওপর যাকাত ফরজ হবে।

পাঁচ. ঘর-বাড়ি বা দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দিলে তাতেও জাকাত ফরজনয়। তবে বর্তমানে ঘর-বাড়ি, গাড়ি বা দোকান ভাড়া নেয়ার সময় মোটা অঙ্কের টাকা অ্যাডভান্স রাখতে হয়, অ্যাডভান্সের এই টাকা গাড়ি বা দোকানের মালিকের হয়ে যায় না। বরং যিনি ভাড়া নিচ্ছেন, তার মালিকানায় এ টাকা রয়ে যায়। তাই নিসাবের পরিমাণ হলে ওই টাকাসহ জাকাত দিতে হবে। দোকান বা বাড়ি ভাড়া গ্রহণকারী ব্যক্তির জন্য ওই টাকার জাকাত আদায় করা জরুরি। (আদদুররুল মুখতার : ৩/১৮৪; ফাতাওয়া দারুল উলুম : ৬/৭৭, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৬১)

ছয়. ভাড়া দেয়ার উদ্দেশ্যে ঘর-বাড়ি বা অন্য কোনো সামগ্রী যেমন ডেকোরেটরের বড় বড় ডেগ, থালা-বাটি ইত্যাদি ক্রয় করলে— তার ওপরও জাকাত ফরজ নয়। তবে ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত অর্থের উপর জাকাত আসবে।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ: