• মঙ্গলবার ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ১৭ ১৪৩০

  • || ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

পরকালীন পরীক্ষায় উত্তীর্ণের উপায়

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

মানুষের পার্থিব জীবন রেললাইনের মতো সমান্তরাল নয়, একেবারে নির্মল ও নির্ঞ্ঝাটও নয়। জীবনে চলার পথে দুঃখ-দুর্দশা আসবে, ঝড়-ঝাপটার সম্মুখীন হতে হবে-এটাই স্বাভাবিক। কারণ পৃথিবী হচ্ছে, পরকালের অনন্ত জীবনের পরীক্ষার হল। তাই আমাদের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে জীবনের নানা ক্ষেত্রে, নানাভাবে।

সেই পরীক্ষায় সফল হওয়ার মূলমন্ত্রও ঘোষিত হয়েছে পবিত্র কুরআনে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কখনো ভয়-ভীতি দিয়ে, কখনো ক্ষুধার মাধ্যমে এবং কখনো জানমাল ও ফলফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন’ (সুরা বাকারা : ১৫৫)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও, নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে রয়েছেন’ (সুরা বাকারা : ১৫৩)। ইসলামের শিক্ষা হলো, দুঃখের পরই সুখের দেখা মিলবে, দুর্দিন পেরিয়ে সুদিনের হাতছানি আসবে। এ বিষয়ে কুরআনে মানুষকে প্রচুর দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বারবার সবরের কথা, ভেঙে না পড়ার কথা বলা হয়েছে, আশার বাণী শোনানো হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই রয়েছে স্বস্তি’ (সুরা ইনশিরা : ৬)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায় ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না।’ (সুরা ইউসুফ : ৮৭)

আসমান-জমিনের চাবিকাঠি যার হাতে, সেই সত্তার পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, প্রত্যেক কষ্টের পরই স্বস্তি ও উত্তরণ রয়েছে এবং যেকোনো বিপদ বাদেই স্বাচ্ছন্দ্য ও সুখ রয়েছে। তা হলে একজন মুমিন যে রবে বিশ্বাস করে, জান্নাত-জাহান্নাম আছে বলে স্বীকার করে, সে কী সামান্য বিপদে কিংবা দুর্ভোগ-দুর্যোগের সম্মুখীন হলে ভেঙে পড়তে পারে? সে তো বরং বিপদাপদে ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রবের সুসংবাদ লাভ এবং চিরস্থায়ী জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার স্বপ্ন দেখবে! ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের প্রিয় নবীজিও বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন, কাফেরদের কটু কথা আর কটুবাক্যে তার মনেও কষ্টের মেঘ জমেছে। তার হৃদয়ও ভারী হয়ে উঠেছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘আর আমি তো জানি, তারা যা বলে, তাতে আপনার মন ক্ষতবিক্ষত হয়’ (সুরা হিজর : ৯৭)। কিন্তু তিনি তাদের কটু কথায় দমে যাননি। মানবতার মুক্তির মিশন থেকে পিছিয়ে পড়েননি। বরং ধৈর্য ধারণ করেছেন, তাদের শত নির্যাতন আর নিপীড়ন উপেক্ষা করে স্বীয় মিশনে অকুতোভয়ে এগিয়ে গেছেন এবং শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছেন।

একজন আল্লাহভীরু মানুষ যখন বিপদের সম্মুখীন হন তখন তিনি ধৈর্য ধারণ করেন এবং আল্লাহর তায়ালার দরবারে সাহায্যপ্রার্থীর হাত তুলে ধরেন ও অনুতপ্ত হন। অনুশোচনা ও অন্তর শুদ্ধির চেষ্টায় নিয়োজিত হন। আর যারা তাকওয়াহীন জীবন ও মন লালন করেন, জীবনের শেষ গন্তব্য ও পরিণতি সম্পর্কে বেখবর থাকেন তারা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। অভিযোগ-অনুযোগের তুফান ছুটিয়ে দেন। অন্য কাউকে না ধরে বিপদ ও সংকট ‘তার মতো নিদোর্ষ’ মানুষকে কেন ধরল এ নিয়ে অন্তহীন জিজ্ঞাসা ও আফসোস করতে থাকে। ফলে অস্থিরতা বাড়তে থাকে আর অভিযোগ অনুযোগ করতে করতে অনেক সময় আত্মহত্যার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে। 

অতএব, দুনিয়ার জীবনে কোনো পরীক্ষার সম্মুখীন হলে সেটা যেমনই হোক, আল্লাহ পাকের ফয়সালা মনে করে তা মেনে নেওয়া, মনে কোনোরূপ মন্দ ধারণা পোষণ না করা আর সবরের সঙ্গে বিপদমুক্তির জন্য আল্লাহ পাকের শরণাপন্ন হওয়া-এটাই একজন মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব। আর সেটাকে উপদেশদাতা ও সতর্ককারীরূপে গ্রহণ করে অনুতাপ ও প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হওয়ার মধ্যেই মুমিনের কামিয়াবি নিহিত। রাসুল (সা.) বলেন, সত্যি বড় পুরস্কার তো বড় বিপদের সঙ্গেই রয়েছে। আর আল্লাহ যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন তখন অবশ্যই তাদের পরীক্ষায় ফেলেন। তখন যে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্যই তাঁর সন্তুষ্টি, আর যে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে তার প্রতি তাঁরও অসন্তুষ্টি। (তিরমিজি : ২৩৯৬)

আলোকিত সিরাজগঞ্জ
আলোকিত সিরাজগঞ্জ